বিনিয়োগকারীদের সাহস সীমাহীন

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর

কয়েক দিন আগে নতুন কয়েকটি শব্দ শিখলাম; গ্লোবালাইজেন নয়, এখন চলছে স্লোবালাইজেশন। প্রথম ছিল আউটশোরিং, তারপর শিখলাম রিশোরিং। এখন হচ্ছে ফ্রেন্ডশোরিং।

নিশ্চয়ই ভাবছেন বাংলাদেশের একজন বিনিয়োগকারী, তা-ও আবার জুতা প্রস্তুতকারী, রপ্তানিকারী ও বিপণনকারী কেন এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে?

প্রথমে, স্লোবালাইজেশন সারা পৃথিবী এখন একটি অত্যন্ত অস্থিতিশীল অবস্থায় আছে। করোনা মহামারি পুরোপুরি শেষ না হওয়ার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একটি নতুন সংকট বয়ে নিয়ে এল। তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি জন্ম দিল বিশাল মূল্যস্ফীতিকে, যার প্রভাব আমরা বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিলে দেখতে পাচ্ছি। করোনা মহামারির শুরু থেকে উৎপাদন হ্রাস এবং জাহাজিকরণ খরচের পাগলা ঘোড়ার সঙ্গে এবার যোগ দিল সারা পৃথিবীতে তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অকল্পনীয় মূল্যবৃদ্ধি। ফলে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এবং ক্রয় প্রবণতায় একটি ধস। মজার ব্যাপার, বিলাসবহুল পণ্যের দাম ও চাহিদা কমেনি এবং একদম সস্তা পণ্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পেল। যার নাম হলো কে-শেপড রিকভারি। সবচেয়ে বিপদে পড়ল মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী, যাদের ক্রয়ক্ষমতা, সম্পদ ও আয় সবচেয়ে সীমিত।

লন্ডনে পেট্রলের দাম, বার্লিনে ঘরের বিদ্যুৎ খরচ, বাংলাদেশে বই-খাতার দাম, নিউইয়র্ক-এ জুতার দাম, এমনকি টোকিওতে রামেন নুডলসের দাম— সবই ঊর্ধ্বমুখী। এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা সংকুচিত হচ্ছে, বেকারত্ব এমনকি চিনেও বাড়ছে, সারা পৃথিবীতে নেতৃত্বের ওপর আস্থা কমে এসেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আস্থা এবং সেই আস্থা কিন্তু বিনিয়োগকে গুরুতরভাবে আঘাত করে। অনেকখানি ঘুরে হলেও আমি আমার আসল প্রশ্নে পৌঁছালাম-বিনিয়োগের অবস্থা কি এবং তা ত্বরান্বিত করার কৌশল কি হওয়া উচিত। এই স্লোবালাইজড, ফ্রেন্ডশোরিং এবং মন্দা পরিবেশে আমরা দেখছি অনেক দেশ তার নিজের চাহিদা পূরণ অথবা তার নিজের অর্থনীতি চাঙা করতে অনেকেই বেপরোয়া হয়ে পরেছে। শুল্ক, সুদের হার এমনকি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। বিশ্বায়নের জায়গায় নিশ্চিতকরণ যেন বেশি জরুরি হয়ে পরছে।

আবার শুধুমাত্র দাম কমিয়ে, আর্থিক প্রণোদনা দিয়েও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সেই দেশ এবং অর্থনীতির সক্ষমতা, গতি, সুশাসন, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অবস্থানও প্রভাব রাখছে। বিনিয়োগ কোথায় যাবে। বিনিয়োগকারী দেশের মৈত্রী দেশে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে এবং পাবে-যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের চিপ ইন্ডাস্ট্রি তার উদাহরণ। ফ্রেন্ডশোরিংয়ের বিষয় বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশের অর্জন এখন পর্যন্ত অবশই প্রশংসনীয়। এই অঞ্চলের মার্কিন-চীনা-রাশিয়ার কোন্দল এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবিলা করে আমরা তুলনামূলক ভালো অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের সময় হয়েছে এই নতুন বাস্তবতা আমলে নিয়ে কৌশল পরিবর্তনের। কারণ, আগের তুলনায় বিনিয়োগের প্রবাহ অনেক কমেছে এবং আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। বিনিয়োগের জন্য প্রতিযোগিতা যেমন বাড়ছে, নতুন নতুন প্রতিযোগী মাঠে নামছে। তাই বাংলাদেশকে বৈশ্বিক বিনিয়োগ বাজার দখলে আরও পারদর্শী হতে হবে এবং এখানে আমাদের প্রথম সারির সৈনিক: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগকারীরা। সেই সকল বাংলাদেশি এবং কিছু বহুজাতিক বড় এবং মাঝারি ব্যবসা এবং শিল্প আজকে আমাদের এই পর্যন্ত আনতে সক্ষম হয়েছে।

