বাংলাদেশের প্রবন্ধ, গবেষণা ও কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৫’ পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক আকিমুন রহমান।
আজ শনিবার বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের অতিথিরা আকিমুন রহমানের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কারের ১ লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট এবং মানপত্র তুলে দেন। উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানানো হয় তাঁকে।
পাক্ষিক অনন্যা গত ২৫ বছর ধরে নারীদের এ সম্মান দিচ্ছে। ‘আপন আলোয় আলোকিত নারী’ শীর্ষক ২৫ তম সাহিত্য পুরস্কারটি পেলেন আকিমুন রহমান। পাক্ষিক অনন্যা আয়োজিত এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে আকিমুন রহমানকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আকিমুন রহমানের জন্ম নারায়ণগঞ্জে, ১৯৬০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে পিএইচডি করেছেন বহুমাত্রিক লেখক ড. হুমায়ুন আজাদের তত্ত্বাবধানে। গবেষণাপত্রটি ‘আধুনিক বাংলা উপন্যাসে বাস্তবতার স্বরূপ (১৯২০-’ ৫০) ’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় বাংলা একাডেমি থেকে।
আকিমুন রহমানের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে বিবি থেকে বেগম, আধুনিক বাংলা উপন্যাসে বাস্তবতার স্বরূপ, সোনার খড়কুটো, পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে, রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া মাছি, এইসব নিভৃত কুহক, জীবনের পুরোনো বৃত্তান্ত, নিরন্তর পুরুষ ভাবনা, পৌরাণিক পুরুষ, বাংলা সাহিত্যে বাস্তবতার দলিল (১৩১৮-১৩৫০ বঙ্গাব্দ) ইত্যাদি। লেখালেখির পাশাপাশি আকিমুন রহমান বর্তমানে বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কবি আসাদ চৌধুরী আকিমুন রহমানের লেখা বা তাঁর সম্পর্কে কেন এত দেরিতে জানতে পারলেন তা নিয়ে নিজেকেই ধিক্কার দেন। তিনি বলেন, এই লেখক-প্রাবন্ধিক প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সমাজ, দেশ, মানুষ সম্পর্কে চমৎকার লিখেছেন। আর তিনি লেখেন দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে। যোগ্যতা না থাকলে এত বিশাল বিশাল বিষয়কে সংক্ষেপে লেখা সম্ভব নয়। আর তাঁর লেখনীর মূল উদ্দেশ্য সুন্দর একটি পৃথিবী নির্মাণ করা।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রাবন্ধিক অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল জানালেন, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত আকিমুন রহমান তাঁর ছাত্রী, আর তিনি নিজেও এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। আকতার কামাল বলেন, এ পুরস্কারটি প্রাপ্য ছিল আকিমুন রহমানের। কেননা তিনি দায়িত্ব নিয়ে লেখেন। তিনি সমাজকে ভাঙতে চান। বর্তমানে নারী সম্পর্কে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। এই ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছেন আকিমুন রহমান। তাই তাঁর বইগুলো সবাইকে পড়ার জন্য আহ্বান জানান।
বক্তব্যে আকিমুন রহমান নতুন লেখকের জন্য রাস্তা তৈরি করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পুরুষকে প্রতিপক্ষ না ভেবে পরিপূরক ভাবার জন্য আহ্বান জানান। এ পুরস্কারে ভূষিত করায় সম্মানিত বোধ করছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লেখালেখির জগতে তিনি অনেক দূর যেতে চান।
সভাপতির বক্তব্যে অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার চালু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। আকিমুন রহমানের লেখা সম্পর্কে বলেন,‘তাঁর লেখা পড়ে মনে হয়েছে, বইগুলোতে তো আমার মনের কথাগুলোই লেখা।’
নূরজাহান বোস, মালেকা বেগম, নিয়াজ জামানসহ আগে যাঁরা এ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। ফলে অনুষ্ঠানটি এক সময় মিলনমেলাতে পরিণত হয়।