এই ক্রিকেটারদের কেউ চিকিৎসক ছিলেন, কেউ স্বাস্থ্যকর্মী
>ইতিহাসের কয়েকজন বিখ্যাত ক্রিকেটার, যাঁরা একই সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসক। ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি চিকিৎসাসেবাটাও তাঁরা করেছেন, করছেন জীবনভর
সারা দুনিয়া এখন স্যালুট জানাচ্ছে চিকিৎসক আর সব স্বাস্থ্যকর্মীকে। সেটিই তো স্বাভাবিক, নিজেদের জীবন, নিজেদের পরিবারের জীবন বিপন্ন করে তাঁরাই যে এখন সম্মুখ সমরে লড়ছেন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। যে ভাইরাসের টিকা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি, নিজেদের বিচার-বুদ্ধি আর জ্ঞান দিয়ে সেটির সঙ্গে লড়েই সুস্থ করে তুলছেন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের। মানব–ইতিহাসের এই ক্রান্তিকালে সারা দুনিয়াতেই চিকিৎসকেরা এখন সবচেয়ে সম্মানীয়, সবচেয়ে আরাধ্য পেশাজীবী।
করোনার এই সময়টায় খেলাহীন সময় কাটছে সবার। ঘরবন্দী মানুষ সময় কাটাচ্ছেন পুরোনো খেলার স্মৃতিচারণ করেই। এই সময়টায় কয়েকজন চিকিৎসক-ক্রিকেটার সম্পর্কে জানলে কেমন হয়! কঠিন এই সময়ে এই লেখাটিই হতে পারে করোনার বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াইয়ে থাকা চিকিৎসক ও সব স্বাস্থ্যকর্মীর প্রতি এক বিশেষ অর্ঘ্য…
ডব্লিউ জি গ্রেস (ইংল্যান্ড)
ক্রিকেটের জনক তিনি। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ক্রিকেট ব্যক্তিত্বই ছিলেন একজন চিকিৎসক। ডব্লিউ জি গ্রেসকে তাঁর আশপাশের সবাই ‘ডক্টর’ বলেই সম্বোধন করত। তাঁর রহস্য এটিই। পুরোদস্তুর চিকিৎসা-সেবায় নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন তিনি। ক্রিকেট মাঠেই একবার প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের জীবন বাঁচিয়েছিলেন তাঁর চিকিৎসকের কারিশমা দিয়ে। পাঁচ দশকের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এমন দিন খুব কম গেছে, যখন তিনি রোগী দেখেননি।
জ্যাক ব্যারেট (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার। তিনি ১৮৯০ সালে অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে সুযোগ পেয়েছিলেন। সে সফরের লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ‘আদ্যন্ত ব্যাটিং’–এর কীর্তি গড়েন। ওপেনিংয়ে নেমে ২৮০ মিনিট ব্যাটিং করে তিনি করেছিলেন ৬৭। অস্ট্রেলিয়া অল আউট হয়েছিল ১৭৬ রানেই। প্রথম অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার হিসেবে আদ্যন্ত ব্যাটিংয়ের কৃতিত্ব ব্যারেটেরই। চিকিৎসক পরিবারে জন্ম নেওয়া এই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি নিয়মিতই চিকিৎসা-সেবা দিতেন সাধারণ মানুষকে।
আলী বাখার (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ষাটের দশকে চারটি টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিয়ে চারটিতেই জিতেছিলেন। আশির দশকে বর্ণবাদের কারণে ক্রিকেট দুনিয়ায় নিষিদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে যে বিদ্রোহী সিরিজের আয়োজন করেছিল, সেগুলোর সফর আয়োজক তিনি। নব্বইয়ের দশকে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট বোর্ডই কেবল নয়, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসিরও বড় কর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন। নিজের চিকিৎসক পরিচয়টা তিনি কখনোই আড়াল করেননি। চিরদিনই তিনি নামের আগে ‘ডক্টর’ উপাধি ব্যবহার করে গেছেন, এবং যাচ্ছেন।
জিওফ লসন (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ফাস্ট বোলার। পুরো নাম জিওফ্রে ফ্রান্সিস লসন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৪৬ টেস্ট খেলে তাঁর ১৮০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড খুব খারাপ নয়। ব্যাট হাতে খুব নামডাক না থাকলেও দলের বিপদে চারটি ফিফটি করার রেকর্ড আছে। পরবর্তী জীবনে তিনি কোচিং ক্যারিয়ার বেছে নিয়েছিলেন। পাকিস্তান দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর পড়াশোনাটা কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্রেই। তবে তিনি ছিলেন চোখের চিকিৎসক। নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি পড়াশোনা শেষ করেন।
ক্রিস হ্যারিস (নিউজিল্যান্ড)
নব্বইয়ের দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে দুর্দান্ত পারফরমার। ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন দারুণ। বোলিং করতেন ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করার। তাঁর ডানহাতি স্লো বোলিংকে সমীহ করতেন সবাই। কারণ যেকোনো সময় বিভ্রান্ত হয়ে তাতে ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত। ক্রিস হ্যারিস ঠিক চিকিৎসক ছিলেন না। তিনি বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে শল্য চিকিৎসার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিক্রি করতেন। এই কাজে তাঁর দক্ষতার কারণে অনেক সময় বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের ঘরে চিকিৎসকেরা তাঁকে ডেকে নিয়ে যেতেন। তিনি অনেক সময় তাদের হাতেকলমে সাহায্য করেছেন।