>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো-
আমার লেখার অভিজ্ঞতা তেমন নেই। লেখা কেমন হবে বলতে পারছি না। মনও ভালো নেই। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। একটা অস্থিরতা কাজ করছে। কবে সব স্বাভাবিক হবে কে জানে!
এমনিতে একটা নির্দিষ্ট রুটিন মেনে জীবন চলে আমার। এখন ঘুম থেকে উঠে কী করব সেটাই ঠিক করতে পারছি না। প্রতিটি দিনই পরিকল্পনাহীন। তবে সন্ধ্যার পরের সময়টা মোটামুটি ভালো যায়। পরিবারের সবাই মিলে যা যা খেলা যায়, সেসব খেলেই সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকি। ওই ২-৩ ঘন্টা খুব ভালো যায়। এর একটা ভালো দিক, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটছে। আমাদের যৌথ পরিবার। সবাই এক সঙ্গে থাকি। সেজন্য একাকীত্বও নেই। অনেক ক্রিকেটারের পরিবার দুই-তিন জনের। তাদের হয়তো একাকীত্ব পেয়ে বসতে পারে। আমার ওই জিনিসটা আসে না।
গত আট-নয় বছরে এমন লম্বা ছুটি পেয়েছি বলে মনে পড়ে না। শব-ই-বরাতের দিন ভাইদের বলছিলাম, ২০১১ সালের পর এবার প্রথম বাসায় শব-ই-বরাত করছি। আর ২০১২ সালের পর এটাই প্রথম পরিবারের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ কাটানো। বিকেএসপিতে পহেলা বৈশাখে অনেক বড় আয়োজন করা হয়। সেজন্য ছুটি মিলত না। আর গত দুই-তিন বছর তো টানা খেলার মধ্যেই ছিলাম। সেদিক থেকে এবা বৈশাখ-ভাগ্যটা আমার ভালো বলা যায়। আমরা ক্রিকেটাররা তো সবসময় এটা পাই না।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো ছাড়া একটা জিনিস নিয়ম করে করা হচ্ছে। বিকেলে সপ্তাহে চারদিন ট্রেনার রিচার্ড স্টনিয়ের অনলাইনে এসে ফিটনেস ট্রেনিং করাচ্ছেন। নিয়ম করে এই একটা কাজই করা হচ্ছে। আর কোন কিছু নিয়মের মধ্যে নেই।
পুরোনো খেলাগুলো দেখা হচ্ছে অনেক। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ, দ্বিপাক্ষিক সিরিজের প্র্রতিটি ম্যাচ রেকর্ড করা আছে পেনড্রাইভে। সব ম্যাচ দেখা শেষ। কিছু কিছু ম্যাচ তো দুই-তিনবারও দেখা হয়েছে। নিজের ব্যাটিং নিয়ে কিছু নোট রাখছি। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচের সঙ্গে আলাপ করেছি। তিনি আমাকে গত দেড় বছর ধরে দেখছেন। আমার ব্যাটিং তাঁর খুব ভালো চেনা। এই ছুটিতে কী করা দরকার, এসব নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছি।
কিন্তু এসবে আর কতই বা সময় যায়! এরপরও তো অনেক সময় হাতে থাকে। একা থাকার সময়টা নিজের মস্তিষ্ক ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি। খুব বেশি চিন্তা করতে চাই না। ইউটিউবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ক্রিকেট ম্যাচ দেখি। মনকে ব্যস্ত রাখা আর কি। তবে আজ এটা দেখব, কাল ওটা, এমন পরিকল্পনা করে কিছু করা হয় না। পরিকল্পনা করে শুধু অস্ট্রেলিয়া দল নিয়ে 'দ্য টেস্ট' নামের একটি নতুন প্রামাণ্যচিত্র দেখেছি।
বাকি সময়টা সিনেমা দেখে কাটাচ্ছি। সিনেমা দেখা আমার খুব পছন্দের। রনবীর সিং পছন্দের নায়ক। পদ্মাবত, বাজীরাও মাস্তানী দেখেছি। টাইটানিক আমার পছন্দের সিনেমা, সেটাও আরেকবার দেখেছি। বাংলা সিনেমার মধ্যে বেলা শেষে, ছুটির ঘন্টা দেখা হয়েছে। আরও অনেক সিনেমাই দেখা হয়েছে আসলে।
আজ-কাল ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন ভাবতে পারি না। দুই-চার মিনিট চিন্তা করেই খেই হারিয়ে ফেলি। এমনিতে খেলা নিয়ে একটা পরিকল্পনা তো ছিলই। সেটা প্রিমিয়ার লিগ কেন্দ্রিক। সেসব এখন বাদ। আপাতত ভবিষ্যৎ বাদ দিয়ে শুধু বর্তমান নিয়ে ভাবছি। আজকের দিনটা কিভাবে পার করব, ভাবনায় শুধু এটাই আসে। মনে হচ্ছে যেন টেস্ট ম্যাচ চলছে। কিন্তু নিজে ব্যাটিং করছি না। আমি আউট হয়ে বসে আছি। এখন আরেকজনের ব্যাটিং দেখছি। আমার হাতে কিছু নেই। আরেকজনের ওপর সব ছেড়ে দিয়েছি।
ঘুমোতে যাই চিন্তাশুন্য মস্তিষ্ক নিয়ে। করোনাভাইরাসের এই অভিজ্ঞতা তো জীবনে একদমই নতুন। শুধু আমার জন্য নয়, সবার জন্যই। আশা করছি ঈদের মধ্যেই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এর বেশি চিন্তা করতে পারি না। এর বেশি ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায়।