আমরা দেখেছি কোভিড-এর মধ্যেও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা থেমে যায়নি। সরকারের কিছু ত্বরিত এবং দক্ষ পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ইতি টেনে, সাহস ও শ্রম দিয়ে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী কিন্তু হার মানেনি, বরং ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। তখনই বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং সেবার মূল্যকে প্রভাবিত করল। তেল, বিদ্যুৎ এবং আনুষঙ্গিক সকল খরচ, পরিবহন, বন্দর ব্যবহার ইত্যাদি সকল খরচ ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু সিংহভাগ মানুষের আয় বাড়েনি। অথবা সমান হারে বাড়েনি। তাই আমাদের সাধারণ ভোক্তারা বিপাকে-খরচ বাড়ছে কিন্তু আয় সেই হারে বাড়েনি। তাই একমাত্র উপায়-ব্যয় সংকোচন। খরচ কমাও। চাহিদা কমছে অথবা ভোক্তারা আরও কম দামের পণ্য ও সেবা খুঁজছে। এইখানেই চাহিদা এবং বিনিয়োগের সন্ধিস্থল।

একদিকে যেমন এই নতুন পরিস্থিতি একটি প্রতিকূল অবস্থা, আরেকদিকে নতুন বিনিয়োগ ও ব্যবসার সুযোগ করে দেয়। জাহাজিকরণ খরচ, সময় এবং আমদানি অস্থিরতার সঙ্গে আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক নতুন পণ্য তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমদানির বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশে একটি নতুন বিনিয়োগের জায়গা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে চীনের ওপর অতি নির্ভরশীলতা একদিকে যেমন আমাদের সরবরাহ শৃঙ্খলকে ঝুঁকিপূর্ণ করে, আরেক দিকে, স্থানীয় উৎপাদন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ওপরে চাপ কমায়, কর্ম সংস্থান করে, কর, রাজস্ব ও স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে। এর অর্থ এই না যে আমাদের আমদানি বন্ধ হবে, উল্টো আমরা কাঁচামাল আমদানি বাড়িয়ে আমাদের স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে পারি। একই সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করেছি অনেক শিল্প তাদের উৎপাদন ক্ষমতা এবং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ করছেন।

এখন রপ্তানিমুখী শিল্পের বিনিয়োগের চিত্রটা একটু দেখি। সেখানেও প্রায় একই বাজার বাস্তবতা, হয়তো আরেকটু কঠোর ও আশঙ্কার। বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগের বেশি রপ্তানি আয় আসে আমাদের বস্ত্র ও কাপড় খাত থেকে। তাই সকল কিছুর ঊর্ধ্বে আমাদের এই রপ্তানি খাতকে দেখা হয় এবং দেখতে হবে। জেনেভাভিত্তিক আইটিসির আগস্ট মাসের একটি প্রতিবেদনে এসেছে যে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশি প্রস্তুতকারীদের ৩২-৮৩% কম দাম দেয়, আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায়। এই বাস্তবতার সঙ্গে আজ ২০২২ সালে যখন আমাদের গন্তব্য বাজারে ক্রেতারা মূল্যস্ফীতির চাপে হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের রপ্তানিকারকদের অবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পরছে।

যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকাতে সাধারণ জনগোষ্ঠী যখন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং সেবা যথা পেট্রল, খাদ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ব্যাংকের বাড়তি সুদ দিতে কষ্টবোধ করছে, তারা তাদের শখের পণ্যের ওপর খরচ স্বাভাবিকভাবে কমিয়ে দিচ্ছে। কয়েক মাস আগে লন্ডনে একটি পত্রিকার শিরোনাম পড়েছিলাম: ইট অর হিট? এক কথায়, চাহিদা দুর্বল এবং দামের ওপর প্রচণ্ড চাপ। মার্কিন ডলার খুব শক্তিশালী হওয়াতে সকল মার্কিন ব্যতীত আমদানিকারকদের খরচ বাড়ছে এবং জাহাজিকরণ খরচ কিছুটা হ্রাস পেলেও এখনো ২০১৯-এর থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। তাই সকল ক্রেতাদের একই গান-দাম কমাতে হবে। যাদের সক্ষমতা আছে তারা মান, নতুনত্ব এবং দক্ষতা দিয়ে এই চাপ মোকাবিলা করছে। কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আরও বড় বিনিয়োগ হয়েছে বা হচ্ছিল। বস্ত্র খাত ছাড়া অন্য অনেক রপ্তানিমুখী খাত যেমন সিরামিক, পাদুকা, পাট, খাদ্য, ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজার তৈরি দুটিই হচ্ছে।

ঠিক এমন এক ক্রান্তিলগ্নে আমাদের বিনিয়োগকারীদের ওপর এসে পরল নতুন সংকট। বিদ্যুৎ এবং গ্যাস তথা জ্বালানি সংকট। জানুয়ারি মাসে পিডিবি জানাল তারা বিদ্যুতের দাম ৬৬% বাড়াতে চায়। প্রায় নয় মাস পরে বিইআরসি ১৪ই অক্টোবর তা প্রত্যাখ্যান করল। এই সময়ে প্রত্যেকটি ব্যবসা-ছোট, বড়, মাঝারি পুরোপুরি অসহায়। তাও রক্ষা যে, সর্বসাধারণের কথা বিবেচনায় এনে এই মুহূর্তে এই আত্মঘাতী পদক্ষেপ থেকে তারা বিরত থেকেছেন। কিন্তু আগস্ট মাসে বাংলাদেশের জ্বালানির দাম বাড়ল ৪০-৫০ %। সঙ্গে সঙ্গে ভোজ্য তেল, পরিবহন, খাদ্য দ্রব্য ইত্যাদির দামও ঊর্ধ্বমুখী। শুরু হলো অর্থনীতির ওপর মূল্যস্ফীতির টানাপোড়েন। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সরবরাহ আকস্মিকভাবে হ্রাস পাওয়া শুরু করল। বিটিএমএ-র তথ্য অনুযায়ী শুধু তাদের খাতে ১৭০০ মেম্বার কোম্পানি ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু জুলাই মাসের পর থেকে তাদের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ৪০% পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সবার-বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের অভাবে ব্যবহার করতে হচ্ছে বেশি খরচের ডিজেল জেনারেটর, যার সক্ষমতা যথেষ্ট নয় এবং আমরা কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে উৎপাদন করতে পারছি না। ফলে হারাচ্ছি নতুন ক্রয়াদেশ এবং বাজার। সেই সম্ভাবনার জোয়ার আমরা জুলাই মাসেও দেখেছি, এখন যেন তলিয়ে যাচ্ছে।

এই সমস্যার কোনো সহজ এবং ত্বরিত সমাধান আমার জানা নেই। সুইস ঘড়ি কোম্পানি রোলেক্স ১৭ অক্টোবরের পর তাদের উৎপাদন আগের চেয়ে অর্ধেক করে ফেলেছে। কারণ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে তাদের গ্যাস সরবরাহ এখন নিশ্চিত নয়। তাহলে সফিপুর বসে জুতার কারখানা আর কি কোন আশার মুখ দেখতে পারবে?

