টিকে থাকতে অ্যাপলের নতুন কৌশল
অনেক বছর ধরেই খ্যাতনামা ব্র্যান্ডগুলোর স্মার্টফোনের সঙ্গে বাণিজ্যিক লড়াই চলছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপলের। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংয়ের সঙ্গে অ্যাপলের আইফোনের হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা চলে। প্রতিযোগিতার এই বাজারে টিকে থাকতে এবার নতুন পথে হাঁটা শুরু করেছে অ্যাপল। মোবাইল ফোনসেট বিক্রির চেয়ে গ্রাহকদের উন্নতমানের মোবাইল সেবা দেওয়ার দিকেই এবার মনোনিবেশ করছে তারা।
ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে মোবাইল ফোনসেটের ক্রেতারা এখন খুব দ্রুতই নিজেদের পছন্দ পরিবর্তন করছেন। পছন্দের ফিচার পাওয়ার জন্য ব্র্যান্ড বদলাতেও দ্বিধা নেই তাদের। ফোনের বাজার তাই অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। অ্যাপলও নিজেদের ব্যবসার কৌশল নিয়ে তাই নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। সেই ভাবনা থেকেই এবার নতুন কৌশল অবলম্বন করার কথা ভাবছে খ্যাতনামা এই প্রতিষ্ঠানটি।
এত বছর ধরে মোবাইল হার্ডওয়্যারের ব্যবসার ওপরই জোর দিয়েছে অ্যাপল। কিন্তু এখন আর হার্ডওয়্যার নয়, বরং মোবাইল ফোনের সেবা বাড়ানোকেই প্রাধান্য দিতে চাইছে তারা। ফোনের গ্যারান্টির মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছে অ্যাপল। ভিডিও গেমের জন্য নতুন একটি বিশেষ স্টোরও খুলতে যাচ্ছে তারা।
লাইভমিন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিডিও স্ট্রিমিং ব্যবসায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান ডিজনি ও নেটফ্লিক্সকে টপকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্ট্রিমিং সার্ভিস হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে অ্যাপল। নতুন এই প্রকল্পের পেছনে ছয় বিলিয়ন ডলার খরচ করার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেবাটির নাম দেওয়া হয়েছে অ্যাপল টিভি প্লাস। আইফোন, ম্যাকবুক, আইপ্যাড কিংবা আইপড টাচের ক্রেতারা এক বছরের জন্য এই অ্যাপল টিভি প্লাস স্ট্রিমিং সেবা উপভোগ করতে পারবেন একদম বিনা খরচে। এক বছর পরেও যদি কেউ এই সেবা পেতে চান, তাহলে তাঁকে বছরে খরচ করতে হবে মাত্র পঁচ ডলার।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী ১২ মাসে চীনের বাইরে অন্তত ১৩ কোটি আইফোন বিক্রি করবে অ্যাপল। আইফোন ছাড়াও গত বছর প্রায় ছয় কোটি ম্যাকবুক ও আইপ্যাড বিক্রি করেছে এই কোম্পানি। আগামী ১২ মাসেও যদি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে অ্যাপল, তাহলে নেটফ্লিক্সের ১৬ কোটি গ্রাহককে ছাপিয়ে অ্যাপল টিভি প্লাসই হবে গ্রাহকসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস।
তবে এ ক্ষেত্রেও শঙ্কায় আছে অ্যাপল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোল্ডম্যান স্যাকসের অনুমানে অ্যাপলের শেয়ারমূল্য কমতে পারে প্রায় ২৬ শতাংশ। গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, নতুন সেবা পুরোদমে চালুর পর অ্যাপলের শেয়ারের মূল্য ১৮৭ মার্কিন ডলার থেকে কমে ১৬৫ মার্কিন ডলারে দাঁড়াতে পারে। এমন পূর্বানুমানের পরই গত শুক্রবার অ্যাপলের শেয়ারের দাম কমে গেছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ।
গোল্ডম্যান স্যাকসের এমন অনুমানের পর এক বিবৃতিতে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছে অ্যাপলও। বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘অ্যাপল টিভি প্লাসের সংযোজন আমাদের আর্থিক হিসাবে কোনো প্রভাব ফেলবে, এমনটা আমরা প্রত্যাশা করছি না।’ বিবৃতি দেওয়ার পর অবশ্য অ্যাপলের শেয়ারের দাম কিছুটা বেড়েছে।