যে ৫ সেমিফাইনাল আজও শিহরণ জাগায়
দেখতে দেখতে শেষ হয়ে আসছে বিশ্বকাপ। শুধু আগামীকাল মঙ্গলবার ও এরপর বৃহস্পতিবার দুটি সেমিফাইনাল, তারপরেই ১৪ জুলাই ফাইনাল! শেষ চারের লড়াই শুরুর আগে ফিরে দেখা যাক বিশ্বকাপের ইতিহাসে স্মরণীয় পাঁচটি সেমিফাইনাল ম্যাচ—
অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা
বার্মিংহাম, ১৯৯৯
এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচটি সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ম্যাচগুলোরও একটি। কী ছিল না এই ম্যাচে! শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্থান-পতন আর নাটকে ভরা ওই ম্যাচ ছিল ১৯৯৯ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। ডোনাল্ড-পোলকের তোপে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারে ধস, এরপর স্টিভ ওয়াহ ও মাইকেল বেভানের ৯০ রানের জুটি। কিন্তু পোলকের এক ওভারে ওয়াহ আর টম মুডিকে হারিয়ে আবারও বিপদে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। বেভানের ৬৫ রানের ইনিংসে লড়াই করার পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া।
তাড়া করতে নেমে হার্শেল গিবসের ব্যাটে ভালো শুরু দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু ওয়ার্নের ঘূর্ণিতে মাঝে মাত্র ১৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। সেখান থেকে ৮৪ রানের জুটি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ের দিকে নিয়ে যান জ্যাক ক্যালিস ও জন্টি রোডস। পরে রোডসকে ফিরিয়ে আরও একবার ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু টুর্নামেন্ট–সেরা ল্যান্স ক্লুজনারের ব্যাটে ম্যাচে তারপরও ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল মাত্র ৯ রান। প্রথম দুই বলে চার মেরে ম্যাচটি টাই করে ফেলেছিলেন ক্লুজনার। কিন্তু চতুর্থ বলে পাগুলে এক দৌড়ে ডোনাল্ডের রানআউটের মধ্য দিয়ে ম্যাচটি হাতছাড়া হয় তাদের। সুপার সিক্সে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পাওয়ায় ফাইনালে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে পুড়তে হয় স্বপ্নভঙ্গের বেদনায়।
নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা
অকল্যান্ড, ২০১৫
বৃষ্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য অভিশাপ হয়ে এলেও ২০১৫ সেমিফাইনালে এসেছিল আশীর্বাদ হয়ে। ফাফ ডু প্লেসির ৮২, এবি ডি ভিলিয়ার্সের ৪৫ বলে ৬৫ আর ডেভিড মিলারের ১৮ বলে ৪৯ রানের ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৪৩ ওভারে করে ২৮১ রান। কিন্তু ডি–এল মেথডে নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯৮ রান। প্রথম ইনিংস শেষে তাই দক্ষিণ আফ্রিকা এগিয়ে ছিল। কিন্তু ম্যাককালামের ২৬ বলে ৫৯ দারুণ শুরু এনে দেয় নিউজিল্যান্ডকে। রানরেট ভালো থাকলেও ২২তম ওভারের মধ্যেই চতুর্থ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে গ্র্যান্ট এলিয়ট-কোরি অ্যান্ডারসন শতরানের জুটি গড়েন। অ্যান্ডারসন আউট হয়ে গেলেও ভরসা হয়ে ছিলেন এলিয়ট। ডেল স্টেইনের শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২ রান। ড্যানিয়েল ভেট্টোরির এক চার ও এলিয়টের এক ছয়ে এক বল হাতে রেখেই জয় পায় নিউজিল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
মোহালি, ১৯৯৬
