হুমায়ুন আজাদ: জার্মানিতে যেভাবে মৃত্যু হয়েছিল

প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কর্মীদের কাছে লেখা আহ্বান করা হয়েছিল। তাঁরা লিখেছেন প্রথম আলোকে নিয়েই। কর্মীদের নির্বাচিত কিছু লেখা নিয়েই এ আয়োজন।

হামলায় গুরুতর আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন লেখক হুমায়ুন আজাদ। তাই অতিসংগোপনে জার্মানিতে পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু মিউনিখে পৌঁছবার ৪ দিনের মাথায় ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আকস্মিক মৃত্যুর খবর শুনে সারা দেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়। শুরু হয় নানা জল্পনাকল্পনা। এই মৃত্যু কি স্বাভাবিক? হামলাকারীরা তবে কি পিছু নিয়েছিল—এমন প্রশ্নও ওঠে। পাঠকের কৌতূহল মেটাতে তাঁর শেষ দিনগুলো নিয়ে ১৪ আগস্ট থেকে ২৭ আগস্ট আমার ১০টি রিপোর্ট প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ছাপা হয়।

২০০৪ সালে অমর একুশে বইমেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের উপন্যাস ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ প্রকাশিত হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে বইমেলা থেকে বের হয়ে বাংলা একাডেমি ও টিএসসির মাঝামাঝি পৌঁছালে জঙ্গিরা হুমায়ুন আজাদকে ঘেরাও করে। ব্যাগ থেকে চাপাতি-ছুরি বের করে হুমায়ুন আজাদের ঘাড়, মাথা, মুখ, গলা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে। এরপর হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে সাধারণ লোকজনের সঙ্গে মিশে যায়। একপর্যায়ে ‘সরকার নারী’ (১৯৯২), ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’ (২০০১), ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ (২০০৩) গ্রন্থ তিনটিকে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে।

চিকিৎসার জন্য হুমায়ুন আজাদ প্রথমে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ও পরে থাইল্যান্ডে যান। জীবন রক্ষা পেলেও তিনি অনেকটা পঙ্গু হয়ে যান। এরপর জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা কাজ করার জন্য জার্মানির লেখকদের সংগঠন পেন ক্লাবের বৃত্তি নিয়ে ২০০৪ সালের ৮ আগস্ট মিউনিখ এসে পৌঁছান।

আকস্মিক দুঃসংবাদ

১৩ আগস্ট দুপুর ১২টা নাগাদ প্রথম আলো থেকে একটি ফোন পেলাম। তখনকার প্রধান প্রতিবেদক প্রভাষ আমিন জানালেন হুমায়ুন আজাদ গত সপ্তাহে জার্মানি গিয়েছিলেন। তিনি গতকাল হঠাৎ মারা গেছেন বলে তাঁর পরিবারকে জানানো হয়েছে। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে ওই দিন জার্মানি সময় বিকেল পাঁচটা বা বাংলাদেশ সময় রাত নয়টার আগেই ফ্যাক্সযোগে নিউজটি কভার করতে বললেন। তখন বাংলা ফন্টের ব্যাপক প্রচলন হয়নি বলে ই–মেইলে সম্ভব হতো না।

আমি ভাবনায় পড়ে যাই। জার্মানি বড় দেশ। থাকি উত্তরের হ্যানোভারে। হুমায়ুন আজাদ কোন শহরে, কোথায় বা কেন এসেছেন, কিছুই জানা নেই। এদিক-ওদিক যোগাযোগ করতেই জানতে পারি জার্মানির লেখকদের সংগঠন জার্মানি পেন ক্লাব বা ডয়চে পেন সেনট্রুমের আমন্ত্রণে তিনি জার্মানিতে এসেছেন। তড়িঘড়ি করে পেন ক্লাবের ওয়েব সাইট থেকে ফোন নম্বর নিয়ে পরিচালিকা উরসুলা সাৎজারকে ফোন করি। তিনি আমার পরিচয় নিয়ে বলেন, কী জানতে চাও, তা লিখে মেইল করো। আমি তা–ই করি, একটু পরেই উরসুলা ফোন করে বলেন, দেখ আমি থাকি ড্রামসডার্ট শহরে, জার্মানি পেন ক্লাবের সদর দপ্তর এই শহরে হলেও সাধারণ সম্পাদক ইয়োহানো স্ট্রাসার থাকে মিউনিখ শহরে। আমি ফোন নম্বর দিচ্ছি। তুমি কথা বলো। এই সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও সরকার হুমায়ুন আজাদকে রক্ষা করতে পারছিল না বলেই আমরা তাঁকে আমন্ত্রণ জানাই। এটা ছিল আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাঁর এ মৃত্যুতে তোমাদের মতো আমরাও শোকাভিভূত।

