কর্মীদের আপত্তির মুখে পেন্টাগনের সঙ্গে চুক্তি থেকে সরে এল গুগল

ম্যাভেন প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে গুগল।
ম্যাভেন প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে গুগল।


গুগলের একসময়ের স্লোগান ছিল ‘ডোন্ট বি ইভিল’। প্রতিষ্ঠানটির অনেক কর্মীই এ মন্ত্র মনে ধারণ করেন। প্রাণঘাতী উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে—এমন প্রযুক্তি বা সেবা উদ্ভাবনের পক্ষে নন অনেকেই। যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের এমনই একটি প্রকল্প নিয়ে নাখোশ প্রতিষ্ঠানটির একদল কর্মী। তাঁদের আশঙ্কা, পেন্টাগন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে, তা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাঁরা এই প্রকল্পে যুক্ত থাকতে চান না। কর্মীদের এ অসন্তোষের মুখে মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান গুগল পেন্টাগনের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকল্পটির শেষ করার চুক্তি আগামী বছর শেষ হচ্ছে। 

পেন্টাগনের যে প্রকল্প নিয়ে এত আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে তার নাম ম্যাভেন। গুগলের ক্লাউড ব্যবসা বিভাগ পেন্টাগনের সঙ্গে ম্যাভেন প্রকল্পে কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিল। ওই প্রকল্পের প্রধানের নাম ডাইয়ান গ্রিন। তিনি গুগলের কর্মীদের নিয়ে শুক্রবার সাপ্তাহিক আলোচনায় বসেন। সেখানেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রকল্প থেকে সরে আসার কথা বলেছেন গ্রিন। ওই আলোচনায় অংশ নেওয়া এক সূত্র নাম প্রকাশ না করে এ তথ্য দিয়েছেন।

বিশেষত ‘প্রজেক্ট ম্যাভেন’ নামের পেন্টাগনের এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য স্বনিয়ন্ত্রিত অস্ত্র তৈরি করা, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করে আঘাত হানতে সক্ষম। গুগলের সরবরাহ করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সামরিক ড্রোনে সংযুক্ত করতে চায় পেন্টাগন। গুগলের অনেক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সামরিক যোগসূত্র অস্বাভাবিক নয়। ম্যাভেন প্রকল্প নিয়ে গুগলের অভ্যন্তরীণ অসংগতির বিষয়টি এখন প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটের জন্য বড় সুযোগ। সেখানকার কোনো কর্মীর বাধা ছাড়াই পেন্টাগনের সঙ্গে চুক্তিতে রাজি তারা।

গুগল এখন পড়েছে মহা ঝামেলায়। তাদের ব্যবসার যে মন্ত্র, তার সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি যায় না। প্রতিষ্ঠানটির অনেক কারিগরি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, গুগলের আদর্শের সঙ্গে প্রতারণা করছে ইন্টারনেট কোম্পানিটি। তবে গুগলের ব্যবসামনস্ক কর্মীরা বলছেন, গুগলের ভেতর থেকেই এ ধরনের কাজ করতে সম্মত না হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা কমে যাবে।

সামরিক ও বেসামরিক প্রযুক্তি খাতবিষয়ক বিখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিন গিজমোডো জানায়, পেন্টাগনের ওই ম্যাভেন প্রকল্প থেকে সরে আসতে গুগলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মী পদত্যাগপত্র জমা দেন। এ ছাড়া আরও অনেক কর্মী পেন্টাগনের সঙ্গে কাজ না করার সরাসরি আহ্বান জানিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেন। দ্য উইক জানায়, এই সংখ্যা চার হাজারের কাছাকাছি।

ম্যাভেন প্রকল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ড্রোন তৈরি করতে চাইছে পেন্টাগন।
ম্যাভেন প্রকল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ড্রোন তৈরি করতে চাইছে পেন্টাগন।


গুগল ও পেন্টাগনের চুক্তির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানটির অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এর প্রভাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বলে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়। পেন্টাগনের সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক গবেষককে রাগিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি নিয়েছিল গুগল। এ কাজ তাঁরা করবেন না জানিয়ে দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র পরিকল্পনার কেন্দ্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযুক্ত করতে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা ও সমর্থন চান যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেফ ম্যাটিস। কিন্তু শুক্রবার গুগল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তাঁর পরিকল্পনায় বড় বাধা হতে পারে।

অবশ্য গুগল সরে এলে কী হবে? বিশ্লেষকেরা বলছেন, আরও অনেক প্রতিষ্ঠান পেন্টাগনের সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছে। অবশ্য প্রতিরক্ষা দপ্তরের কোনো মুখপাত্র এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।

ম্যাভেন প্রকল্প থেকে গুগলের আয়ও কম। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মী জানান, ম্যাভেন প্রকল্পের যে আয়, তা গুগলের সঙ্গে মোটেও মানানসই নয়। মাত্র ৯০ লাখ মার্কিন ডলার বা দেড় বছরে মাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার হতে পারে। গত বছরে ১ হাজার ১০০ কোটি আয় করা প্রতিষ্ঠানের জন্য যা সামান্যই।

তবে অন্যান্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা একে গুগলের বড় ধরনের আয়বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা বলে দেখছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে গুগলের এক কর্মী বলেছিলেন, ম্যাভেন প্রকল্প থেকে বছরে ২৫ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের আশা করছেন তাঁরা। এ ছাড়া ক্লাউডের ক্ষেত্রে আরও নানা প্রকল্প পাওয়ার সুযোগ আছে গুগলের জন্য।

কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ প্রতিরক্ষা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক চুক্তিগুলোর বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রকাশের সিদ্ধান্তের কথা বলেছে। শুক্রবারের সভায় প্রকল্প প্রধান গ্রিন বলেছেন, আগামী সপ্তাহে ওই নীতিমালা প্রকাশ করা হবে।