সেমিফাইনালে ১৫ রানের মধ্যে মার্ক টেলর, রিকি পন্টিং আর ওয়াহ ভাইদের হারিয়ে খেলার শুরুতেই হার দেখছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু কার্টলি অ্যামব্রোস, ইয়ান বিশপ, কোর্টনি ওয়ালশদের সামলে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ান স্টুয়ার্ট ল ও মাইকেল বেভান, গড়েন ১৩৮ রানের জুটি। ল ৭২ ও বেভান ৬৯ রানে আউট হলেও উইকেটকিপার ইয়ান হিলি টেলএন্ডারদের নিয়ে ২০০ পার করেন দেন অস্ট্রেলিয়াকে। জবাব দিতে নেমে প্রথমে চন্দরপল-লারার ৬৮ ও পরে চন্দরপল-রিচি রিচার্ডসনের ৭৩ রানের জুটিতে জয়ের পথেই ছিল উইন্ডিজ। কিন্তু চন্দরপল ৮০ রানে আউট হতেই পথ হারায় উইন্ডিজ। এক প্রান্তে রিচি রিচার্ডসনকে নিঃসঙ্গ রেখে ওয়ার্নের ঘূর্ণি আর অস্ট্রেলিয়ার অদম্য মানসিকতার সামনে পড়ে একে একে ফিরে যান ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। রিচার্ডসন ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয়ে যায় জয় থেকে মাত্র ৬ রান দূরে থাকতে।
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড
অকল্যান্ড, ১৯৯২
১৯৯২ বিশ্বকাপে নিজেদের উদ্ভাবনী কৌশল আর মার্টিন ক্রোর অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ভর করে নিজেদের প্রথম সাত ম্যাচই জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচটি হারলেও সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডই ছিল ফেবারিট। প্রথম ইনিংসে মার্টিন ক্রোর ৯১ রানের ওপর ভর করে সেই সময়ের হিসাবে ২৬২ রানের বিশাল স্কোর করে নিউজিল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে প্রথমে রমিজ রাজার সঙ্গে ৫৪ আর পরে জাভেদ মিয়াঁদাদের সঙ্গে ৫০ রানের জুটি গড়লেও ৪৪ রান করতে ৯৩ বল খেলে ফেলেন ইমরান খান। একটু পর সেলিম মালিকও আউট হয়ে গেলে নিউজিল্যান্ডকেই জয়ের জন্য ফেবারিট মনে হচ্ছিল। সেই সময় ওভারপ্রতি ৮ রান করে রান তাড়া করা ছিল রীতিমতো অবিশ্বাস্য ব্যাপার। জীবনের সেরা ইনিংস খেলার জন্য এই সময়টিকেই বেছে নিলেন পাকিস্তানি এক তরুণ। ৩৭ বলে ৬০ রানের ইনিংসে বিশ্ব চিনল ইনজামাম-উল হককে। এক ওভার বাকি থাকতেই পাকিস্তানকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন জাভেদ মিয়াঁদাদ।
ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা
সিডনি, ১৯৯২
বর্ণবৈষম্যের নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর ওটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম বিশ্বকাপ। প্রথমবারই সেমিফাইনালে পৌঁছে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি
হয় তারা। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে গ্রায়েম হিকের ৮৩ রানের ইনিংসে ৪৫ ওভারে ২৫২ করে ইংল্যান্ড। তাড়া করতে নেমে ভালোই এগোচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, জন্টি রোডসের ৩৮ বলে ৪৩ রানের ইনিংসে জয়ের স্বপ্নও দেখছিল। কিন্তু একপর্যায়ে ৬ উইকেটে ২০৬ রান তুলে ফেলার পরই বৃষ্টি ভাগ্যবিপর্যয় ঘটায় দক্ষিণ আফ্রিকার। বৃষ্টির কারণে প্রথমে নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩ বলে ২২, ভেজা মাঠের কারণে তখন আবার কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। মাঝের এই বিরতির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস থেকে বল কমে যায় ১২টি কিন্তু রান কমে মাত্র দুই। স্কোরবোর্ডে অবশ্য দেখাচ্ছিল ১ বলে ২২ রান লাগবে দক্ষিণ আফ্রিকার জিততে, তবে আসলে লাগত ১ বলে ২০ রান। হাস্যকর এই বৃষ্টি আইনের ফাঁদে পড়েই কি না, ক্রিজে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান ডেভিড রিচার্ডসন শেষ বলটি মারার চেষ্টাই করেননি!