ইংরেজি বর্ণমালা থেকে ‘আই’ তুলে এনে যেকোনো পণ্যের সামনে বসিয়ে দিলেই নাকি তার দাম বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এখানে আইফোন, আইপ্যাড, আইম্যাক দ্রষ্টব্য। তবে অ্যাপলের সে কৌশল নিশ্চয়ই পুরোনো হয়ে গেছে। তা না হলে আই বদলে ‘প্রো’ যোগ করা শুরু করবে কেন মার্কিন এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান?
এই শুক্রবার শেষ হয়েছে অ্যাপলের সফটওয়্যার নির্মাতাদের বার্ষিক সম্মেলন। পাঁচ দিনের সে সম্মেলনের প্রথম দিন, অর্থাৎ ৩ জুনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল বক্তৃতায় ‘প্রো স্ট্যান্ড’ নামের এক বস্তু দেখিয়ে অ্যাপল দাম হেঁকেছে ৯৯৯ ডলার। কাজ কী? সবার মনিটরে যে বস্তু আগে থেকেই থাকে—সমতলের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখার স্ট্যান্ড!
নতুন আরও যে দুটি পণ্যের ঘোষণা এসেছে, সে দুটিও ‘প্রো’ ঘরানার। নামে তো বটেই, কাজেও পেশাদারদের জন্য। একটি কম্পিউটারের সিস্টেম ইউনিট—ম্যাক প্রো। অপরটি প্রো ডিসপ্লে এক্সডিআর মডেলের মনিটর।
অ্যাপল ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপারস কনফারেন্স বা ডব্লিউডব্লিউডিসির ইতিহাস বেশ পুরোনো। প্রায় তিন দশকের। সে সময় অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) ছিল সবে একটি—ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের জন্য। এখন প্রতিটি যন্ত্রের আলাদা আলাদা ওএস।
আইফোনের ওএসের নতুন সংস্করণ ‘আইওএস ১৩’ আসছে। এদিকে আইপ্যাডের জন্য আইপ্যাডওএস নামে আলাদা ওএস এবং অ্যাপল ওয়াচের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ অ্যাপ স্টোরের ঘোষণা এসেছে। টুকটাক এমন ঘোষণা কম দেয়নি অ্যাপল। তবে কিনা বিশ্বকাপের মৌসুম চলছে। মূল খেলা মিস হয়ে গেলে যেমন হাইলাইটস দেখে নেওয়ার সুযোগ থাকে, তেমন সংক্ষেপে পুরো অনুষ্ঠানের কথা থাকছে এখানে।
নতুন নামে ম্যাকওএস
● ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্যাটালিনা আইল্যান্ডের নামানুসারে ম্যাকওএসের ১০.১৫ সংস্করণের নাম রাখা হয়েছে ক্যাটালিনা। এতে আইটিউনসের বদলে মিউজিক নামে অ্যাপ থাকবে। তা ছাড়া অ্যাপল টিভির সঙ্গে ডলবি অ্যাটমোস ও ডলবি ভিশন সমর্থন করবে।
● সাইডকার নামে নতুন একটি অ্যাপের মাধ্যমে আইপ্যাডকে কম্পিউটারের দ্বিতীয় মনিটর হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
● দূর থেকে স্মার্টফোন লক করা এবং খুঁজে বের করার যে সুবিধা আইফোনে ছিল, এবার তা ম্যাকেও আসছে।
সূত্র: সিনেট
আইপ্যাডের জন্য স্বতন্ত্র ওএস
● আইপ্যাডে একই পর্দায় একাধিক কাজ করার সুবিধা, অর্থাৎ মাল্টি-টাস্কিংয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে।
● সরাসরি ইউএসবি ড্রাইভ সমর্থন করবে এবং ক্যামেরা থেকে সরাসরি আইপ্যাডে ছবি সংগ্রহ করা যাবে।
● হোমস্ক্রিনে বিভিন্ন ধরনের উইজেট যোগ করা যাবে। মোটকথা বড় পর্দাকে কাজে লাগানোর জন্য, অনেকটা ল্যাপটপের মতো করে ব্যবহার করার জন্য অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে।
