মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল সম্পদে অপ্রতুল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হিসেবে। কিন্তু নিন্দুকদের আশঙ্কা অসত্য প্রমাণ করে একের পর এক বাধা পেরিয়ে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এই এগিয়ে যাওয়ার পথ রচিত হয়েছিল কিছু অভূতপূর্ব ঘটনা, অভিনব ভাবনা, ভবিষ্যৎমুখী পরিকল্পনা ও উদ্যোগে। আমরা ফিরে দেখছি বাংলাদেশের উজ্জ্বল সেসব মুহূর্ত।
‘ওই যে আকাশ নীল হলো আজ/ সে শুধু তোমার প্রেমে…’, ফেরদৌসী রহমানের গাওয়া এ গানের মধ্য দিয়েই ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথম গানের অনুষ্ঠান। সেই ১৯৬৪ সালেই ঢাকার পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে যাত্রা শুরু করে প্রযুক্তির আরেক বিস্ময়, বাংলাদেশের প্রথম কম্পিউটার। আইবিএম ১৬২০ সিরিজের সে মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহৃত হতো গবেষণাধর্মী কাজের জটিল গাণিতিক হিসাব পরিচালনায়।
ষাটের দশকেই আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান হিসাব ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহার করেছে মেইনফ্রেইম কম্পিউটার। এর মধ্যে হাবিব ব্যাংক, ইউনাইটেড ব্যাংক, আদমজী জুট মিল এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো অন্যতম। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএম ৩৭০ ও আইবিএম ৪৩৩১ মেইনফ্রেম কম্পিউটার দুটি স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার কেন্দ্র।
অপর দিকে ১৯৮৫ সালে একটি আইবিএম ৪৩৩১ মেইনফ্রেম কম্পিউটার দিয়ে চালু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার কেন্দ্র, যেটি বর্তমানে পরিচিত তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট হিসেবে।
১৯৯৮ সালের মার্চে সরকার কম্পিউটার ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের ওপর থেকে যাবতীয় শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়, দেশে কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়াতে যেটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর আসার পর জনপ্রিয় হতে থাকে মাইক্রো কম্পিউটার। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিআরএস-৮০ মডেলের মাইক্রোকম্পিউটার ব্যবহৃত হয় ১৯৮০ সালে। ১৯৮১ সালে পারসোনাল কম্পিউটার (পিসি) নিয়ে আসে আইবিএম, কম্পিউটার চলে আসে সাধারণ ব্যবহারকারীর নাগালের মধ্যে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে সেটি জনপ্রিয়তা পেলেও বাংলাদেশে বছরজুড়ে কম্পিউটার বিক্রি হতো হাতে গোনা কয়েক ডজন।
তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদারদের সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী ও অধ্যাপক ড. আব্দুল মতিন পাটোয়ারীর উদ্যোগে ১৯৭৯ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি। এখনো সগৌরবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এই সোসাইটি। কিন্তু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাব রাখতে এবং কম্পিউটারসংশ্লিষ্ট খাতে বাজার তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় ভিন্ন মাত্রার উদ্যোগের। কিন্তু সাঁতার কেটে পুকুর পার হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ যে গণ্ডি, সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য সাম্পান তৈরির আহ্বান সেখানে কতটা কঠিন, কেবল স্বপ্নবাজ নাবিকই সেটি টের পায়।
সে সময়ের সফটওয়্যার ও টেলিযোগাযোগ খাতের গুটিকয় মানুষ ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন সম্ভাবনার জায়গাটুকু। ১৯৮৬ সালে জনপ্রতি ৫০ টাকা চাঁদা দিয়ে করা আয়োজনে ধানমন্ডির ৭ নম্বর সড়কের মিং হাউস চায়নিজ রেস্তোরাঁয় (বর্তমান ধানমন্ডি আর্কেড) সিদ্ধান্ত হয় সংগঠন তৈরির। জন্ম হয় বাংলাদেশ কম্পিউটার অ্যাসোসিয়েশনের। ১৯৮৭ সালে তৈরি হওয়া এই অ্যাসোসিয়েশনই পরবর্তী সময়ে নাম পরিবর্তন করে হয় বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। জাতীয় পর্যায়ে কম্পিউটার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তারাই প্রথম আয়োজন করে ‘বিসিএস কম্পিউটার শো ১৯৯৩’, যেটি বাংলাদেশের কম্পিউটারশিল্পের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
এদিকে আশির দশকের শেষার্ধে বাংলা ভাষাকে কম্পিউটারে নিয়ে আসার জন্য ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে শুরু হয় নানা রকমের প্রচেষ্টা। তৈরি হয় শহীদলিপি, মাইনুলিপি, জব্বারলিপির মতো বাংলা ফন্ট, বিজয় ও মুনীর নামের কি–বোর্ড। ‘জনগণের হাতে কম্পিউটার চাই’ এই প্রতিপাদ্য সামনে ধরে ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের প্রথম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক ম্যাগাজিন ‘কম্পিউটার জগৎ’। ১৯৯২ সালে দুই কিশোর ‘বর্ণ’ নামে সম্পূর্ণ বাংলায় তৈরি করে ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার। এর কিছুদিন আগে ১৯৯০ সালের ২০ জানুয়ারি সরকার কর্তৃক গঠিত হয় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। ইতিপূর্বে ১৯৮৩ সালে সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল ন্যাশনাল কম্পিউটার কমিটি (এনসিসি), ১৯৮৮ সালে যেটির ভূমিকা গ্রহণ করে ন্যাশনাল কম্পিউটার বোর্ড (এনসিবি)।