ফুল দিয়ে বরণ

নিউজ নিয়ে আমার অস্থিরতা কিছুটা কাটে। ইয়োহানো স্ট্রাসারকে ফোন করলে বিমর্ষ কণ্ঠে তিনি জানান, ৮ আগস্ট রোববার হুমায়ুন আজাদ মিউনিখে এসে পৌঁছান। আমি নিজে বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে ফুলের তোড়া দিয়ে এই প্রতিভাবান বাংলাদেশি লেখককে বরণ করেছিলাম। তারপর তাঁকে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন নির্ধারিত অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে দিয়ে আসি। ওই দিন সন্ধ্যায় হুমায়ুন আজাদকে একটি রেস্টুরেন্টে সান্ধ্য ভোজনের আমন্ত্রণ জানাই। সান্ধ্য ভোজনের সময় হুমায়ুন আজাদ তাঁকে সম্মান দিয়ে এই বৃত্তি দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জার্মানিতে পৌঁছে ভালো বোধ করছেন বলেও জানান। বাংলাদেশে জঙ্গিদের উত্থানের কথাও বলেন। তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি মৌলবাদীদের অব্যাহত হুমকির কথা জানিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন। এসব হুমকির কারণে মানসিক চাপে থাকার কথাও হুমায়ুন আজাদ, স্ট্রাসারকে জানান। সান্ধ্য ভোজনের পর নিজ গাড়িতে করে হুমায়ুন আজাদকে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে দেন। ইয়োহানো স্ট্রাসার আমাকে বলেন, ‘হুমায়ুন আজাদ বাংলাদেশের একজন নির্ভীক লেখক। তার অসংখ্য অনুরাগী এই প্রিয় লেখকের আচমকা মৃত্যুতে বিমূঢ়। তুমি বিস্তৃত করে লিখলে প্রকৃত ঘটনা সবাই জানতে পারবে।’

শেষ নৈশভোজ

মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে নৈশভোজের বিবরণ দিয়ে ইয়োহানো স্ট্রাসার বলেন, হুমায়ুন আজাদের থাকার জন্য মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন একটি ফ্ল্যাট এক বছরের জন্য ভাড়া করে পেন ক্লাব। ছয় ফ্ল্যাটের অ্যাপার্টমেন্টের অন্য পাঁচটিতে শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীরা থাকতেন। পরিবারগুলোর সবাই সজ্জন এবং কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁরা লেখককে আপন করে নিয়েছিলেন। ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় বাড়িটির পেছনের আঙিনায় বারবিকিউ পার্টির আয়োজন হয়েছিল। সেখানে হুমায়ুন আজাদ আমন্ত্রিত ছিলেন। ওই ঘরোয়া পার্টিতে অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও উপস্থিত ছিলেন। তবে অন্য কোনো বাঙালি আমন্ত্রিত ছিলেন না। হুমায়ুন আজাদ সারাক্ষণ হাস্যোজ্জ্বল এবং উৎফুল্লভাবে আড্ডা দেন, জার্মান-বাংলাদেশ ঘিরে নানা বিষয়ে কথা বলেন। দিবাগত রাত ১২টার দিকে পার্টি শেষ হলে তিনি নিজের ফ্ল্যাটে ঘুমাতে যান।

