সমন্বিত বার্তাকক্ষের ধারণাটি নতুন। ২৪ ঘণ্টা অনলাইন সচল রাখা এবং ছাপা পত্রিকার কাজ একই বার্তাকক্ষ থেকে চালানো কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে নানা মত-দ্বিমত, তর্কবিতর্ক নিজেদের মধ্যেই ছিল।
দেশে গত মার্চের শুরুতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই ‘ওপর’ থেকে সিদ্ধান্ত এল—ঝুঁকি কমাতে হবে। করণীয় কী, ঝটপট জানিয়ে দেওয়া হলো। সিদ্ধান্তটি ছিল এ রকম—অফিসে সব কর্মীকে একসঙ্গে রাখা যাবে না।
আবেদন না করেই ছুটি পেয়ে গেলেন কিছু কর্মী। একটি অংশকে পাঠানো হলো ‘হোম অফিসে’। কিন্তু বাসায় থেকে কীভাবে অফিস করবেন, বিষয়টি তখনো অনেকের কাছে স্পষ্ট ছিল না। এর সবই করা হলো সতর্কতার অংশ হিসেবে, যাতে সবাইকে সুরক্ষিত রাখা যায়। তবে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়ার পরও করোনাকে ফাঁকি দেওয়া যায়নি। কয়েক দিনের মধ্যেই আমাদের একজন জ্যেষ্ঠ সহকর্মী আক্রান্ত হলেন। এর এক দিনের মাথায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিশে ২১ এপ্রিল থেকে শুরু হলো শতভাগ হোম অফিস।
করোনার দাপট কিছুটা কমে এলে সীমিত আকারে অফিস শুরু হয়। একই সঙ্গে শুরু হয় ইন্টিগ্রেটেড নিউজরুম বা সমন্বিত বার্তাকক্ষের প্রস্তুতি। যদিও করোনাকালের আগেই এ বিষয়ে নানা আলোচনা চলছিল আমাদের মধ্যে। কয়েকবার পরিকল্পনা করেও শুরু করা যায়নি। একে তো সমন্বিত বার্তাকক্ষের ধারণাটি আমাদের দেশে নতুন। ২৪ ঘণ্টা অনলাইন সংস্করণ সচল রাখা এবং ছাপা পত্রিকার কাজ একই বার্তাকক্ষ থেকে চালানো কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে নানা মত-দ্বিমত, তর্কবিতর্ক নিজেদের মধ্যেই ছিল। অবকাঠামো ও কারিগরি প্রস্তুতি এবং কর্মীদের মানসিকভাবে তৈরি হওয়ার কাজটাও সহজসাধ্য ছিল না।
সমন্বিত বার্তাকক্ষের আগে ছাপা পত্রিকা ও অনলাইনের কাজ হতো আলাদাভাবে, ভিন্ন ভিন্ন তলায়। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সেটা হচ্ছে একই তলায়, একই টিমের অধীন তিন শিফটে বা পালায়।
একজন হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া কোনো খবর লিখছেন, আরেকজন দ্রুত তা সম্পাদনা করে অনলাইনে আপ করার জন্য চূড়ান্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। সে উত্তেজনা তাঁর পাশে বসা আরেকজনকে সেভাবে আন্দোলিত করছে না। তিনি তখন ব্যস্ত, চিন্তিত ছাপা পত্রিকার জন্য প্রতিবেদন লেখার কাজে। আরেকজন সম্পাদনা করতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন হয়তো তথ্য আর বর্ণনা না মেলার কারণে। কেউবা পৃষ্ঠা পরিকল্পনার কাজ করছেন।
অবশ্য শতভাগ সমন্বিত বার্তাকক্ষ চালুর আগেই কিছু বিভাগে অনলাইন ও ছাপা পত্রিকার কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করছিলেন। করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে ৪ জানুয়ারি বিনোদন, ২২ জানুয়ারি ক্রীড়া ও ৮ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য বিভাগ সমন্বিত কাজ শুরু করে। এরপর ১৫ মার্চ বিশাল বাংলা, ১০ আগস্ট লাইফস্টাইল ও জীবনযাপন এবং সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর বার্তা বিভাগে (ডেস্ক, রিপোর্টিং ও অনলাইন) সমন্বিত কাজ শুরু হয়।
আগে এক অফিসে কাজ করলেও এক বিভাগের সঙ্গে আরেক বিভাগের কর্মীদের সব সময় দেখা হতো না। অনলাইনের কর্মীদের সঙ্গে ছাপা পত্রিকার কর্মীদের হয়তো দেখা হতো লিফটে, সিঁড়িতে বা চলার পথে। হোম অফিস শুরুর পর তো কেউ কাউকে দেখতে পায়নি। এখন সবাই একসঙ্গে এক ফ্লোরে বসে কাজ করছেন। অন্য অনেক কিছুর মতোই সমন্বিত বার্তাকক্ষ চালুর কাজটি প্রথম আলোই দেশে প্রথম চালু করল।
টিপু সুলতান: প্রথম আলোর হেড অব রিপোর্টিং