হ্যাকারদের থেকে রক্ষা পেতে ফেসবুকে কিছু তথ্য শেয়ার করবেন না
কোটি কোটি ব্যবহারকারীর কারণে বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর এই বিশ্বে অন্যতম প্রভাবশালী ও শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হলো ফেসবুক। তবে শক্তিশালী মাধ্যম হওয়ায় এর ব্যবহার নিয়েও আছে বিস্তর সমস্যা। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা-কাণ্ডের পর তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে ফেসবুক। অনেকেই নিজের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিচ্ছেন। এরই মধ্য অনেকেই নিজ প্রোফাইলের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন।
কী করছি, কী ভাবছি, তা ফেসবুকের মাধ্যমে যেমন বন্ধুদের জানিয়ে দিচ্ছি, তেমনি জেনে যাচ্ছে ফেসবুকও। এর ভালো দিকের সঙ্গে আছে নেতিবাচক দিকও। ফেসবুকে সংরক্ষিত এবং শেয়ার করা তথ্য আপনার ক্ষতির কারণও হতে পারে। যে তথ্যগুলো শেয়ার সম্পর্কে সতর্ক হওয়া উচিত, তার একটা ধারণা ব্যবহারকারীদের থাকা উচিত। এতে সহজেই বাঁচা যাবে হ্যাকারদের আক্রমণের কবল থেকে।
জন্মদিন গোপন রাখুন
আপনার জন্মতারিখ ও জন্মস্থানের মতো ব্যক্তিগত তথ্যগুলো ফেসবুকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে না দেওয়াই ভালো। উন্মুক্ত থাকলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য জানা সহজ হয়ে যায়। সাইবার দুর্বৃত্তদের কুনজর থেকে বাঁচতে একটু সতর্কতা আপনাকে অবলম্বন করাই উচিত।
ফোন নম্বর নয়
ব্যক্তিগত তথ্যগুলো ফেসবুকে দেওয়ার আগে কিছু কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত। ফেসবুকে ইউজারের নাম এবং ঠিকানা থেকে সহজেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য হাতে পেয়ে যান হ্যাকাররা। এর মধ্য মোবাইল নম্বর শেয়ার করলে তো আর রক্ষা নেই। ফোন কল পেতে পারেন হ্যাকারদের কাছ থেকেও।
বেশি বন্ধু পাতিও না
ফেসবুকে অনেকেই বেশি বন্ধু বানাতে পছন্দ করেন। সমস্যা বেশি বন্ধু পাতানো নিয়েও। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক রবিন ডানবার বলছেন, অনেকের সঙ্গে পরিচয় হতেই পারে। তবে একসঙ্গে ১৫০ জন বন্ধুর সঙ্গেই একজন মানুষ সম্পর্ক রজায় রাখাটা সংগত। ডানবার দেখেছেন, ফেসবুকে তাঁর বন্ধুদের মধ্যে ৪ দশমিক ১ শতাংশ সম্পূর্ণভাবে ডানবারের ওপর নির্ভরশীল। ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যবহারকারীর মুখ দেখা যায় কেবল তাঁদের প্রয়োজনের সময়।
রবিন ডানবার মনে করেন, এমন অপ্রয়োজনীয় বন্ধু এড়িয়ে চলাই ব্যবহারকারীদের জন্য ভালো।
সন্তান/পরিবারের ছবি
আপনার প্রিয় শিশুর ছবি পোস্ট করার আগে একটু চিন্তাভাবনা করা উচিত। বিশেষ করে আপনার সন্তান কোথায় যায়, কোন স্কুলে পড়ে প্রভৃতি স্পর্শকাতর তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করা উচিত নয়। শিশুর স্কুলের ইউনিফর্ম পরা ছবি দেওয়ার ক্ষেত্রেও সচেতন থাকুন। এ ব্যাপারে অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ভিক্টোরিয়া নাস বলেন, শিশুর ব্যাপারে সব তথ্য দেওয়া আইনসংগত নয়।
বাড়ির বিস্তারিত
বাড়ির নকশা বা পুরো ছবি কখনোই ফেসবুকে প্রকাশ করা ঠিক হবে না। এতে চোরের জন্য সুবিধা হবে। বাড়ির কোথায় কী আছে, তা যদি ফেসবুক থেকে ছবি দেখে চোর বুঝে নিতে পারে, তবে তার জন্য চুরি করা সহজ। এ ছাড়া বাড়ির নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নকশাসহ বাড়িঘরের অন্যান্য তথ্য ফেসবুকে দেওয়া উচিত হবে না।