● আইপ্যাড থেকে কোনো ওয়েবসাইট দেখতে চাইলে ডেস্কটপ সংস্করণ দেখাবে, তবে আইপ্যাডের স্পর্শকাতর পর্দার জন্য তা বিশেষভাবে ঠিক করা থাকবে।
● যদিও ঘোষণা আসেনি, তবে অনেকে ধারণা করছেন, আইপ্যাডে শিগগির মাউস ব্যবহারের সুবিধা আসতে পারে।
আইওএস ১৩ সংস্করণে নতুন যা
● অবশেষে আইফোনে যুক্ত হচ্ছে ডার্ক মোড। পুরো অপারেটিং সিস্টেমে তো বটেই, অ্যাপলের অ্যাপগুলোতে সরাসরি ব্যবহার করা যাবে এই সুবিধা। অন্যান্য অ্যাপের নির্মাতারাও সুবিধাটি যোগ করতে পারবেন। বিশেষ করে অল্প আলোয় ডার্ক মোড বেশ কাজে দেবে বলে জানানো হয়েছে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু করার অপশনও থাকবে।
● ক্যামেরা ও ছবি সম্পাদনার অ্যাপ উন্নত করা হচ্ছে। আবার ভিডিও সম্পাদনার অ্যাপেও ছবি সম্পাদনার অনেক সুবিধা যেমন রোটেট, অতিরিক্ত অংশ কেটে দেওয়া (ক্রপ) ও বিশেষ আবহ (ফিল্টার) যোগ করার সুবিধা পাওয়া যাবে। ফটোজ অ্যাপে সব ছবি একবারে না দেখিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে শুধু সেরা ছবিগুলো বাছাই করে দেখাবে। আবার একই ধরনের একাধিক ছবি থাকলে তা থেকে দেখাবে একটি। উভয় ক্ষেত্রেই অবশ্য সব ছবি দেখার সুযোগ থাকবে।
● অনেক ওয়েবসাইট ও অ্যাপে সাইনইন উইথ গুগল বা ফেসবুকের মতো বোতাম দেখা যায়। এবার থেকে অ্যাপল আইডির মাধ্যমেও সাইনইন করার সুবিধা চালু হচ্ছে।
● ম্যাপস অ্যাপ উন্নত হচ্ছে। এখন মানচিত্রে যেকোনো জায়গা সম্পর্কে আগের চেয়ে বেশি তথ্য পাওয়া যাবে। দেখার ধরনেও কিছুটা ত্রিমাত্রিক ভাব আসবে।
● তারহীন ইয়ারফোন এয়ারপডসের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল সহকারী সিরি এসএমএস পড়ে শোনাবে আবার উত্তরও জানানো যাবে।
● মিমোজি, সাফারি, মেইল, নোটস ও রিমাইন্ডার অ্যাপ উন্নত হবে। সিরির কণ্ঠ আগের চেয়ে প্রাণবন্ত শোনাবে।
● আইফোন টেনএস, টেনএস ম্যাক্স, টেনআর, টেন, ৮, ৮ প্লাস, ৭, ৭ প্লাস, ৬এস, ৬এস প্লাস, এসই এবং সপ্তম প্রজন্মের আইপড টাচের জন্য পাওয়া যাবে আইওএস ১৩। আগের সংস্করণগুলোতে ব্যবহার করা যাবে না।
পেশাদারদের জন্য নতুন কম্পিউটার
● ৩২ ইঞ্চি এইচডিআর মনিটর ছাড়ার কথা আগেই ছড়িয়েছিল। তা-ই সত্যি হলো। প্রো ডিসপ্লে এক্সডিআর মনিটরে থাকছে সিক্স-কে রেটিনা ডিসপ্লে। কনট্রাস্ট রেশিও একের বিপরীতে ১০ লাখ। দাম শুরু হয়েছে ৪ হাজার ৯৯৯ ডলার থেকে।
● ডেস্কটপ কম্পিউটার ম্যাক প্রোতে সর্বোচ্চ ২৮ কোর ইনটেল জিয়ন প্রসেসর যুক্ত করা যাবে। ১২টি স্লটে র্যাম যোগ করা যাবে দেড় টেরাবাইট পর্যন্ত। নকশাতেও নতুনত্ব দেখা যাচ্ছে। দাম শুরু হয়েছে ৫ হাজার ৯৯৯ ডলার থেকে।
● হাজার ডলারের প্রো স্ট্যান্ডের কথা শুরুতেই বলেছি। এই ঘোষণার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। অনেকে ব্যঙ্গ করতেও ছাড়ছেন না।
স্মার্টঘড়ির জন্য আলাদা অ্যাপ স্টোর
● ভয়েস মেমো এবং ক্যালকুলেটর যুক্ত হচ্ছে অ্যাপল ওয়াচে।
● ওয়াচ ফেস নামে পরিচিত কিছু নতুন থিম আসছে।
● এখন থেকে অ্যাপল ওয়াচেই নতুন অ্যাপ খুঁজে বের করা, প্রয়োজনে কেনা এবং ইনস্টল করা যাবে।
● স্বাস্থ্যসেবাসংক্রান্ত কিছু অ্যাপ ঢেলে সাজানো হচ্ছে।