বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক চৌরাস্তায় এসে পৌঁছেছে। ঠিক দিকে মোড় নিলে বিগত ১৫ বছরের দুঃশাসন ও অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের পথ বাদ দিয়ে আবারও সত্যিকার উন্নয়নের পথে ফিরে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু ভুল পদক্ষেপ নিলে, ভুল দিকে এগোলে দেশ ও জাতি আরও গভীর সমস্যায় পড়তে পারে। আমরা এখানে কীভাবে এলাম আর কেন এই বর্তমান পরিস্থিতি এত ভয়ানক?
গত ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনকে অনেকে দ্রুত উন্নয়নের মডেল হিসেবে ব্যাখ্যা করতেন। এ ব্যাখ্যা ছিল সম্পূর্ণ ভুল ও বিভ্রান্তিকর। শুধু যে আসল প্রবৃদ্ধির হার ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে কয়েক শতাংশ বাড়িয়ে বলা হতো, তা–ই নয়; নব্বইয়ের দশকের গণতান্ত্রিক আমলের প্রবৃদ্ধির তুলনায় পরবর্তী প্রবৃদ্ধির কিছু গুণগত পার্থক্য ছিল। নব্বইয়ের দশকে আমাদের প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি ছিল হাজার হাজার মাঝারি আকারের শিল্প ও ব্যবসা। রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার কারণে বহু ব্যবসায়ী সরকারি সমর্থন পেয়ে থাকতেন। তাঁদের দুর্নীতি সত্ত্বেও শাসক দল আর বিরোধী দলের প্রতিযোগিতাই ছিল কে বেশিসংখ্যক নাগরিক ও ব্যবসায়ীকে খুশি রাখতে পারে। ব্যাংকের ঋণ, গ্যাস ও অন্যান্য সুবিধার ভাগাভাগিতে একধরনের ভারসাম্য ছিল।
এ সবকিছু পাল্টে গেল ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর। খুব দ্রুতই কার্যকর নির্বাচনী ব্যবস্থাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ফেলল। জঙ্গিবাদ দমনের অজুহাত আর আওয়ামী বয়ান ব্যবহার করে সব বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে জাতীয় শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করা হলো। ১৫ বছর ধরে চলল বিকল্প প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে দেওয়ার রক্তাক্ত অভিযান। এ গল্প সবাই জানে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাও স্তিমিত হয়ে গেল। গুটিকয় বড় ব্যবসায়ী বা অলিগার্ক সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করল। তারা শুধু ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেল না, পুরো ব্যাংক নিয়ে চলে গেল। লাখো কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নিয়ে একেকজন জাঁকজমকের আন্তর্জাতিক জীবনযাপন শুরু করল। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের দারুণ উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু এটা উন্নয়ন ছিল না, এ ছিল সাধারণ মানুষের আমানত চুরি।
এখান থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব, কিন্তু সহজ নয়। বাংলাদেশের শত্রুরা চেষ্টা চালাবে এই সরকার যাতে ব্যর্থ হয় আর বাংলাদেশ একটা পরাধীন রাষ্ট্র হয়ে থাকে। অর্থনীতির অগ্রগতি উন্মুক্ত করতে হলে অলিগার্কদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা ভাঙতে হবে, আর একই সঙ্গে তারা যে অর্থনীতির গভীর ক্ষতি করেছে, তা মেরামত করতে হবে।
অলিগার্করা শুধু জ্বালানি আর বিদ্যুৎ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে শুরু করল না, তারা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সব চুক্তি বিনা প্রতিযোগিতায় চড়া দামে পেতে শুরু করল। মধ্যম ব্যবসায়ীরা চাপে পড়ল, বড় ব্যবসায়ীরা বারো বছরে বারো গুণ নয়, বারো শ গুণ বাড়ল। আদানির মতো বিদেশি ‘বন্ধু’ কোম্পানিগুলোও এই একচেটিয়া সুযোগ পেতে শুরু করল। বিরোধিতা করার, বঞ্চিত ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলার কারও ক্ষমতা আর ছিল না। যারা