দেশে প্রতিবছর ছয় লাখের বেশি অকালিক (বা প্রিটার্ম) শিশুর জন্ম হয়। সময়ের আগে জন্ম নেওয়া এসব নবজাতকের মধ্যে মৃত্যুহারও খুব বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব শিশুর জীবন বাঁচাতে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি এদের যত্নে পরিবার ও কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘কম জন্ম-ওজন ও অসুস্থ নবজাতকের যত্নে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বিশ্ব অকালিক শিশু দিবস সামনে রেখে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সহযোগিতায় প্রথম আলো এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। ১৭ নভেম্বর দিবসটি পালিত হবে। গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০৩০ সালের আগেই মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ অর্জন করতে পারবে। তবে সেই পর্যন্ত অপেক্ষা না করে প্রতিটি শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সময়ের আগে কেন শিশুর জন্ম হচ্ছে, সেসব কারণ খুঁজে বের করে প্রতিরোধের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে কম খরচে সহজে বাস্তবায়ন সম্ভব এমন বিকল্প বেছে নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, গর্ভধারণের পর ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে জন্মালে সে অকালিক শিশু। এসব শিশু সাধারণত কম ওজন নিয়ে জন্মায়। জন্মের সময় ওজন ২ হাজার ৫০০ গ্রামের কম হলে তা কম জন্ম-ওজন। এসব শিশুর মৃত্যুঝুঁকি সাধারণ শিশুদের চেয়ে অনেক বেশি।
অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি অধ্যাপক লায়লা আরজুমান্দ বানু বলেন, যেসব মা আগে কম ওজনের শিশুর জন্ম দিয়েছেন, যমজ শিশুর জন্ম দিয়েছেন, গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ ঘটলে অথবা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে সেসব মায়ের অকালিক সন্তান জন্ম দেওয়ার ঝুঁকি বেশি। তিনি বলেন, সন্তান বাড়িতে বা কোন হাসপাতালে প্রসব হবে, তা মাথায় রাখা দরকার। যেকোনো সময় জরুরি সেবার প্রয়োজন হতে পারে। এ জন্য অর্থ সংগ্রহে রাখা, হাসপাতালে প্রসূতির সঙ্গে যাওয়ার লোক ঠিক রাখা দরকার। হাসপাতালকেও জানিয়ে রাখা দরকার।
অকালিক শিশুর সংখ্যা কমানো কিংবা এদের মৃত্যু প্রতিরোধে পরিবার ও কমিউনিটির ভূমিকা অনেক বলে মত দেন ইউনিসেফের ঢাকা কার্যালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মায়া ভেন্দানেন্ত। তিনি বলেন, জীবনাচার বা লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে কিংবা পুষ্টির ব্যাপারে সচেতন হয়ে পরিবার ও কমিউনিটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। সারা দেশে সক্রিয় ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে পারে। সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগীরা একসঙ্গে কাজ করলে অকালিক শিশুদের মৃত্যু কমানো সম্ভব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, নবজাতক বিভাগে সময়ের আগে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিশুর জন্ম হচ্ছে। এসব শিশুর মৃত্যুর প্রধান কারণ সংক্রমণ। তিনি বলেন, শুধু হাত ধোয়ার অভ্যাস সংক্রমণ কমাতে এবং নবজাতকের জীবন বাঁচাতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।