জীবনের গল্প

তবুও অদম্য বিবি মরিয়ম

বিবি মরিয়ম
বিবি মরিয়ম

বিবি মরিয়ম বললেন তাঁর বয়স এখন ৮০ বছর। ছোটখাটো গড়ন। জীর্ণশীর্ণ চেহারা। মাথা ঢাকা হিজাবে। বাঁ হাত প্রায় অকেজো। স্ট্রোক হয়েছিল। ঠিক কত দিন আগে, তা মনে নেই, ৮-৯ বছর হবে হয়তো। শরীরে বাঁ পাশটাই অসাড় হয়ে পড়েছিল। ওষুধপত্র খেয়ে খেয়েই চলতে হচ্ছে, প্রতি মাসেই ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। এটা বড়ই মুসিবত তাঁর কাছে। কিন্তু না গেলেও তো উপায় নেই।

বিবি মরিয়মের স্বামী মারা গেছেন ২০ বছরের মতো। তখন থেকেই তিনি সংবাদপত্র বিক্রি করতে শুরু করেছেন গুলশান ১ নম্বরের ডিএনসিসি মার্কেট ও আশপাশের এলাকায়। তিনি মুঠোফোন ব্যবহার করেন না, করতে পারেন না বলে। দুপুর ১২টায় ডিএনসিসির মার্কেটের পাশের বটতলায় দেখা করার কথা ছিল তাঁর সঙ্গে। কাগজ বিলি করে ক্লান্ত শরীরে যথাসময়েই বটতলায় এলেন তিনি।

উত্তর বাড্ডার ১০ নম্বর লেনে থাকেন বিবি মরিয়ম। স্ট্রোকের পর বাঁ পায়ে বল একটু কম পান। একটু করে পা টেনে টেনে চলতে হয়। এভাবেই একপা–দুপা করে হেঁটে হেঁটেই যাতায়াত করেন তিনি। বাসে বা রিকশায় ওঠারই সামর্থ্য নেই শরীরে। এই ভাঙাচোরা শরীর নিয়েও তাঁকে পথে নামতে হয় জঠরজ্বালা মেটাতে। সমস্যা আরও বেড়েছে বড় মেয়েকে নিয়ে। বিবি মরিয়মের দুই মেয়ে। বিয়ে দিয়েছেন। ন উত্তর বাড্ডায় বাসার দিকে। অনেকটা পথ যেতে হবে তাঁকে।

ছোটজন ভালোই আছে। বড় জামাইটা বিবির ভাষায় ‘এক নম্বরের বদ’। নেশা করে, জুয়ারও অভ্যাস আছে। বউকে মারধরও করত প্রায়ই। সম্প্রতি মাথায় এমন আঘাত করেছে মরমর অবস্থা। খবর পেয়ে বিবি অচেতন মেয়েকে নিয়ে যান বাড্ডা জেনারেল হাসপাতালে। যমে–মানুষে টানাটানি অবস্থা থেকে শেষ পর্যন্ত মেয়ে বেঁচে উঠলেও সুস্থ হলো না পুরোপুরি। কোনো কাজ করতে পারে না। সারাক্ষণ তাঁর মাথাব্যথা থাকে। বলতে গেলে বিছানাতেই পড়ে থাকে সারা দিন। মেয়ে আর দুই নাবালক নাতিনাতনিকে বিবি মরিয়মকেই টানতে হচ্ছে নিরুপায় হয়ে। জীবনযুদ্ধের একমাত্র হাতিয়ার এই সংবাদপত্র বিক্রি। ইদানীং এতে আয়ও কমে গেছে। তিনি বলছিলেন, ‘জীবনে অনেক কষ্ট করছি। আমার জীবনটাই কষ্টের। আর কত দিন চলে ফিরতে পারব জানি না।’ জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে কাগজ বিক্রির আয় দিয়ে এখন আর দিন চলে না। বহু বছর ধরে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বিবি মরিয়মকে দেখছেন। অনেকেই তাঁর গ্রাহক। তাঁরা পত্রিকার দামের অতিরিক্ত কিছু কিছু সাহায্য– সহায়তা দেন। এভাবেই চলছে তাঁর জীবনে পড়ন্ত বেলার দিনগুলো।

কথা শেষ হলো। সেদিন রোদও উঠেছিল বেশ প্রখর। সেই খররোদ মাথায় নিয়ে বিবি মরিয়ম পা টেনে টেনে চলা শুরু করলে