বাংলাদেশের ফুটবল উন্মাদনায় মুগ্ধ জুলিও সিজার

বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের সঙ্গে ফ্রেমবন্দী জুলিও সিজার। ছবি: ফিফাডটকম
বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের সঙ্গে ফ্রেমবন্দী জুলিও সিজার। ছবি: ফিফাডটকম
>

গত ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন ব্রাজিলের তারকা গোলরক্ষক জুলিও সিজার। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ উপলক্ষ্যে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের মতো এমন ফুটবলপাগল জাতি খুব কমই দেখেছেন জুলিও সিজার। ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন ব্রাজিলের এই তারকা গোলরক্ষক। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের বাংলাদেশ-বুরুন্ডি সেমিফাইনাল ম্যাচ দেখেছেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে। এর বাইরে বাংলাদেশের গোলরক্ষকদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন। দেশে ফিরে বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিফা ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের শুরুতেই উল্লেখ করেছেন তাঁর বিস্ময়ের কথা, ‘ফুটবল নিয়ে এমন উন্মাদনা আমি খুব কমই দেখেছি। এই দেশটা ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থকে দুই ভাগ। দুর্ভাগ্যক্রমে আমি ঢাকায় খুব বেশি সময় থাকতে পারিনি। কিন্তু এই শহরে পা দিয়ে ওদের আবেগের সেই জায়গাটা বুঝেছি।’ ঢাকার চিরপরিচিত যানজটে একটু বিরক্তই হয়েছেন সিজার। তবে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণটাকে চমৎকার বলে বর্ণনা করেছেন।

খেলাটার কিংবদন্তিদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে নিয়ে যায় ফিফা, সেটিরই অংশ হিসেবে সিজারের বাংলাদেশ ভ্রমণ। ৩৬ ঘন্টার সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে সভা করেছেন ২০১০ সালে হোসে মরিনহোর অধীনে লিগ-কাপ-চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘ত্রিমুকুট’ জেতা ইন্টার মিলানের গোলকিপার। ওই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সিজার বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। ফিফায় সাক্ষাৎকারে তা-ই বলেছেন ৪০ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান, ‘খুবই অল্প সময়ের জন্য তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওই সময়টুকুতেই তিনি আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলারদের গড়পড়তা শারীরিক অবস্থার কীভাবে উন্নতি করা যায়, তা নিয়ে।’

সিজার বাংলাদেশের জাতীয় দলের গোলরক্ষকদের সঙ্গে সময় কাটান বাফুফের কৃত্রিম টার্ফে। এরপর জাতীয় নারী দলের গোলরক্ষকদের নানা রকম টিপস দেন। অল্প সময়েই মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল নিয়ে, ‘ফুটবলের শক্তি দেখে আমি সত্যি অবাক হয়েছি। দেশের নানা প্রান্তে থাকা মেয়েরা স্বপ্ন দেখে একদিন তারা পেশাদার ফুটবলার হবে। সারা বিশ্বে যখন মেয়েরা ফুটবলে এগিয়ে যাচ্ছে তখন এই মেয়েদের ফুটবলের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখে আমি সত্যি আনন্দিত।’

বাংলাদেশ সফরে সব সময় সিজার দেখেছেন সবার মুখে হাসি। এই ব্যাপারটা তাঁকে দারুণ আলোড়িত করেছে, ‘আমি সেখানে গিয়ে যেটা শিখেছি সেটা হলো, শুধু শিশুরাই নয়, বাংলাদেশের সব মানুষ শত কষ্টের মাঝেও কখনো হাসি থামায় না। আমি যতটুকু সময় ছিলাম সারাক্ষণ চারপাশে হাসিমুখই দেখেছি।’

ফিফার কিংবদন্তি হিসেবে সারা বিশ্বে এভাবে ঘোরাটা দারুণ উপভোগ করছেন সিজার, ‘ফিফার কিংবদন্তির অংশ হতে পারাটা নিঃসন্দেহে আমার জন্য বিশাল সুযোগ। প্রথমত, এই ব্যাপারটা আমাকে পুরনো সতীর্থদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ করে দিচ্ছে, যারা আমার ব্যক্তিগত ইতিহাস গড়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এবং পুরোনো সোনালি স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে আমাকে।’

পর্তুগিজভাষী সিজার ততটা ভালো ইংরেজি বলতে পারেন না। বাংলাদেশ ভ্রমণের সময়ে এ নিয়ে একটু ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। তবে ফুটবলে যেমন নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা প্রতিনিয়ত ছিল তাঁর, এখানেও সিজার তেমনই, ‘আমি জানি আমার ইংরেজির আরও উন্নতি করতে হবে। চেষ্টা করছি। আমি অন্যের কথাগুলো বেশ বুঝতে পারি। কিন্তু ক্যামেরার সামনে এলে কেমন যেন গুলিয়ে ফেলি। আমি প্রতিদিনই আরও বেশি করে শেখার চেষ্টা করছি। এবং আমি জানি এটা আমার ভবিষ্যতের জন্য অনেক জরুরী।’