মো. মাহবুব গত দুই বছর অনলাইনেই কোরবানির পশু কিনেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা মোটামুটি ভালো। এবারও অনলাইনে কয়েকটি গরু দেখেছেন তিনি। তবে সরাসরি হাটেও যাবেন বলে ভাবছেন।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কয়েক বছর ধরেই অনলাইন পশুর হাটের ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণের কারণে জনপ্রিয়ও হয়েছিল এসব হাট। দুই বছর ধরে সরকারও এ হাটের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি উদ্যোগের হাটে গত বছর ৩ লাখ ৮৭ হাজার পশু ২ হাজার ৭৩৫ কোটি ১১ লাখ টাকার বেশিতে বিক্রি হয়। এবার অনলাইনে ছাগল ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি বলে জানাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
অনলাইনে পশু কিনলে কসাইখানার সুবিধাও দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি মাংস প্রস্তুত করে বাসায়ও পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে এসব সুবিধা ঢাকাবাসীই পাচ্ছেন। অনলাইনে যাঁরা পশু বিক্রি করছেন, তাঁরা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিডিও কল, ছবিতে গরুর সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে থাকেন। ঢাকার পাশে হলে ঢাকার ক্রেতা সরাসরি গিয়ে দেখেও আসেন। দূরত্ব অনুযায়ী ক্রেতার কাছে পশু পৌঁছে দেওয়ার জন্য আলাদা চার্জ রাখা হয়। এ ছাড়া রাখাল চাইলে সেই চার্জ ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।
ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইনে হাটে নানান অফার দিচ্ছে। কেউ দিচ্ছে ফ্রি ডেলিভারি, কেউ দিচ্ছে ক্যাশব্যাক অফার এবং কারও রয়েছে গিফট হ্যাম্পার। নানাভাবেই ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে তারা।
হাম্বা হাম্বা ডটকম তিন বছর ধরে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি করছে। তাদের হিসাবে প্রতিবছরই বিক্রি বাড়ে। এবারও তা–ই হবে বলে প্রত্যাশা। তারা ২০০টি গরু এবার অনলাইনে বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু গরু বুকিং হয়ে গেছে। কোরবানির আগে এসব গরু ৭, ৮ ও ৯ তারিখ তারা পৌঁছে দেবে। ঢাকার মধ্যে হলে এর জন্য দিতে হবে (ডেলিভারি চার্জ) তিন হাজার টাকা।
হাম্বা হাম্বা ডটকমের উদ্যোক্তা আর কে হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে বাজেটের মধ্যেই সহজে পশু পাওয়া যায়। প্রতিটি গরুর ওজন, দামসহ বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ থাকে। হাটে গিয়ে হাসিল, দামাদামি এবং বয়ে নিয়ে আসার জন্য আলাদা একজন লোক নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু অনলাইনে ফরমাশ দিলে গ্রাহকের ঠিকানায় পশু পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব থাকে বিক্রেতার।
অনলাইন হাটের উদ্যোক্তারা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার অনলাইনে চাহিদা কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে। করোনার প্রাদুর্ভাব গত দুবারের তুলনায় কম। তাই অনেকে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করবেন। এ ছাড়া দেশের উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে বন্যার প্রভাবও আছে। পাবনাভিত্তিক মৃত্তিকা ডেইরি ফার্মের একজন উদ্যোক্তা শাহিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের গ্রাহকদের বড় একটা গ্রুপ সিলেটের। কিন্তু এবার সিলেটে ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় চাহিদা ওই অঞ্চল থেকে কম।’
ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ বাংলাদেশ জানিয়েছে, তারা পঞ্চমবারের মতো অনলাইনে পশু বিক্রি করছে। এ বছরও ভালো সাড়া পাচ্ছে তারা। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা দেড় হাজারের মতো পশু বিক্রির লক্ষ্য নিয়েছে। সেখান থেকে ক্রেতারা নিজেদের পছন্দমতো পশু বাছাই করতে পারবে।
চার বছর ধরে অনলাইনে পশুর হাট করে আসছে ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম অথবা ডটকম। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব বিজনেস নূর মোহাম্মদ রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর ভালোই সাড়া পাচ্ছেন। এক লাখ টাকার নিচের গরুর চাহিদা বেশি। বিক্রি গতবারের মতোই হবে বলে আশা তাঁর। তবে তিনি বললেন, যদি কমে বা বাড়ে, তা ৫–১০ শতাংশ হতে পারে। এ ছাড়া বলেন, শেষ দুই দিন বোঝা যাবে বিক্রি কেমন হচ্ছে।
ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই বছর করোনার প্রভাব এবং চলাচলেও বিধিনিষেধ ছিল। সে হিসাবে পশুর চাহিদাও অনলাইনে বেশি ছিল। এ বছর বিক্রি গতবারের মতোই হবে বলে আশা করছেন। তিনি আরও বলেন, অনলাইনে ছাগল ও লাখ টাকার নিচের দামের গরুর চাহিদা আছে। দেশে এখনো হাটে গিয়ে গরু কিনতে অভ্যস্ত মানুষ। এ ছাড়া গরু অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয় বলেও গ্রাহক সরাসরি দেখে কিনতে চান। তবে ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হবে। মানুষের আস্থা তৈরি হচ্ছে।
অনলাইনে পশু কিনে হয়রানি বা ভোগান্তির অভিযোগও রয়েছে। গত বছর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিজেই ভোগান্তির কথা জানান। মন্ত্রী জানান, ডিজিটাল হাটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে তিনি লাখ টাকা দিয়ে একটি গরু অর্ডার করলেও তা পাননি। মন্ত্রীর অর্ডার করা গরু আরেকজনকে দিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাঁকে ওই দামের চেয়ে কমে একটি গরু ও একটি ছাগল দেওয়া হয়।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ, ই–ক্যাব, ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন, এটুআই ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৩ জুলাই ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন করে। এ বছর থেকে ডিজিটাল হাট স্থায়ী হয়েছে। অর্থাৎ সারা বছরই অনলাইনে গরু–ছাগল কেনা যাবে। সেখানেও বলা হয়, এ হাটে ক্রেতারা অভিযোগও জানাতে পারবেন।