স্ট্রাসার জানান, ‘পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে আমার ছেলের সঙ্গে হুমায়ুন আজাদের জার্মানিতে অবস্থানের জন্য কিছু দাপ্তরিক কাজ ছিল। আমার ছেলে হুমায়ুন আজাদের ফ্ল্যাটের দরজায় গিয়ে বারংবার টোকা দিয়ে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে অবশেষে অন্য চাবি দিয়ে দরজা খোলে। দরজা খুলেই লেখকের নিথর দেহ বিছানায় শোয়া অবস্থায় দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের খবর দেওয়া হলে, চিকিৎসকেরা এসে হুমায়ুন আজাদকে মৃত ঘোষণা করেন। ওনার চোখ ছিল মৃদু খোলা। দেহ স্বাভাবিক অবস্থায় বিছানায় পাওয়া যায়।’ ইয়োহানো স্ট্রাসার বলেন, ‘আমি খুব বিষণ্ন বোধ করছি, আর কিছু বলতে পারব না।’

খবরটি দ্রুত হাতে লিখে ফ্যাক্সে পাঠালে পরের দিন ১৪ আগস্ট ২০০৪, প্রথম পাতায় ছাপা হয়। প্রথম আলো থেকে আবার বলা হলো পাঠকের উৎসাহের কারণে আমি যেন আরও ফলোআপ নিউজ করি।

নিরাপত্তার স্বার্থেই গোপনীয়তা

হুমায়ুন আজাদের জার্মানিতে আসার বিষয়টি মিউনিখ এবং জার্মানিপ্রবাসী বাঙালিদের প্রায় কেউই জানতেন না। হুমায়ুন আজাদ ও তাঁর পরিবারের প্রতি মৌলবাদীদের হুমকির কথা জেনে নিরাপত্তার স্বার্থেই তাঁরা বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে বিভ্রান্তি ও তাঁর পরিবারকে দেরি করে মৃত্যুসংবাদ পৌঁছানোর ব্যাপারে ইয়োহানো স্ট্রাসার বলেছিলেন, খুবই অসহায় বোধ করায় এই দুঃসংবাদ হুমায়ুন আজাদের পরিবারকে সরাসরি জানাতে চাননি। তাই জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে জার্মান দূতাবাসকে তাঁর পরিবারকে সংবাদ দেওয়ার অনুরোধ করেন।

স্ট্রাসার আমাকে জানান, ১৩ আগস্ট ময়নাতদন্তের পর মিউনিখের ওস্ট ফ্রিডহোফ মরিচুয়ারিতে লাশ রাখা হয়েছে। দুঃখজনক যে এই দিন সন্ধ্যায় মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জার্মানির সংস্কৃতিমন্ত্রী ড. জুলিয়ান নিদা রুমলেনের দেওয়া পার্টিতে হুমায়ুন আজাদের যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে মিউনিখের শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে করে আমি তা সংগ্রহের চেষ্টা করলে ইয়োহানো স্ট্রাসার জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তাঁর স্ত্রী বা পরিবার ছাড়া আর কারও দেখার সুযোগ জার্মানিতে নেই। হুমায়ুন আজাদের ওপর যে মর্মান্তিক হামলা হয়েছিল, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এই মৃত্যু হতে পারে বলেও জানান। মিউনিখ পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে ড. হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলেছে। তবে বিস্তারিত জানতে সপ্তাহ তিনেক সময় লাগবে।

মরদেহ পাঠানো নিয়ে জটিলতা

মরদেহ পাঠাতে হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র, মৃত্যুর কারণ, পাসপোর্ট, কোন বাহনে মরদেহ পরিবহন হবে ইত্যাদি আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতার জন্য সময় লেগে যায়। এর মধ্যে জটিলতা তৈরি হয় মরদেহ পাঠানোর খরচ নিয়ে। উরসুলা সাৎজার পেন ক্লাবের আর্থিক অসংগতির বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জানান, সদস্যদের চাঁদার অর্থেই জার্মান পেন ক্লাবের তহবিল গঠিত। আর্থিক অসংগতির কারণে অনেক লেখক নিয়মিত চাঁদা পরিশোধ করেন না। পেন ক্লাবের পক্ষ থেকে এখানে যাঁদের বৃত্তি দেওয়া হয়, তার অর্থ সংস্থান হয় জার্মান সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প থেকে। তাই সেই খাত থেকে  ড. আজাদের মরদেহ পরিবহন করার তহবিল তাদের নেই। কিছুটা কাতর কণ্ঠে উরসুলা বলেন, ‘আশা করি এই নিয়ে আমাদের কেউ ভুল বুঝবেন না।’

