কক্সবাজারের শতাধিক ইয়াবা কারবারি আজ শনিবার আত্মসমর্পণ করেছেন। টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বেলা ১১টার দিকে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ইয়াবা ও অস্ত্র তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ করা ১০২ জনের মধ্যে কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির চার ভাই ও ১২ আত্মীয়সহ ১৬ জন আছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, কক্সবাজারে সরকারের তালিকাভুক্ত বড় ইয়াবা কারবারি আছেন ৭৩ জন। তাঁদের ২৪ জন আত্মসমর্পণ করেছেন। এই ২৪ জনের মধ্যে আছেন সাবেক সাংসদ বদির চার ভাই আবদুল শুক্কুর, আবদুল আমিন, মো. শফিক ও মো. ফয়সাল, বদির ফুফাতো ভাই কামরুল ইসলাম রাসেল, ভাগনে সাহেদুর রহমান নিপুসহ ১৬ জন। এ ছাড়া আছেন টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে দিদার মিয়া, হ্নীলার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নুরুল হুদা ও জামাল হোসেন, টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর নুরুল বশর নুরশাদ, নারী কাউন্সিলর কহিনুর বেগমের স্বামী শাহ আলম, টেকনাফ সদর ইউপি সদস্য এনামুল হক, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দুই ভাই জিয়াউর রহমান ও আবদুর রহমান প্রমুখ। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ২ থেকে ১৬টি মামলা আছে।
৭৩ বড় ব্যবসায়ীর বাকি ৪৯ জনের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ছয়জন। বাদবাকি ৪৩ জনের কেউই আত্মসমর্পণ করেননি। এর মধ্যে তালিকার এক নম্বরে থাকা সাবেক সাংসদ নিজেও আত্মসমর্পণ করেননি। তালিকার দুই নম্বরে থাকা সাইফুল করিম বিদেশে অবস্থান করছেন।
প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সব কটি তালিকায় ‘পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে আবদুর রহমান বদি ও বদির ৫ ভাই, এক বোনসহ ২৬ জন নিকটাত্মীয়ের নাম আছে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এটি সরকারের অস্ত্র ও মাদকবিরোধী অভিযানের চলমান প্রক্রিয়া। যারা আত্মসমর্পণের সুযোগ নিয়েছেন, তাদের জন্য সেটি ভালো হয়েছে। যারা এই সুযোগ নেননি, তাদের ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হবে। কারণ, সরকার এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কেউ যদি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ইয়াবা ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নির্দেশ দেন।
অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারিসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মাদকের বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ মে থেকে চালানো অভিযানের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে ‘ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে’ প্রায় তিন শ ইয়াবা কারবারি নিহত হন। এর মধ্যে ইয়াবার জেলা বলে খ্যাত কক্সবাজারেই ৪৪ জন নিহত হন।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, মাদক নির্মূলে ইয়াবা কারবারিদের ‘স্বাভাবিক জীবনে’ ফিরে আসা এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে আত্মসমর্পণের জন্য ইয়াবা কারবারিদের কক্সবাজার পুলিশ লাইনসে জড়ো করা শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো বাহিনীর সম্পৃক্ততা নেই।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হবে। এরপর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হবে। তাঁদের সাধারণ ক্ষমার কোনো সুযোগ নেই। যা হবে প্রচলিত আইনেই হবে।