সোনার বাংলা খ্যাত দেশটি যখন ২০৪১ সালের মধ্যে ‘উন্নত বাংলাদেশ’ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে; ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে একটি উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে বিশ্বমণ্ডলে পরিচিত হতে চাচ্ছে; তখন সময় এসেছে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের তাদের নিজেদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও করণীয় সম্পর্কে জানার ও সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার।
বাংলাদেশের উন্নয়নের এই যাত্রায় দেশের তরুণ সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, দেশের তরুণ সমাজকে তার অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
তবে বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে তরুণদের এই যাত্রা খুব সহজ হবে না, যদি না তারা সঠিকভাবে নিজেদের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, ইচ্ছা, সম্ভাবনা ও সীমিত সম্পদের সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যম তৈরি করে। এই তরুণদের সামনেই আজ সফল উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের উন্নয়ন এবং বিশ্বের বিভিন্ন আর্থসামাজিক সমস্যাগুলো দূর করার সুযোগ রয়েছে। সুযোগ আছে দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নেতৃত্ব দেওয়ার।
এই সুযোগ কিন্তু শুধু বাংলাদেশের তরুণদের জন্যই প্রযোজ্য নয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সব তরুণই এই সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে ও করবে। আমাদের তরুণেরা ও যুবসমাজ কি ভবিষ্যতের সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত হচ্ছে? যদি তারা তৈরি না হয়, তাহলে ওই প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বিশ্বায়নই কিন্তু জীবনের পথ চলায় চাকরি হারানো, হতাশাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
সফল উদ্যোক্তা কিংবা দক্ষ ব্যবস্থাপক হতে হলে কীভাবে তৈরি হবে আমাদের তরুণেরা? আমি মনে করি, এই ৫টি পরামর্শ তাঁদের মনে রাখা জরুরি।
১. তরুণদের বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। এই স্বপ্ন হবে তার আবেগ, জীবনের উদ্দেশ্য ও ধৈর্যশীল আচরণের সমন্বয়ে গড়া।
২. আন্তবিষয়ক (ইন্টারডিসিপ্লিনারি) শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া জরুরি। সে যে বিষয়েই পড়াশোনা করুক, শিক্ষার অন্যান্য বিভাগের ব্যাপারেও জ্ঞান রাখা উচিত। বিজ্ঞানের ছাত্র যেমন ব্যবসায় ও মানবিকের বিষয়গুলোর ওপর জ্ঞান অর্জন করবে, ঠিক তেমনি ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্রেরও বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও মানবিক বিষয়গুলো জানা এবং নিজের জীবনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত।
৩. দক্ষতা অর্জন করার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। কারিগরি, ব্যবস্থাপকীয় ও আচরণগত গুণাবলির সমন্বয়ে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী ভাবনা থাকতে হবে।
৪. অভিজ্ঞতা অর্জন করার চেষ্টা খুবই জরুরি। দুই সেমিস্টারের মাঝখানের ছুটিতে ইন্টার্ন করা যেতে পারে, সহশিক্ষা কার্যক্রমও নিজেকে প্রস্তুত করার একটা উপায়।
৫. আজকের সময়ে প্রস্তুত হওয়ার জন্য যা দরকার, তা হলো—নেটওয়ার্কিং। অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে, কথা বলতে হবে, সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, পরামর্শ নিতে হবে। বিজ্ঞজনের কাছাকাছি থাকতে হবে।
সঠিক প্রস্তুতি শুধু তরুণদের নয়, আমাদের এই দেশকেই নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়। প্রথম আলোর ‘স্বপ্ন নিয়ে’ ক্রোড়পত্রের একটি অংশে এখন থেকে তরুণদের এই যাত্রায় প্রস্তুতি, করণীয় বিষয়গুলো ছাড়াও ব্যর্থদের উদাহরণ উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। আশা করছি দেশের অপার সম্ভাবনাময় তরুণেরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। হে তরুণ তুমি প্রস্তুত হও, কারণ তুমিই বাংলাদেশ। তোমার উদ্ভাবনী ও উদ্যোগী নেতৃত্বেই আমরা উন্নত বাংলাদেশ হব।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক এবং ইনোভেশন, ক্রিয়েটিভিটি ও এন্ট্রাপ্রেনারশিপ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়