১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা শহরে প্রথম মোবাইল ফোন সেবা দেওয়া শুরু করে হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল)। পরবর্তী সময়ে এই কোম্পানির নাম বদলে হয় প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড, যেটি মোবাইল টেলিফোন সেবা দিতে শুরু করে সিটিসেল নামে। শুরুতে প্রতি মিনিট ১০ টাকা খরচে মোবাইল টেলিফোন সেবা অত্যন্ত ব্যয়বহুল থাকলেও পরে গ্রামীণফোন (১৯৯৬), একটেল (বর্তমানে রবি, ১৯৯৬), টেলিটক (২০০৪), বাংলালিংক (২০০৫), ওয়ারিদ (বর্তমানে এয়ারটেল, ২০০৭) ইত্যাদি মোবাইল কোম্পানির আবির্ভাব ও উপযুক্ত সরকারি নীতির ফলে সাধারণের হাতের নাগালে চলে আসে মোবাইল সেবা।
১৯৯৬ সালে আইসিটি খাতের উন্নয়ন ও রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রস্তাবনা প্রদান করতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে প্রধান করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটির দেওয়া বেশ কিছু প্রস্তাবের মধ্যে একটির ভিত্তিতে ১৯৯৮ সালে মাত্র ১৮ সদস্য নিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)।
সারা বিশ্বে তত দিনে যোগাযোগের আরেক অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। ১৯৯৬ সালে সর্বসাধারণের জন্য প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত করা হয় ইন্টারনেট। শুরুর দিকে দেশে ইন্টারনেট আসত ভিস্যাটের মাধ্যমে। তখন ৬৪ কেবিপিএস ব্যান্ডউইডথের জন্য দাম দিতে হতো ৯৬ হাজার ডলার। এ বছরই নবম ও দশম শ্রেণিতে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে যুক্ত হয়েছিল বাংলা ভাষায় লেখা কম্পিউটারবিষয়ক বই।
১৯৯৮ সালের মার্চে সরকার কম্পিউটার ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের ওপর থেকে যাবতীয় শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়, দেশে কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়াতে যেটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষার সূচনা হয় ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৯২ সালে।
২০০১ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে গঠিত হয় ১৭ সদস্যের জাতীয় টাস্কফোর্স। ই-গভর্ন্যান্স, ই-কমার্সসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা ছিল টাস্কফোর্সের অন্যতম দায়িত্ব। ২০০২ সালে তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, গবেষণাসহ বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হলো আইসিটি নীতিমালা। পরবর্তী সময়ে আইসিটি পরিষেবাগুলো নিয়মাতান্ত্রিক উপায়ে উৎসাহিত করার জন্য প্রণীত হলো তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ২০০৬। সে বছরই বাংলাদেশ সংযুক্ত হলো ডেটা পরিবহনের বৈশ্বিক মহাসড়ক সাবমেরিন কেব্ল সি-মি-উই-ফোর এর সঙ্গে।
২০০৯ সালে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নিয়ে ঘোষিত হয় জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নীতিমালা। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ডিজিটাল অর্থনীতিতে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তর করা ছিল এর মূল লক্ষ্য। মানবসম্পদ উন্নয়ন, নাগরিকদের সংযুক্ত করা, ডিজিটাল সরকার এবং আইসিটি শিল্পের প্রচার—এই চার স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ পরবর্তী সময়ে দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত এক স্লোগানে পরিণত হয়।
এরপরের সময়টাতে সারা বিশ্ব ব্যাপক ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে থাকে। পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে বাংলাদেশেও। সরকারি-বেসরকারি নানা পর্যায়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে ডিজিটাল মাধ্যমে সেবা দেওয়ার প্রবণতা। বাড়তে থাকে ইন্টারনেট সংযোগ। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছে যায় ফাইবার অপটিক কেব্ল। ২০১১ সালের মার্চ মাসে যাত্রা শুরু হয় প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবার। ২০১২ সালে শুরু হয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)। বিশালসংখ্যক মানুষ চলে আসে আর্থিক সেবার আওতায়, বাদ যায়নি প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণও।
তথ্যপ্রযুক্তির এই জয়যাত্রায় শিক্ষার্থীদের নিয়েও শুরু হয় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানান আয়োজন। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) মতো সংগঠনগুলো বছরব্যাপী পরিচালনা করে হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, গার্লস প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, গণিত অলিম্পিয়াড, রোবট অলিম্পিয়াডের মতো কার্যক্রমগুলো। উৎসবের আমেজে সারা দেশ থেকে সম্পৃক্ত হতে থাকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