দূর থেকে দেখত, তারা মনে করত বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়িয়ে, সেতু বানিয়ে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। আসলে চড়া দামে অনেক অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কারণ, তার কোনো জ্বালানির ব্যবস্থা করা হয়নি। কিন্তু চড়া দামে আমাদের বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। আর যা কিনতে পারছি না, তার জন্য বিশাল ক্যাপাসিটি চার্জ আমরা দিয়ে যাচ্ছি। এটা তো উন্নয়ন নয়, এটা পরিকল্পিতভাবে করদাতা আর সাধারণ নাগরিকের টাকা চুরি। উন্নয়নমুখী বিদ্যুৎ সরবরাহ বা অবকাঠামো তৈরি করা যদি উদ্দেশ্য হতো তাহলে সেতু বা সুড়ঙ্গ আসলেই প্রয়োজন কি না, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি কি না, বিদ্যুতের চুক্তিবদ্ধ দাম দিয়ে আমাদের শিল্প আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকবে কি না, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি আছে কি না, এগুলো বিবেচনায় আনা হতো। বিবেচনায় আনা হয়নি; কারণ, উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। চড়া দামে তাড়াতাড়ি বেশি চুক্তি করে বাড়তি মুনাফা ভাগাভাগি করে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়াই ছিল উদ্দেশ্য।
আওয়ামী লীগ খুব ভালোভাবেই জানত, তাদের অসীম চুরির খেসারত একদিন না একদিন দিতেই হবে। জুন মাসে নরেন্দ্র মোদি যখন শেখ হাসিনাকে বলে দেন তিস্তা প্রকল্প বন্ধ করে দিতে, তার পরপরই চীন হাসিনাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। হাসিনা সরকার তখনই বুঝে গিয়েছিল বিফল পররাষ্ট্রনীতির কারণে বিদেশি ঋণনির্ভর চুরির অর্থনীতি আর টিকবে না। এই ভঙ্গুর অর্থনীতিতে তাঁকে টিকে থাকতে হলে একের পর এক অর্থনৈতিক সংকট হবে আর গণপ্রতিরোধ হবে। এগুলোকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। সে কারণেই জুলাই মাসে ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে এত বর্বরভাবে দমনের চেষ্টা করা হয়। যতই ন্যায্য দাবি হোক, এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো দাবিদাওয়া মানা হবে না, সবাইকে তা বুঝতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থান যদি ব্যর্থ হতো, স্বৈরাচার যদি টিকে যেত, আমাদের পরিণতি হতো জিম্বাবুয়ের মতো। ভঙ্গুর অর্থনীতিতে তারা তাদের একদলীয় শাসন দমননীতির মাধ্যমে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করত। আমরা বেঁচে গিয়েছি।
আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, কিন্তু চৌরাস্তায় আমাদের প্রথম পদক্ষেপগুলো ঠিক পথের দিকে হতে হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য আওয়ামী দুঃশাসন সম্পূর্ণরূপে দায়ী। যারা দেশে–বিদেশে বলার চেষ্টা করছে যে আওয়ামী শাসনে মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ সমস্যা, রপ্তানি ইত্যাদি এত খারাপ ছিল না, তাদের ভুল বা মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে সরকারের প্রচার বিভাগকে অতীতের অনিয়মের সঠিক তথ্য জনগণের সামনে বারবার হাজির করতে হবে। এই অসীম চুরি ও অনিয়ম কেন বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী, তা পুরো জাতিকে বুঝতে হবে। তারপরও যদি মিথ্যা প্রচার কেউ চালায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যাদের অসীম চুরি ও অনিয়মের কারণে পুরো অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের সম্মুখীন, তারা যদি এখন বলে, এটা অন্য কারও দোষ, এর চেয়ে ঘৃণ্য অপপ্রচার আর হতে পারে না।
