রুমানার প্রত্যয়
>
আইসিসির বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পেয়েছেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক রুমানা আহমেদ। ২০১৯ সালটা রাখতে চান আরও স্মরণীয় করে, শোনালেন সে প্রত্যয়ের কথা।
বছরের শেষ দিনে রুমানা আহমেদ যখন সুসংবাদটা পেলেন, তিনি ছুটি কাটাতে তখন খুলনায়। ফোনের পর ফোন, এসএমএসে একের পর এক অভিনন্দন বার্তা—বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক যে জায়গা করে নিয়েছেন আইসিসি ঘোষিত মেয়েদের বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি দলে।
২০১৮ সালটা বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটে ভীষণ স্মরণীয় হয়ে থাকবে একটি কারণেই, জুনে ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপ জেতা। আর সেই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল রুমানার। বাংলাদেশকে শিরোপা জেতানোর টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচে নেন ১০ উইকেট। ফাইনালে হন ম্যাচসেরা। রুমানা অবশ্য তাঁর লেগ স্পিন আর ব্যাটিং দুটি দিয়ে অনেক দিন ধরেই দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। মেয়েদের ওয়ানডেতে বাংলাদেশের একমাত্র হ্যাটট্রিকের গৌরবটা তাঁরই। গত বছর ২৪ টি-টোয়েন্টিতে ৩০ উইকেট আর ২২৯ রান করে বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে মেয়েদের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে উইকেট শিকারে রুমানা ছিলেন দুইয়ে, অলরাউন্ড পারফরম্যান্সেও তাঁকে রাখতে হবে সেরা তিনে। দুর্দান্ত এক বছর কাটানো বাংলাদেশের এ অলরাউন্ডারকে তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসির বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি দলে রাখতে খুব একটা ভাবতে হয়নি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থার বিচারক প্যানেলকে।
এমন অর্জনে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত রুমানা। তবে তিনি নাকি ভাবতে পারেননি আইসিসির বর্ষসেরা দলে জায়গা পাবেন। যেমনটি বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটে এটাই বোধ হয় প্রথম। আমার জীবনে নতুন এক অভিজ্ঞতা। ভীষণ ভালো লেগেছে। ২০১৮ সালটা আমার অনেক ভালো কেটেছে। তবে খুবই চমকে গিয়েছিলাম। এতটা প্রত্যাশা করিনি। নিজের কাছে অনেক বড় অর্জন মনে হয়েছে। ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি বলা যায়। এই দলে থাকাটা আরও সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।’
আইসিসির দলে জায়গা পেতে হয়তো বড় অবদান রেখেছে মেয়েদের এশিয়া কাপে রুমানার পারফরম্যান্স। যে টুর্নামেন্ট জিতে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়েছে। এশিয়া কাপের শিরোপা জয় বাংলাদেশকে এতটা আত্মবিশ্বাসী করে, কদিন পরই দুর্দান্ত প্রতাপে পেরিয়ে যায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বও। কিন্তু আসল মঞ্চেই আলো ছড়াতে পারেননি বাংলাদেশের মেয়েরা। নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে প্রতিটি ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে ভালো না করায় এ ভরাডুবি হলেও রুমানা বললেন, ব্যর্থতার পেছনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে, ‘বিশ্বকাপ বড় মঞ্চ। এ ধরনের টুর্নামেন্টে ভালো করতে হলে আগ থেকে জয়ের অভ্যাস থাকতে হবে। আর জয়ের অভ্যাস গড়তে প্রচুর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে হবে। সামনে যদি বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারি, বিশ্বকাপেও আমরা ভালো করতে পারব। এটা নিয়ে চিন্তিত নই। আমরা ভাবছি কতটা এগোতে পারছি।’
রুমানা যে এগোনোর কথা বললেন, ২০১৮ সালটা বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট আসলেই কতটা এগিয়েছে, প্রশ্নটা এসে যাচ্ছে। এটা ঠিক, এশিয়া কাপের মতো বড় সাফল্য এসেছে গত বছর। এত বড় সাফল্য বাংলাদেশ ক্রিকেটেই আগে কখনো আসেনি। তবু রুমানা কিছু বাস্তবতা মনে করিয়ে দিলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা এগিয়েছি। তবু বলব কিছু জায়গায় এখনো আমরা অনেক পিছিয়ে। বিশ্বকাপের পর দেখেন বেশির ভাগ দলই ব্যস্ত খেলা নিয়ে। আমরাই শুধু বসে আছি। ভারতীয় খেলোয়াড়েরা বিশ্বকাপ খেলে এসে ব্যস্ত ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে। এরপর তারা নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে। বাংলাদেশ সেখানে পরের সিরিজ কার বিপক্ষে খেলবে, সেটি জানি না। জানি একটা ঘরোয়া লিগ হবে। কিন্তু ঘরোয়া লিগ তো সব নয়। ভালো কিছু করতে হলে আমাদের বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে হবে।’
|
বিসিবি সূত্রে জানা গেল, আগামী মার্চে নেপালে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়া গেমস দিয়ে মেয়েরা ফিরবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। রুমানা মনে করেন, বছরে যদি চার-পাঁচটা সিরিজ-টুর্নামেন্টে খেলতে পারেন, সামনে আরও বড় সাফল্য আসবে তাঁদের হাত ধরে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততা কবে থেকে শুরু, সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও তিনি বসে নেই। ব্যক্তি উদ্যোগে ফিটনেস ও স্কিল নিয়ে কাজ করছেন। আইসিসির বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পেয়ে যে বেড়ে গেছে রুমানার স্বপ্নের পরিধি, ‘সব সময়ই চেষ্টা করি সফল হতে। দলকে সাফল্য এনে দিতে আমাকে ভালো খেলতেই হবে। ২০১৮ অনেক ভালো গেছে। এ বছর আরও ভালো খেলার চেষ্টা করব। ফিটনেস ও স্কিল নিয়ে কাজ করছি। পেছনে যেটা গেছে, গেছে। এবার ২০১৯ সালটা আরও স্মরণীয় করে রাখতে চাই। র্যাঙ্কিংয়ে আরও ওপরে উঠতে চাই, এক-দুইয়ে চলে আসতে চাই। ভালো খেললে র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি এমনিই হবে। আর সেটা হলে ভবিষ্যতে এমন সুখবর আরও পাওয়া যাবে।’
রুমানার ‘আরও সুখবর’ শুনতে অপেক্ষায় থাকবে বাংলাদেশ।