যানজটে জর্জরিত শহরের অধিবাসীদের অবাক করে দিয়ে ২০১৫ সালে চলে আসে রাইড শেয়ারিং। ধীরে ধীরে আসতে থাকে ফুড ডেলিভারি, মার্কেটপ্লেস ও ই–কমার্স। নগরবাসী দেখে, দরজায় কলবেল বাজিয়ে কেউ একজন হাসিমুখে বলছে, ‘আপনার পিৎজা।’ কেউ একজন হয়তো ফোন করে বলছে, ‘আপনার জন্য গাড়ি নিয়ে বাসার নিচে অপেক্ষা করছি।’ মানুষের ভাবনার জগতে খানিকটা আলোড়ন তুলে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে ২০১৮ সালের ১২ মে রকেটে চড়ে মহাকাশে গেল আমাদের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’।
করোনা মহামারি শুরু হলে অন্য আর সব দেশের মতো স্থবির হয়ে যায় বাংলাদেশ। সে দুঃসময়ে সারা দেশের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয় তথ্যপ্রযুক্তি। দেশব্যাপী বিস্তৃত মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ভর করে শুরু হলো অনলাইন কার্যক্রম। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখল ইন্টারনেট–সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ও তাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। চলতে থাকল অনলাইন সভা, সেমিনার, ক্লাস, পরীক্ষা।
সারা দেশের মানুষ যখন করোনা–আতঙ্কে ঘরবন্দী, তখন পণ্য ও পথ্যসেবা নিয়ে দ্বারে দ্বারে ছুটে গেলেন ই–কমার্সের ডেলিভারি সেবায় সম্পৃক্ত মানুষেরা। প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে সক্রিয় থাকল ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব)। হোয়াটসঅ্যাপের এক প্রান্তে যুক্ত থেকেছেন চিকিৎসক, অন্য প্রান্তে রোগী। ডেস্কে বসেই কাজ করেছেন বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং খাতে নিযুক্ত কর্মীরা। সেই বন্দী সময়েও দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পরিষেবা দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাত সচল রেখেছে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদীয়মান প্রযুক্তির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, ক্লাউড কম্পিউটিং ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। ক্রমবর্ধমান তথ্যের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার প্রয়োজনে ২০১৯ সালের জুনে জাতীয়ভাবে তৈরি হয় বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ডেটা সেন্টার। ২০২২ সালের ২৬ জুলাই প্রথমবারের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে পঞ্চম প্রজন্মের (৫জি) মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ পরিচালনা করে গ্রামীণফোন।
স্ট্যাটিস্টার তথ্যমতে, আমাদের কম্পিউটার–সংশ্লিষ্ট বর্তমান বাজারের আকার ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যেটি ২০২৮ সালের মধ্যে প্রায় চার বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছাবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে রপ্তানি আয় ইতিমধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দেশীয় বাজারও ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
আইএনএফ বলছে, ২০২৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় চার হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ইতিমধ্যে জিডিপিতে ১ দশমিক ২৮ শতাংশ অবদান রাখছে আইসিটি খাত। এই খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় তিন লাখ মানুষের। ফ্রিল্যান্সিং পেশার সঙ্গে যুক্ত আছে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। ফেসবুকভিত্তিক এফ–কমার্সে যুক্ত আছে ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা।
চলমান ২০২৩ সালের শেষার্ধে এসে বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটির বেশি। ১৩ কোটি ছাড়িয়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। ২০২৫ সালে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৬৩ শতাংশে (জিএসএমএ)। প্রতি মাসে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে ২০ লাখের বেশি মোবাইল হ্যান্ডসেট। ৮ কোটির বেশি এমএফএস অ্যাকাউন্টে বর্তমানে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। ১৮ সদস্য নিয়ে শুরু করা বেসিসের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২ হাজার ১৮২। বর্তমানে দেশে ব্যান্ডউইডথের চাহিদা প্রায় ৪ হাজার জিবিপিএস।
সব তথ্যের দিকে তাকালে এটি বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় যে এ দেশের মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে পথ চলতে শিখে গেছে। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির যাত্রায় ইতিমধ্যে শামিল হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত, তৈরি করেছে নিজস্ব অবস্থান।
সামনের দিনগুলোয় এভাবেই যেন অব্যাহত থাকে নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা। একটি সুখী-সমৃদ্ধ-উন্নত বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও যেন গুনগুন করে গাইতে পারে, ‘বাংলা আমার তৃষ্ণার জল, তৃপ্ত শেষ চুমুক/ আমি একবার দেখি, বারবার দেখি, দেখি বাংলার মুখ।’
বি এম মইনুল হোসেন: অধ্যাপক ও পরিচালক, তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়