সাংসদ মাশরাফি কেমন, বললেন 'বাকের ভাই'
ব্রিস্টলের সাসপেনশন ব্রিজে এমন একটা ‘সাসপেন্স’ থাকবে, কে ভেবেছিল! বিষণ্ন বিকেলটা আরও বিষণ্ন করে তুলেছে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটা। মাশরাফিদের সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা কি অনিশ্চয়তার মেঘে ঢেকে গেল—ঘুরতে বেরিয়েও এ আলোচনাটাই ঘুরেফিরে এল বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মধ্যে। সাসপেনশন ব্রিজের এক প্রান্ত থেকে একজন হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘দ্রুত আসুন। দেখুন কে এসেছেন!’
এ বৃষ্টিভেজা বিকেলে ব্রিস্টল শহরের সাসপেনশন ব্র্রিজে আবার কে আসবেন? সেটি জানতে সামনে এসে দেখতে হবে—এখানে ছোট্ট একটা ‘সাসপেন্স’। পথচারীদের জন্য বরাদ্দ ব্রিজের সরু লেন ধরে এগোতেই খানিকটা চমকে যেতে হলো—‘বাকের ভাই’! ইংল্যান্ডে সপরিবারে বাংলাদেশের তিনটি ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। লন্ডনের দুটি দেখেছেন। ব্রিস্টলের ম্যাচ দেখা হয়নি, ফেরার আগে এই শহরের দর্শনীয় কিছু স্থান দেখে যদি সান্ত্বনা পাওয়া যায়!
অ্যাভন নদীর ওপর দৃষ্টিমোহন সেতুটা আসলে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুর মতো দেখতে। স্থাপত্য কিংবা প্রকৌশলগত দিক দিয়ে যদিও বিস্তর পার্থক্য। অ্যাভন নদীর দুই পাড় ব্রিস্টল শহরের ক্লিফটন আর উত্তর সমারসেটের লেই উডসকে সংযোগ ঘটিয়েছে এই সেতু।
১৮৬৪ সালে উন্মুক্ত সাসপেনশন ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৪১২ মিটার, নদীর পানি থেকে উচ্চতা ১০১ মিটার বা ৩৩১ ফিট। ব্রিস্টলে এলে ছবির মতো সুন্দর এ সাসপেনশন ব্রিজ না দেখে গেলে একটা অপূর্ণতাই থেকে যাবে—এ ভাবনায় কিনা বিকেলে ঘুরতে চলে এলেন আসাদুজ্জামান নূর। প্রকৃতি দেখে চোখের শান্তি মেলে বটে, কিন্তু যে উদ্দেশে এলেন ব্রিস্টলে, সেটি যে আর হলোই না। মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আসাদুজ্জামান নূর বলে যান, ‘বিষণ্ন একটা দিন। প্রকৃতি যেমন বিষণ্ন, তেমনি আমরা যারা বাংলাদেশ থেকে খেলা দেখতে এসেছি বা যারা প্রবাসী বাঙালি, সবাই বিষণ্ন। খেলাটা হয়নি। ম্যাচটা আমাদের খুব জরুরি ছিল। সবাই আশা করেছিলাম যে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর মতো সামর্থ্য আমাদের আছে। জিততে পারলে বেশ এগিয়ে যেতাম। আমাদের একটু সমস্যা হয়ে গেল। ঝুঁকি তৈরি হলো। আশা করি, আমাদের দল পরের ম্যাচে আরও ভালো খেলে বাংলাদেশকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যাব।’
কার খেলা বেশি ভালো লাগে, এ প্রশ্নে পারলে বাংলাদেশের দলের সবার নামই বলেন আসাদুজ্জামান নূর! তবে বিশেষ করে বললেন মাশরাফি বিন মুর্তজার কথা। দেশের প্রথিতযশা সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব, অভিনেতা, সাবেক মন্ত্রী আর আমজনতার ‘বাকের ভাই’ আসাদুজ্জামান নূর একজন সফল রাজনীতিকও। টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। গত ডিসেম্বরে সংসদে তিনি সহকর্মী হিসেবে পেয়েছেন মাশরাফিকে। খেলোয়াড় মাশরাফিকে বিশ্লেষণ করা হয়তো তাঁর পক্ষে করা কঠিন, তবে সাংসদ মাশরাফি কেমন করছেন, সেটি নিশ্চয়ই করতে পারবেন। এবং তা করলেনও, ‘সংসদ সদস্য হিসেবে ভবিষ্যতে তার ক্রিকেট খেলা কতটা সহজ হবে, জানি না। হয়তো কঠিনই হবে। তবে মাশরাফি আমাদের বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। অধিনায়ক হিসেবে, একজন খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে গেছে। সংসদে তাঁর মতো একজন সহযাত্রী পেয়ে নিশ্চয়ই গর্বিত। আর সংসদ সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করার সুযোগ সেভাবে এখনো সে পায়নি। আশা করি ক্রিকেটে যেমন সাফল্য দেখিয়েছে, সংসদ সদস্য হিসেবে তেমন সাফল্য পাবে সে।’
মাশরাফি অবশ্য এসব শুনে স্কুল-কলেজে প্রচলিত নোটিশটা মনে করিয়ে দিতে পারেন, ‘এখানে (পড়ুন বিশ্বকাপে) রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ!’