এখান থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব, কিন্তু সহজ নয়। বাংলাদেশের শত্রুরা চেষ্টা চালাবে এই সরকার যাতে ব্যর্থ হয় আর বাংলাদেশ একটা পরাধীন রাষ্ট্র হয়ে থাকে। অর্থনীতির অগ্রগতি উন্মুক্ত করতে হলে অলিগার্কদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা ভাঙতে হবে, আর একই সঙ্গে তারা যে অর্থনীতির গভীর ক্ষতি করেছে, তা মেরামত করতে হবে। এ দুটি লক্ষ্যই অর্জন করতে হবে, আর দুটিই একই সঙ্গে অর্জন করা সম্ভব। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো থেকে যে পুকুরচুরি হয়েছে, এর কারণে আমাদের প্রায় অর্ধেক ব্যাংক নড়বড়ে অবস্থায়। দু-একটি বড় ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে, আমানত ফেরত না দিতে পারলে অর্থনীতি ও রাজনীতির অসীম ক্ষতি হবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। জনাদশেক সবচেয়ে বড় অলিগার্ক, যারা সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণের জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের ২০০৩ সালের অর্থ ঋণ আদালত আইনে খেলাপি ঋণ আদায়ের অনেক ক্ষমতা ব্যাংককে দেওয়া আছে। কিন্তু সাধারণত এই মামলাগুলো বছরের পর বছর চলে। অনেক ক্ষেত্রে কোনো টাকা পাওয়া যায় না। সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে একটা বিচার বিভাগীয় টিম গঠন করতে হবে। তারা পরামর্শ দেবে কীভাবে, কোন আইন ব্যবহার করে অতি দ্রুত এই জনাদশেক দুর্নীতির সম্রাট আর তাদের সংশ্লিষ্ট পরিবার–পরিজনের সব স্থাবর–অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে বিক্রি করা যায় বা সরকারি মালিকানায় নিয়ে আসা যায়। এর বিপরীতে সমমূল্যের টাকা অতি দ্রুত ব্যাংকগুলোকে দিতে হবে, যাতে কোনো ব্যাংক ধসে না পড়ে। এটা করতেই হবে এবং করতে পারলে অলিগার্করা যেভাবে চুরির অর্থের ওপর ভর করে পুরো অর্থনীতি ও রাজনীতির স্বাভাবিক প্রতিযোগিতাকে টুঁটি চেপে মেরে ফেলতে শুরু করেছিল, তারও অবসান শুরু হবে। এই জরুরি কাজ দ্রুত করার জন্য যদি বিচার বিভাগের আইনজীবী আর বিচারকদের বাড়তি প্রশিক্ষণ দিতে হয়, আইনের যদি কিছু জরুরি রদবদল করতে হয়, মামলার অগ্রাধিকারে যদি কিছু রদবদল করতে হয়, যা–ই করতে হয়, সরকারকে তা অনতিবিলম্বে করতে হবে। ব্যাংকের ধস কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না, ব্যাংকের চুরি করা টাকা আর সম্পদ কোনোভাবেই দুর্নীতির সম্রাটদের হাতে রেখে দেওয়া যাবে না। এ কাজে সরকার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশে অংশীদারমূলক অর্থনীতি বা রাজনীতি গড়ে উঠতে পারবে না।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলানো যাচ্ছে না। কারণ, বিগত অনির্বাচিত সরকার অনেকগুলো অবকাঠামোর চুক্তি করেছে, বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিক্ষেত্রে। সেগুলো টিকে থাকলে সরকার ও জনগণ দেউলিয়া হয়ে যাবে। এগুলোকে পুনর্মূল্যায়ন করে আন্তর্জাতিক মানের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যকর সমাধানে আসতে হবে। আমরা অবশ্যই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অন্যান্য অবকাঠামোর ন্যায্যমূল্য দিতে প্রস্তুত, কিন্তু বর্তমান চুক্তিগুলোর একটি বড় অংশ এই পরীক্ষায় পাস করে না। এসব ক্ষেত্রে দেশি ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যা করার, সরকারকে করতে হবে। প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী বাতিল বা সংশোধন করতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিতে হবে, বাংলাদেশ সরকার তাদের সঙ্গে কোনো অন্যায় করবে না, কিন্তু বাংলাদেশের এই নাজুক অবস্থায় তারা যদি অধৈর্যবশত কোনো অপ্রীতিকর খেলা খেলে, যেমন বিদ্যুতের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায়, সেটা ভালো চোখে দেখা হবে না এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তৃতীয়ত, পর্বতপ্রমাণ লুট করা টাকা, যা বিদেশে পাচার হয়েছে, তা ফেরত আনার প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করতে হবে। এটা শুধু আমাদের চুরি করা বৈদেশিক মুদ্রা ফিরিয়ে আনার জন্য নয়, অলিগার্কদের ক্ষমতাকেও সীমিত করার আরেকটি উপায়। এটা অত্যন্ত জরুরি যদি আমরা একটা স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে চুরির টাকা রাজনীতিকে পেছন থেকে নিয়ন্ত্রণ করবে না। বিদেশ থেকে চুরি করে টাকা ফেরত আনার একটা বড় সমস্যা হলো বাইরের দেশের সরকার অনেক সময় মনে করে, রাজনৈতিক কারণে এসব করা হচ্ছে। ইউনূস সরকারের একটা অসাধারণ গুণ হলো, বিশ্বের যেসব দেশে আমাদের চুরির টাকার সিংহভাগ গেছে, সেসব দেশে ইউনূসের প্রতি ব্যাপক সম্মান আছে। আমি পশ্চিমা কোনো সরকারি এজেন্সিকে বলতে শুনিনি যে হয়তো এখানে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব বা বিদ্বেষের কারণে বিশেষ ব্যক্তিদের টার্গেট করা হচ্ছে। তাই আমাদের বিলম্ব না করে এই আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়াগুলো শুরু করা উচিত।
চতুর্থত, স্বৈরাচারী সরকার আমাদের জিজ্ঞাসা না করে আমাদের নামে যেসব বিদেশি চুক্তি করে গেছে, এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্বার্থে নয়। এগুলো অন্য কোনো দেশ আর আওয়ামী লীগের স্বার্থে ছিল। অন্তত আমরা তা–ই ধারণা করে থাকি। না হলে প্রকাশ করা হয়নি কেন আর জনগণের সম্মতি চাওয়া হয়নি? এই চুক্তিগুলো পুরোপুরি প্রকাশ করা উচিত এবং প্রয়োজন হলে সংশোধন বা বাতিল করা উচিত।
আমার মনে হয়, এ চারটি কাজ যদি অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারে বা এমনভাবে শুরু করতে পারে, যা পরবর্তী সরকারের পক্ষে অবহেলা করা সম্ভব নয়, তাহলে আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভিত স্থাপন করতে পারব। সরকার এসব কটি কাজের গুরুত্ব স্বীকার করেছে, কিন্তু কাজগুলো আরও জোরেশোরে করতে হবে এবং বিভিন্ন টাস্কফোর্সকে নির্বাহী দায়িত্ব দিতে হবে। তারপর আরও অনেক সংস্কারের কাজ থাকবে, কিন্তু আগে এগুলো না করতে পারলে অলিগার্করা ও তাদের গোপন রাজনৈতিক সমর্থকেরা আমাদের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বিষাক্ত প্রভাব বিস্তার করতে থাকবে। নতুন উদ্যোক্তা, নতুন সেক্টর, সত্যিকারের উন্নয়ন—কিছুই সম্ভব হবে না।
যদি এই প্রাথমিক সংস্কারের কাজগুলো সম্পন্ন করা যায়, তারপর আরও গভীরে যেতে হবে। বাংলাদেশে কোনো সেক্টরই সঠিকভাবে কাজ করছে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাজার প্রতিযোগিতা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন—কোনোটাই ঠিকভাবে হচ্ছে না। কিন্তু এমন কোনো সমস্যা নেই, খোলামেলা আলাপ–আলোচনা ও পরীক্ষামূলক প্রস্তাবের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যার কোনো না কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না। এভাবেই অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত করা সম্ভব। কিন্তু এই খোলামেলা আলোচনা, প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি ও অর্থনীতি—কোনোটাই সম্ভব হবে না, যদি অতীতের অবৈধ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার ধারক ও বাহকেরা তাদের লুট করা সম্পদ ধরে রাখতে পারে, আর আমরা ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও সরকারের বাজেট–ঘাটতির রক্তক্ষরণ ঠেকাতে না পারি।
আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, কিন্তু চৌরাস্তায় আমাদের প্রথম পদক্ষেপগুলো ঠিক পথের দিকে হতে হবে।
* মুশতাক খান: সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতির অধ্যাপক