কর্মীর লেখা

অস্তিত্বের ভেতর অস্তিত্ব

প্রথম আলোর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কর্মীদের কাছে লেখা আহ্বান করা হয়েছিল। তাঁরা লিখেছেন প্রথম আলোকে নিয়েই। কর্মীদের নির্বাচিত কিছু লেখা নিয়েই এ আয়োজন।

আমি এখন আমার জীবনের সবচেয়ে দামি লেখাটা লিখতে বসেছি। একটা মেয়ের তথা পুরো নারী জাতির জীবনের খুব মূল্যবান সময়ের কথা, যে পুরো সময় আমি কাটাচ্ছি প্রথম আলোর সঙ্গে। যেদিন প্রথম শুনলাম আমি মা হতে যাচ্ছি, কী যে খুশি হয়েছিলাম! শুনেই চোখে পানি চলে এসেছিল। আবার চিন্তা করছিলাম, কীভাবে কী করব। অফিস করতে পারব কি না। কিন্তু পরের পথচলাটা হয় অন্য রকম।

প্রথম তিন মাস বেশ কঠিন গিয়েছে। কাজের ফাঁকে হঠাৎ খারাপ লাগা, বমি হওয়া, মাথাব্যথা। না খেতে পারায় দুর্বল হয়ে গিয়ে প্রচুর ঘুম পেত। এ সবকিছুর মধ্যে কাজগুলো ঠিকভাবে করার চেষ্টা করেছি। একটু রেস্ট নিয়েছি। খুব খারাপ লাগলে টেবিলে মাথা দিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট ঝিমিয়ে নিয়েছি। আবার কাজ শুরু করেছি। মনোবল শক্ত রেখে নিজেকে বলেছি, আমি পারব।

প্রতিটি কর্মস্থল নারীদের জন্য সহজ হয়ে উঠুক। কর্মজীবী নারী থেকে কর্মজীবী মা হওয়ার গল্পটা সুন্দর হোক। পাশে থাকুক সবাই। হাতে হাত রেখে এভাবেই এগিয়ে যাক সব নারী।

ভালো লাগার বিষয় হলো, এই সময়ে সবার বেশ আদর, আলাদা একটা যত্ন পেয়েছি। টিম থেকে শুরু করে সবাই আমার খোঁজ রাখে, আলাদা কোনো প্রেশার দেয় না কাজের। খেয়েছি কি না, শরীর ঠিক আছে কি না, চেকআপ করিয়েছি কি না, সব খোঁজ নিচ্ছে। এই ভালোবাসা পরিবারের চেয়ে একটুও কম নয়। সারা দিন যাদের সঙ্গে থাকি, সবকিছু নিয়ে আলোচনা করি, তারাই তো আসল পরিবার।

আসলে মা হওয়া একটা মেয়ের জন্য যেমন পরম আনন্দের, তেমনি বেশ কঠিন। আর কর্মজীবী একক পরিবারগুলোর জন্য আরও কঠিন। সেই জায়গা থেকে আমি বলব কর্মস্থলে সহকর্মীদের একটু সহযোগিতা ও সহমর্মিতাই এই পথচলাকে অনেকখানি সহজ করে দেয়। ঘরে–বাইরে সমানভাবে সামলে নিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে; যেটা আমি আমার কর্মস্থল থেকে পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ!

বসে অফিস করার কারণে আমার পায়ে পানি এসে পা ফুলে গেছে। এ কারণে ডাক্তার বলেছে কাজের ফাঁকে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করতে। তাই মাঝেমধ্যে সময় পেলে নিচে যাই, একটা ডাব খাই, বাদাম কিনি। ফল কিনে সবাইকে নিয়ে খাই। এখন অফিসের পিয়ন ও আশপাশের লোকজন আমাকে চেনে, দেখলেই আমার খোঁজ নেয়।

এক ফোঁটা রক্ত থেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষে রূপান্তরিত হওয়ার এই পথচলা। আস্তে আস্তে নড়াচড়া টের পাওয়ার দারুণ সব অনুভূতি, খারাপ লাগা–ভালো লাগা পুরো সময়ই কাজের মধ্যে থেকে উপভোগ করছি। অস্তিত্বের ভেতরে যে অস্তিত্ব বেড়ে উঠছে, সে–ও এই পরিবারের একজন। এই প্রথম আলোর একজন। সবার মধ্যে বেড়ে ওঠা একজন।

প্রতিটি কর্মস্থল নারীদের জন্য সহজ হয়ে উঠুক। কর্মজীবী নারী থেকে কর্মজীবী মা হওয়ার গল্পটা সুন্দর হোক। পাশে থাকুক সবাই। হাতে হাত রেখে এভাবেই এগিয়ে যাক সব নারী।

হাজার লেখার ভিড়ে, হাজার ঘটনার মাঝে এই লেখা আমার অনাগত সন্তানের জন্য ভালোবাসার একটা ছোট চিরকুট।

মেরিনা আক্তার, নির্বাহী, অ্যাড অপারেশনস, ডিজিটাল ব্যবসা