কর্তার জুয়ায় কোম্পানি লাটে!
জিওনি মোবাইলের কথা মনে আছে? চীনা মোবাইল ব্র্যান্ডটি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু জিওনি এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা (৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) দেনা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ৬৮৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জিওনির কাছে পাওনাদার। তারা এখন শেনঝেনভিত্তিক একটি আদালতে দেউলিয়া ঘোষণা করার জন্য আবেদন করেছে। আদালত ধার পরিশোধ দেউলিয়া অবস্থা (লিকুইডিশন ব্যাংকরাপ্সি) হিসেবে ওই আবেদন গ্রহণ করেছে বলে আইএএনএসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে জিওনি প্রতিষ্ঠাতার জুয়ার নেশা।
গত মাসে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের শেনঝেন ভিত্তিক জিওনি মোবাইলের প্রতিষ্ঠাতা লিউ লিরং স্বীকার করেছেন, তিনি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ নিয়ে জুয়া খেলেছেন। হংকংয়ে তালিকাভুক্ত ক্যাসিনো সাইপানে তিনি ওই জুয়া খেলেন।
জিওনির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিউ সিকিউরিটি টাইমসকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জিওনির মোট দেনা ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি যার মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে, ৬ হাজার কোটি সরবরাহকারীর কাছে আর আড়াই হাজার কোটি টাকা বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর কাছে দায় রয়েছে।
জুয়ায় কত টাকা হেরেছেন? জানতে চাইলে লিউ বলেন, ‘হাজার কোটি টাকার বেশি হবে।’ প্রকৃতপক্ষে এ অর্থ আরও বেশি হতে পারে।
গত বছরে চীনের স্মার্টফোনের বাজারে ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল জিওনি। কয়েক মাস ধরে বাকি টাকা না পাওয়ায় যন্ত্রাংশ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যা পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
জিএসএম এরেনার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লিউ দাবি করেছেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি মাসে এক হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে জিওনির। গত দুই বছর থেকে লোকসান দ্বিগুণ হয়েছে।
২০০২ সালে জিওনি প্রতিষ্ঠার পর থেকে চীন ও ভারতের বাজারে শীর্ষ সারির ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় জিওনি। ২০১৬ সালে চার কোটি ইউনিট ফোন বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ইলাইফ এস ৭ নামের ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন উন্মুক্ত করে বাংলাদেশের বাজারে যাত্রা শুরু করে চীনের স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জিওনি। জিওনির বৈশ্বিক বিপণন পরিচালক মি. ফ্র্যাঙ্ক বলেছিলেন, ২০১১ থেকে জিওনি ইতিমধ্যে ভারত, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ বেশ কিছু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী ৪২টি দেশের পর ৪৩ তম দেশ হিসেবে জিওনি বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে।
২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে দেড় লাখ ইউনিট ফোন বাজারে আনে জিওনি। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, বছর অনুযায়ী তথ্য হিসেবে করলে জিওনি স্মার্টফোন বাজারে আসার হার ৯০ শতাংশ কমেছে।
আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে গত বছরে ভারতের বাজার থেকে ব্যবসা গুটিয়েছে জিওনি। বাংলাদেশে ব্যবসা বন্ধ করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও এখন আর জিওনির কার্যক্রম চোখে পড়ে না।