‘একটি সুন্দর নাম অনেক ধনসম্পদের চেয়েও উত্তম’—এ প্রবাদবাক্যের মতো আমি প্রথম আলোর প্রেমে মজেছিলাম এর নামে। স্কুলে আসা–যাওয়ার সময় দেখতাম গ্রামের চায়ের দোকানে বড় ভাইয়েরা পত্রিকা পড়ছেন। বিভিন্ন পাতায় হরেক রকমের ছবি। এসব ছবি দৃষ্টি কেড়ে নিত। এভাবে আমিও প্রথম পত্রিকা পড়ার প্রতি আকৃষ্ট হই।
সালটা ২০০১। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে হামলা হয়। ভেঙে পড়ে প্রকাণ্ড জোড়া ভবন। ওই ঘটনার খবর পেতে প্রথম আলো পড়তে শুরু করি প্রতিদিন।
তখন আমি দশম শ্রেণির ছাত্র। স্কুলে গিয়ে সামনের টেবিলে ব্যাগ রেখে সোজা চলে যেতাম বাজারের একটি সেলুনে। ওই দোকানে প্রথম আলো পত্রিকা রাখা হতো। আমি পত্রিকা পড়ে আবার ফিরে আসতাম স্কুলে। এরপর কলেজে গিয়ে গ্রন্থাগারে বসে প্রথম আলো পড়া হয়েছে। একটা সময় পর অভ্যাসে পরিণত হয়ে পড়ে।
স্নাতক শ্রেণিতে পড়ার সময় চট্টগ্রাম শহরের একটি মেসে থাকতাম। ওই সময় মেসে প্রথম আলো পত্রিকা রাখা নিয়ে ভিন্নমতের রুমমেটদের সঙ্গে কত যে তর্ক হয়েছে!
২০১২ সালের স্নাতক পাস করলাম। শুরু হলো চাকরি খোঁজার যুদ্ধ। সেপ্টেম্বর মাসের এক সকালে প্রথম আলো পড়ছি। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটি বিজ্ঞাপনে, ‘প্রথম আলো পরিবারে আপনাকে স্বাগত।’ লোক নিয়োগ দেবে চট্টগ্রাম অফিসে। আমি আবেদন করলাম ফ্রন্টডেস্ক নির্বাহী পদে। লিখিত আর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দিই ২০১২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ। পাঠক হয়ে বনে গেলাম প্রথম আলোর কর্মী।
প্রথম আলোর দুই যুগ পূর্তি। এর মধ্যে এক দশক পার হবে আমারও। এই দীর্ঘ পথচলায় নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছি। প্রথম আলো নিয়ে পাঠকের নানা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। এসব প্রতিক্রিয়া আমাকে উদ্বেলিত করেছে। বাইরে থেকে যতটুকু জেনেছি, তার চেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছি এখানে কাজ করতে এসে।
শুধু কর্মী নয়, কর্মীর পরিবারের সদস্যদের জন্যও রয়েছে প্রতিষ্ঠানের আলাদা টান। সবার আপদে–বিপদে বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া দেয় প্রথম আলো। ২০২০ সালে আমি যখন করোনায় আক্রান্ত হই, তখন চারদিকে মৃত্যু আর মৃত্যু। আমিও ভয়ে ছিলাম। সে সময় আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল প্রথম আলো। যাঁদের কথা না বললে নয়—ঢাকা অফিসের খায়রুল কবির ভাই , শামীম ভাই আর চট্টগ্রাম অফিসের মনজুর মোরশেদ ভাই। তাঁরা প্রতিদিন দুবার আমার খবর নিতেন, কোনো ধরনের সমস্যা আছে কি না, জানতে চাইতেন। তাঁদের বাড়িয়ে দেওয়া হাত আমাকে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহস জুগিয়েছে।
প্রথম আলোতে কাজ করেই আমি বুঝতে পেরেছি, মানুষ যখন অসহায় হয়ে পড়ে, কারও কাছে আর যাওয়ার জায়গা থাকে না, তখন তাঁরা ছুটে আসেন প্রথম আলোর কাছে। এক দশক ধরে এটি দেখে আসছি। মানুষের বিশ্বাস, প্রথম আলো তাঁদের পাশে থাকবে। সাধারণ মানুষ যে কোনো বিষয়ে সত্য–মিথ্যা যাচাই করার জন্য ফোন করেন প্রথম আলোতে। আমার এমনও অভিজ্ঞতা আছে, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের সময় ভোট দিতে না–পারা সাধারণ জনগণ তাঁদের অসহায়ত্বের কথা ফোন করে জানিয়েছেন। দেশের বড় যেকোনো দুর্যোগের সময় ত্রাণসহায়তা পাঠাতে মানুষ বিশ্বাস রাখে প্রথম আলোর প্রতি।
প্রথম আলোর আরেকটি ভালো লাগার বিষয় হলো, এর স্লোগান। ‘ভালোর সাথে আলোর পথে’, ‘বদলে যাও, বদলে দাও’, ‘নিজে ভালো থাকি, সবাইকে নিরাপদ রাখি’ এসব স্লোগান মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে বলে আমার বিশ্বাস।
সবশেষে বলি, একজন চিরতরুণ ও মানবিক সম্পাদকের পত্রিকায় কাজ করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। শ্রদ্ধেয় মতিউর রহমান স্যারকে যত দেখি, ততই মুগ্ধ হই। তিনি উজ্জ্বল ও কর্মমুখর একজন মানুষ। স্যার যখন চট্টগ্রাম অফিসে আসেন তখন সবার মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। তিনি সবার সঙ্গে কথা বলেন। হাত মেলান। শতায়ু হোন তিন, শতায়ু হোক প্রথম আলো।
লেখক: প্রথম আলো পত্রিকার চট্টগ্রাম অফিসের ফ্রন্টডেস্ক নির্বাহী