লোকেশন সেটে বিপদ
ফেসবুকে লোকেশন সেট করে রাখা আরেক বিপদের কাজ। এ লোকেশন সেট করে রাখলেই আপনার অবস্থানের বিষয়ে জেনে যাচ্ছেন হ্যাকাররা। সে জায়গায় আপনার বাড়ি বা কর্মস্থান না–ও হতে পারে, কিন্তু আপনাকে খুঁজে বের করা হ্যাকারদের জন্য কষ্টকর হবে না। আর অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনের মোবাইলে লোকেশন সার্ভিস বন্ধ রাখাই শ্রেয়। কারণ অন্যরা জানবে আপনি এখন কোথায়।
টেকক্রান্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ৫০ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য অন্যর কাছে পৌঁছে গিয়েছিল।
বস সম্পর্কে অনুভূতি
ফেসবুকে কখনোই আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বস সম্পর্কে আপনার অনুভূতি প্রকাশ করবেন না। কারণ বসেরও তো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। তিনি আপনাকে ফেসবুকে নজরদারি করতে পারেন। ফলে বস সম্পর্কে কিছু লিখলে তিনি আপনার সম্পর্কে একটা ধারণাও পেয়ে যাবেন।
ট্যাগ লোকেশন বন্ধ করুন
ট্যাগ লোকেশন না দেওয়াই ভালো। কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন—এসব তথ্য এবং আপনার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তথ্য জানা থাকলে দুর্বৃত্তদের পক্ষে আপনার ওপর নজরদারি করা সহজ হতে পারে। ব্যক্তিগত তথ্য যতটা সম্ভব কম শেয়ার করুন। অনেকেই এটা খোঁজ করে আপনার ওপর নজরদারি করতে পারে।
ছুটির পরিকল্পনা ফেসবুকে নয়
লম্বা ছুটি পেলে অনেকেই কোথায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। আগামী মে মাসের শুরুতেই বেশ লম্বা ছুটিতে পড়ছে দেশ। এ সময়ে হয়তো অনেকেই বেড়াতে যাবেন। কিন্তু কোথায় বেড়াতে যাচ্ছেন, তা ফেসবুকে আগে কখনোই পোস্ট করে যাবেন না। আবার কোথাও বেড়াতে গিয়ে কত দিন থাকবেন, কোথায় কোথায় যাচ্ছেন, তা-ও পোস্টের মাধ্যমে সবাইকে জানাবেন না। কারণ, এ ধরনের তথ্য পোস্ট করলে দুর্বৃত্তদের জন্য আপনার ওপর নজরদারি করা সহজ হয়। চুরির পরিকল্পনা করা হতে পারে আপনার বাড়ি বা ফ্ল্যাটে।
সম্পর্কের তথ্য
ফেসবুকে ‘ইন এ রিলেশনশিপ’ এবং ‘সিঙ্গেল’—এগুলোতে বিস্তারিত তথ্য দেবেন না।
ক্রেডিট কার্ডের তথ্য
ফেসবুক থেকে অন্য কোনো পেজে ঢুকে কখনো কেনাকাটা করতে, কখনো আবার অন্য কোনো কাজে ক্রেডিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য দিয়ে দেবেন না। এই ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দিতে গিয়েই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
বোর্ডিং পাস তথ্য
কোথাও যাচ্ছেন, হয়তো বোর্ডিং পাসের তথ্য ফেসবুকে দিয়ে দিলেন। বোর্ডিং পাসে থাকা বারকোড ফেসবুকে কখনো পোস্ট করবেন না। মনে রাখবেন, বারকোড থেকেও তথ্য বের করা অনেক সহজ। বারকোডে দরকারি অনেক তথ্য থাকে। এটি পোস্ট করলে ব্যক্তিগত অনেক তথ্য বেহাতের আশঙ্কা আছে। দ্বিমাত্রিক বারকোড ও কিউআর কোডে প্রচুর তথ্য থাকে। এয়ারলাইন বোর্ডিং পাসে প্রিন্ট করা কোড দেখে ভবিষ্যৎ ভ্রমণ পরিকল্পনাসহ ভ্রমণবিষয়ক নানা তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে দুর্বৃত্তরা। বোর্ডিং পাসের তথ্য শেয়ার করা উচিত নয়। তথ্যসূত্র: ইনডিপেনডেন্ট।