পরদিন উরসুলা আমাকে ফোন করে বেশ রাগত স্বরে বলেন, পেন ক্লাবের অফিসে ইংরেজিতে লেখা একটি ফ্যাক্স এসেছে। তাতে অভিযোগ করেছে, আমাদের উদ্ধৃতি দিয়ে তুমি বানিয়ে বানিয়ে অনেক কিছু লিখছ। আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করি ফ্যাক্সটি কোথা থেকে এসেছে, আর কে এই অভিযোগ করেছে। উনি বলেন, ফ্যাক্সটি এসেছে, ডয়চে ভেলে বার্লিন অফিস থেকে। তবে বেনামে। আমি বলি, বিষয়টি একদম সঠিক নয়। চাইলে নিউজগুলো জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে দিতে পারি। উরসুলা বলেন, ‘না থাক, যেহেতু বেনামে তাই আমরা বিষয়টি আমলে নিচ্ছি না। ঘটনাটি দ্রুত আমি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান এবং ডয়চে ভেলের বন অফিসে বাংলা বিভাগের তৎকালীন প্রধান আবদুল্লা আল ফারুককে জানাই।’ মতিউর রহমান জানান, ঈর্ষান্বিত হয়ে অনেকে এসব করে। তবে আমি বিভ্রান্ত না হয়ে যেন নিউজ করতে থাকি।

২৩ আগস্ট সকালে মিউনিখের ওস্ট ফ্রিডহোফ মরিচুয়ারি কর্মী কার্ল মুলার আমাকে জানান, মরদেহ মিউনিখের সয়াবিঙ্গ হাসপাতালে বিশেষভাবে ধোয়া হয়েছে। এরপর তিনি লাশ কফিনবন্দী করার কাজ শেষ করেছেন। এরপর হুমায়ুন আজাদের মরদেহ মিউনিখ শহর প্রশাসনের লাশ বহনকারী কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছে। পরের দিন ২৪ আগস্ট, খুব ভোরে মিউনিখ থেকে রওনা হয়ে সকাল ৮টার দিকে ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরের আইস কার্গো কর্তৃপক্ষের কাছে কফিনটি হস্তান্তর করা হয় বলে আমাকে জানান মিউনিখ শহর কর্তৃপক্ষের লাশ রক্ষণ ও পরিবহন অফিসের কর্মকর্তা ব্রুকেম্যান। ফ্রাঙ্কফুর্টের প্রবাসী বাঙালিরা হুমায়ুন আজাদের কফিনে পুষ্পস্তবক দেওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেন। কিন্তু বিমানবন্দরে কার্গো কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তাজনিত কারণে তা নাকচ করে দেয়।

বিদায় জার্মানি

২৬ আগস্ট উরসুলা সাৎজারের কাছে ফোন করে জানতে পারি, ঢাকার জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য আফেয়ার্স নিকোলাই হারম্যান তাঁকে জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক মরদেহ রক্ষণ ও পরিবহনের খরচ জমা দিয়েছেন। বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০৫৮ ফ্লাইটযোগে মরদেহ ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে রওনা হবে। তিনি মরদেহ পাঠানো নিয়ে দীর্ঘ জটিলতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। ড. আজাদের সঙ্গে করে আনা ব্যক্তিগত সামগ্রীর বেশির ভাগই তাঁর ফ্ল্যাটে রয়ে গেছে এবং তা এখনো মিউনিখের গোয়েন্দা পুলিশ সিল করে রেখেছে। তাই মরদেহের সঙ্গে তাঁর জিনিসপত্র যাচ্ছে না।

ফ্রাঙ্কফুর্টে ট্রাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী শামসুল করিম আমার অনুরোধে কার্গো কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি নিয়ে কফিনের ছবি তুলতে সক্ষম হন। ২৭ আগস্ট সকালে কফিনের ছবিসহ প্রথম আলোর সামনের পাতায় খবর প্রকাশিত হয়। খবরের শিরোনাম ছিল ‘অবশেষে ১৮ দিন পর জার্মানি ছেড়ে গেলেন হুমায়ুন আজাদ।’ আর সেই দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় হুমায়ুন আজাদের মরদেহ ঢাকায় গিয়ে পৌঁছে।

সরাফ আহমেদ
প্রথম আলোর জার্মানি প্রতিনিধি
Sharaf.ahmed@gmx.net