নবান্নে মাছের মেলা
সারি সারি দোকান। সেখানে থরে থরে সাজানো রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, ব্লাডকার্প বিগহেড, বাঘা আইড়, বোয়ালসহ হরেক রকমের মাছ। চলছে হাঁকডাক, দরদাম। এক কেজি থেকে শুরু করে ১৫ কেজি ওজনের মাছ আছে। লোকজনও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন এসব মাছ।
এটি কোনো বাজারের দৃশ্য নয়। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দিনব্যাপী মাছের এ মেলা বসেছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলী গ্রামে।
পঞ্জিকা অনুসারে আজ পয়লা অগ্রহায়ণ হওয়ায় এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব হিসেবে পালন করেন। এ উৎসবকে ঘিরেই প্রতিবছর মাছের মেলা বসে উথলীতে। শুধু উথলীতে নয়, রথবাড়ি, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, গরীবপুর, দেবীপুর, গুজিয়া, মেদনীপাড়া, বাকশন, রহবলসহ ১৫ থেকে ১৭ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে এ উৎসবের আয়োজন। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকেই দাওয়াত দেওয়া হয়।
বিশালাকৃতির একটি মাছ মাথার ওপর তুলে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বালুয়াহাট নগরপাড়া গ্রামের মাছ বিক্রেতা রঞ্জিত প্রামাণিক। তিনি ১৫ কেজি ওজনের বিগহেড মাছটির দাম হাঁকেন ১২ হাজার টাকা।
২০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিগহেড ও সিলভার কার্প মাছ বিক্রি হচ্ছে। রুই ও কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে। চিতল মাছ ওজনভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতা রঞ্জিত প্রামাণিক বলেন, মেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ১০০ মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্তত ৮ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন। মেলায় মাছ সরবরাহের জন্য সেখানে ১৫টি আড়ত খোলা হয়। সেসব আড়ত থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা পাইকারি দরে মাছ কিনে মেলায় খুচরা বিক্রি করেন।
শিবগঞ্জের আমতলী গ্রামের অপর মাছ বিক্রেতা আবদুল বারিক বলেন, নবান্ন উৎসবকে ঘিরেই তাঁরা মূলত বাড়ির আশপাশে বেশ কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষ করে। বড় বড় মাছ মেলায় বিক্রি করতে আনেন। তাঁরা ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতাকে চিন্তা করে মাছের দাম কম রাখেন। এলাকা মানুষদের সঙ্গে দামের ক্ষেত্রে তেমন একটা আপত্তি করেন না।
শিবগঞ্জ পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কে বাড়ি শিখা রানী সাহার। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাছের মেলায় এসেছেন তিনি। জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে এ মেলায় আসে তিনি। এবার তাঁর সঙ্গে এসেছেন হিলি থেকে আসা বড় ভাইয়ের স্ত্রী অপর্ণা কর্মকার। তাঁরা দুজন মিলে দরদাম করে ৬৫০ টাকা কেজি দরে ৪ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের একটি ‘গাঙ চিতল’ মাছ কিনেছেন ২ হাজার ৮০০ টাকায়। মাছে-ভাতে তাঁদের নবান্ন উৎসব পালন হবে।
উথলী গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি সেকেন্দার আলী জানান, প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলাটি যেমন মাছের জন্য বিখ্যাত, তেমনি মেলার দিন নতুন শাকসবজিতেও ভরপুর থাকে। এ কারণে আশপাশের লোকজন মেলায় ছুটে আসে।
শুধু মাছ আর সবজিই নয়, মেলার আবহের জন্য সেখানে নাগরদোলা, শিশু-কিশোরদের খেলনার দোকান বসেছে। সেই সঙ্গে মিষ্টান্ন ও দইয়ের একটি বড় বাজারও বসেছে মেলা চত্বরে।