জীবনের গল্প

স্বপ্ন আর বাস্তবতার সংকটে আবুল কালাম

আবুল কালাম
আবুল কালাম

করোনা অতিমারি জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রেই একটা বড় ধাক্কা দিয়ে গেলেও সংবাদপত্রশিল্প তথা সংবাদপত্র বিপণনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের জীবনে এক গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে। তিন বছর ধরে চলতে থাকা এই সংকটের ধাক্কা অন্য ক্ষেত্রগুলো ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় অনেকটা এগিয়ে গেলেও সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে এই চেষ্টা ততটা ফলপ্রসূ হয়নি। ছাপা সংবাদপত্রের নিয়মিত গ্রাহকেরা সংক্রমণকালে একঝটকায় পত্রিকা রাখা ছেড়ে দেওয়ার পরে অনেকেই এখনো আর ফিরে আসেননি। ফলে সংবাদপত্র বিপণনের সঙ্গে নানা পর্যায়ে যুক্ত মানুষেরা তাদের বহুদিনের একটি নিশ্চিত আয় থেকে বঞ্চিত হয়ে গভীর আর্থিক সংকটে পড়েছেন।

এই সংকট পথে পথে ফেরি করে খুচরা বিক্রি করেন তাঁদেরও যেমন, তেমনি যাঁরা মূল এজেন্ট বা বড় পরিবেশক তাঁদেরও তেমনি। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মো. আবুল কালাম একজন বড় পরিবেশক, তাঁর সংকটও বেশ বড় আকারেই এসেছে। তিনি প্রথম আলোডেইলি স্টার–এর এই অঞ্চলের পরিবেশক। শুধু প্রথম আলোই প্রতিদিন ১৬ হাজার কপি বিতরণ করতেন তাঁর কেন্দ্র থেকে। খুব ভালো আয় হতো। এখন তো নগদ অর্থে পত্রিকা কেনাবেচা। ফলে আয়টা প্রতি মাসে নিশ্চিতই ছিল। করোনার ধাক্কায় বিক্রি একেবারে পড়ে যায়। অনেকে চেষ্টা করে চলতি মাসে ৫ হাজার ৬০০ কপিতে পর্যন্ত টেনে আনতে পেরেছেন।

মাঝের এই সময়টায় মহাদুর্যোগ গেছে তাঁর ওপর দিয়ে। আবুল কালাম জানান, মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে তাঁর বাসা। শুধু ভাড়াই ১৭ হাজার টাকা। এর সঙ্গে সার্ভিস, গ্যাস, বিদ্যুৎ—সব মিলিয়ে প্রায় ২২ হাজার টাকা পড়ে যায়। তাঁর তিন ছেলেমেয়ে। বড় মেয়ে মেডিকেল টেকনোলজিতে স্নাতক। সম্প্রতি তাঁকে বিয়ে দিয়েছেন। জামাতা প্রকৌশলী। বাহরাইনে থাকেন। মেয়েও সেখানে যাবেন। প্রস্তুতি চলছে। এখন তাঁর বাড়িতেই আছেন। এরপর ছেলে। তিনি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে এই বছরই ইন্টার্ন শুরু করছেন। ছোট মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ফলে ছেলেমেয়েদের শিক্ষার পেছনেই তাঁর অনেকটা খরচ।

আবুল কালাম জানালেন, কারোনায় গত ২০২০ ও ২০২১ সালে এত মন্দা ছিল যে আয় প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছিল। পত্রিকার কমিশন থেকে এখন যা পাচ্ছেন, তাতে বাড়িভাড়া আর বাজারখরচই চলে না। ধারদেনা করতে হয়েছে। প্রায় আট লাখ টাকার মতো ঋণ হয়েছে। আবার এই বয়সে এসে নতুন কিছু শুরু করবেন, তা–ও সম্ভব নয়।