অধস্তন প্রকৌশলীকে গলা চেপে ধরলেন নির্বাহী প্রকৌশলী

ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি
ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি

অধস্তন এক প্রকৌশলীকে চেয়ারসহ মেঝেতে ফেলে গলা চেপে ধরলেন রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ। তখন অপর এক কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিবৃত্ত করেন এবং আক্রান্ত কর্মকর্তাকে কক্ষ থেকে সরিয়ে দেন।

গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। আক্রান্ত কর্মকর্তা হলেন উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রনি। তিনি ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ আজ বুধবার দুপুরে পাউবোর মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এবং এর সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন।

পাউবো সূত্র জানায়, বুধবার বিকেলে নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। উপসচিব (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুল হকের সই করা এ-সংক্রান্ত দপ্তরাদেশে বলা হয়, অসদাচরণ ও চাকরি শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আবদুল আহাদকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রশিক্ষণ ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পাউবোর উপসচিব (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ ভীষণ অ্যানয়েড। এ বিষয়ে তদন্ত হবে।’
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদের কক্ষে আগে থেকেই অবস্থান করছেন রাজবাড়ী পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম। এক পর্যায়ে ওই কক্ষে প্রবেশ করে উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রনি চেয়ারে বসেন। কথা বলার একপর্যায়ে রনির ওপর খেপে যান নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি নিজের চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে গলা চেপে ধরেন রনির এবং ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেন। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিবৃত্ত করেন আশরাফুল আলম।

এরপর আবদুল আহাদ নিজের চেয়ারের কাছে ফেরত এসে এনটি কাটার হাতে নিয়ে শাসাতে থাকেন রনিকে। এ পর্যায়ে রনিকে ওই কক্ষ থেকে সরিয়ে দেন আশরাফুল আলম।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলমের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওতে যেমন দেখেছেন, তা-ই ঘটেছে।’ তিনি এ নিয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি।

মহাপরিচালকের কাছে দেওয়া অভিযোগে রনি বলেছেন, মঙ্গলবার বেলা একটার সময় তাঁকে ও গোয়ালন্দ পশুর শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইকবাল সরদারকে কিছু নথিপত্রসহ দাপ্তরিক কাজে প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে যেতে বলেন নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ। দপ্তরের একটি গাড়ি নিয়ে যেতে বললেও ওই দিন তাঁরা কোনো গাড়ি পাননি। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র হওয়ায় এগুলো নিয়ে বাসে না গিয়ে পরদিন (বুধবার) দপ্তরের গাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি

বিষয়টি জানতে পেরে রনিকে সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের মাধ্যমে মঙ্গলবার বিকেলে ডেকে পাঠান। রনি মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে যান। সেখানে যাওয়ার পর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ ‘তুই-তোকারি’ করে রনিকে ধাক্কা দিয়ে চেয়ার থেকে ফেলে দেন। এরপর বুকের ওপর পা দিয়ে চেপে ধরেন এবং গলা টিপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে জবাই করার হুমকি দেন বলেও লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন রনি।

এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদী ভাঙনসহ নানা ঝামেলার মধ্যে রয়েছি। এরপর এরা নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে না। রনি অনেক দিন ধরে আমার নির্দেশনা মানে না। আমার কক্ষে কথা বলার একপর্যায়ে আমি টেম্পার ধরে রাখতে পারিনি। এ কারণে তাঁকে গালাগাল ও শারীরিকভাবে আঘাত করেছি। যা আমার ঠিক হয়নি। আমি ভুল স্বীকার করছি। কিন্তু ওরা এ ঘটনার আগে ও পরের অনেক কিছু গোপন করেছে। তাঁরা এ ঘটনার পর আমার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে সিসি ক্যামেরা নিয়ে যায়। এর পর ঘটনার আগে ও পরের অংশ বাদ দিয়ে এডিট করে ভাইরাল করেছে।’