আমরা হার মানতে পারি না। থামা মানা। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের সাহস, মানসিক শক্তি এবং সৃজনশীলতা সীমাহীন। আমরা খরচ সাশ্রয়, নতুন বাজার, নতুন কাঁচামাল ও প্রযুক্তির উৎস, নতুন বাজারি কৌশল প্রত্যেকটি জায়গায় আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে মনোযোগ দিচ্ছি। বিনিয়োগ করেছি, দেশকে ভালোবেসে, দেশের ভালো এবং আমাদের মঙ্গল, নিরবচ্ছিন্ন। কিন্তু আমাদেরও সহায়তা দরকার। প্রয়োজন, আস্থার পুনরাবৃত্তি। প্রয়োজন, নিন্দা এবং দোষারোপ বর্জন করে আমাদের সমস্যাগুলো উপলব্ধি করা এবং কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সমাধানগুলোও আমলে নেওয়া।

বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে আকৃষ্ট ও সম্প্রসারণ করতে হলে আমাদের এখনই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করি।

প্রথমেই শতভাগ রপ্তানিকারক সব কারখানাকে কীভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস দেওয়া যেতে পারে, তার একটি রূপরেখা খুবই জরুরি ভিত্তিতে তৈরি করতে হবে। বিশেষ কয়েকটি অঞ্চল, যেখানে এ ধরনের কারখানা রয়েছে, যেমন নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভার, গাজিপুর ও চট্টগ্রামের মতো অঞ্চলকে আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে। তা না হলে রপ্তানি মুখ থুবড়ে পড়বে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মহামারির শুরুতে যেমন শ্রমিকদের বেতন নিশ্চিত করার জন্য দূরদর্শী সিদ্ধান্ত হিসেবে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছিলেন, একইভাবে এখন উচিত জ্বালানি খাতের সংকট উত্তরণের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমাদের বাড়তি রপ্তানি আয় দিয়ে তা মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।

পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পকে অবহেলা করা যাবে না। শিল্পঘন এলাকায় পূর্বপরিকল্পনার ভিত্তিতে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এখন সারা পৃথিবীর জন্য একটি জরুরি বিষয়। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির প্রধান উৎস আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। তাই খেয়াল রাখতে হবে, যা আমরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না, তা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যেন আমরা আমাদের অর্থনীতির গতিশীলতা না হারিয়ে ফেলি।

খাত ও তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ করে আমাদের কোথায় ব্যবসার খরচ, বিশেষ করে কর, কমানো যায়, তা এখনই শুরু করতে হবে। শুধু রাজস্ব নয়, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত।

বাংলাদেশের বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র স্তরের ১০টি করে প্রতিষ্ঠান যেন তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা সরকারের জ্যেষ্ঠ নীতিনির্ধারকদের কাছে নিয়মিত তুলে ধরতে পারে, তার একটি আনুষ্ঠানিক প্রথা তৈরি করা যেতে পারে। কী কী কারণে তারা সমস্যায় পড়ছে, বাধার মুখোমুখি হচ্ছে এবং কী কী নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিলে তাদের বিনিয়োগ আরও বাড়বে, তা যদি তাদের মুখ থেকে শোনা যায়, তবে এর সমাধান খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।

২০২১ সালের আগস্ট মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতনসহ সব সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং কোনোরকমের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি দমন করার জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন সবাইকে। তারপরও আমরা দেখতে পাই, অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির কারণে এবং জবাবদিহির অভাবে ছোট, মাঝারি, এমনকি বড় ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী ভালো কাজের পুরস্কার এবং দুর্নীতির জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের আসলে চার্লস ডিকেন্সের মতো (ইট ওয়াজ দ্য বেস্ট অব টাইমস...ইট ওয়াজ দ্য ওর্স্ট অব টাইম) বর্তমান সময়কে একই সঙ্গে সেরা সময় ও খারাপ সময় হিসেবে দেখতে হবে।

বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাঁচাতে প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, সহনীয় ও যৌক্তিক কর ব্যবস্থাপনা এবং সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীর ওপর বিশ্বাস রাখা। বাকিটা আমরাই পারব।

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।