৩৩-এও কিশোর সাকিব!
>বিশ্বকাপের আগে ফিটনেস নিয়ে অনেক পরিশ্রম করেছেন সাকিব আল হাসান। তার ফল এসেছে হাতেহাতে। সাকিবকে দেখলে এখন ৩৩ বছরের যুবক নয়, সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ কলেজপড়ুয়া বলে বিভ্রম হবে!
এই সাকিব কোন সাকিব? সাকিব আল হাসানকে মাস চারেক আগে সর্বশেষ সামনে থেকে দেখেছেন, এমন কেউ এখন তাঁর সামনে পড়ে গেলে এমন প্রশ্নই সবার আগে মনে আসবে। এই সাকিব ৩৩ বছরের যুবক নন। বড়জোর সদ্য কৈশোর–উত্তীর্ণ কলেজপড়ুয়া কোনো ছাত্র হবেন।
ফিটনেসের ব্যাপারে সাকিব সব সময়ই অনেকের চেয়ে একটু বেশি সতর্ক। শরীরটাকে বিশ্রাম দিতে অনুশীলনে হয়তো অনেক সময় গা-ছাড়া দিয়েছেন। কিন্তু ফিটনেস ঠিক রাখার সঙ্গে কখনো আপস করেননি। এই বেলা কাচ্চি–বিরিয়ানি খেয়েছেন তো ওই বেলা ঝরিয়ে ফেলেছেন বাড়তি ক্যালরি। কিন্তু এই করেও সাকিব আগে যতটা ফিট ছিলেন, যতটা ছিপছিপে ছিলেন, এখন তাঁর অবয়ব তার চেয়েও ধারালো। এই কয় মাসে কত কেজি ওজন কমালেন, সেটি মুখ দিয়ে বের করা না গেলেও হাসিতে বুঝিয়ে দিলেন, এ তাঁর অনেক কঠিন পরিশ্রমের ফসল।
কাল ব্রিস্টলের টিম হোটেলে সাকিবকে দেখে সবার আগে মনে পড়ে গেল তাঁর গুরু মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের কাছ থেকে শোনা কথাটা। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে আইপিএল খেলতে গিয়ে এবার মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান সাকিব। তাও প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলতে অপেক্ষা করতে হয়েছে লম্বা সময়। কিন্তু অপ্রত্যাশিত এই অবসর তিনি শুয়ে-বসে আর শপিং করে কাটাননি। ফিটনেস ঠিক রাখতে করেছেন কঠোর পরিশ্রম। একপর্যায়ে দেশ থেকে উড়িয়ে নিয়ে যান কোচ সালাউদ্দিনকে। তাঁর কাছ থেকেই তখন জানা গিয়েছিল, ফিটনেস নিয়ে সাকিবের বাড়তি পরিশ্রম করার কথা। শরীরটাকে ঝরঝরে করতে, ব্যাট-বলে শাণ দিতে নিবিড় অনুশীলনের বৃত্তান্ত। সেই পরিশ্রম যে কতটা কাজে লেগেছে, সাকিবকে একবার সামনাসামনি না দেখলে কেউ এখন তা কল্পনাও করতে পারবেন না।
আর মাঠের সাকিবকে তো ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে সবাই-ই দেখছেন। তিন ম্যাচে দুই ফিফটি আর এক সেঞ্চুরিতে ২৬০ রান করে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি রান বাংলাদেশের সাকিবের। এমন দুর্দান্ত ফর্ম কীভাবে? এই প্রশ্নেও তিনি শুধু হাসেন। কিন্তু এই যে কঠোর পরিশ্রম, বয়স অর্ধেক কমিয়ে ফেলা, একের পর এক পারফরম করে যাওয়া, এসবের পেছনে কি আসলেই কাজ করছে বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ার লক্ষ্য?
টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সেদিন লন্ডনে এমন কিছুই বলেছিলেন। তাঁর কথাটা ছিল এ রকম, ‘সাকিব সম্ভবত বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হতে চায়।’ খেলার প্রতি তাঁর একাগ্রতা আর দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা দেখেই নাকি এটা মনে হয়েছে মাহমুদের। কিন্তু সাকিব কি আসলেই সে রকম কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিশ্বকাপে খেলছেন?
কাল এই প্রশ্নেও তাঁর মুখে ছড়িয়ে পড়ল রহস্যময় হাসি। তবে এবার মুখ খুললেন সাকিব, ‘এ রকম কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে আমি কোনো দিনই কিছু করিনি। এখনই বা কেন সেটা করব? আমার কাজ খেলা, ভালো খেলার চেষ্টা করা। আমি তাই করছি। অন্য কোনো কারণ নেই।’ অবশ্য সাকিবের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ টুর্নামেন্টে কত দূর যেতে পারে, সেটিরও একটা সম্পর্ক আছে। আরও ৬টি ম্যাচ তো লিগ পর্বে আছেই, বাংলাদেশ পরের ধাপে গেলে সাকিবেরও বড় কিছু করার সম্ভাবনা বাড়বে। আবার উল্টোভাবেও বলা যায়। বাংলাদেশের বিশ্বকাপদৌড়টা যে সাকিবের ভালো খেলার দিকেই তাকিয়ে! ব্যাটে-বলে তাঁর নিষ্প্রভ হয়ে যাওয়া মানে বাংলাদেশেরও বেশি বেশি ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা কমে যাওয়া।
বড় লক্ষ্যটা হয়তো সে কারণেই আপাতত মুখে আনতে চাচ্ছেন না। সযত্নে রেখে দিচ্ছেন মনের মণিকোঠায়। সাকিব জানেন, দলের ভালো খেলাটাই আগে, তারপর কারও ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ার স্বপ্ন। তবে একটা মাইলফলক ছুঁয়ে তিনি নিজেও দারুণ অনুপ্রাণিত। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওভালে খেলেছেন নিজের ২০০তম ওয়ানডে। তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মার্ক রামকে ফিরিয়ে গড়েছেন ওয়ানডেতে দ্রুততম ২৫০ উইকেট ও ৫ হাজার রান করার কীর্তি। ইংলিশ সামারেও ক্যারিয়ারে বয়ে যাওয়া এই বসন্তবাতাস কতটা উপভোগ করছেন, সেটি বোঝা গেল সাকিবের কথাতেই, ‘একজন ক্রিকেটারের জন্য দেশের হয়ে ২০০টি ওয়ানডে খেলা অবশ্যই আনন্দের। আমিও এটা উপভোগ করছি। ক্যারিয়ারের বাকিটা সময়ও আমি দেশের জন্য এভাবেই পারফরম করে যেতে চাই।’
সাকিব বলেই কথাটাতে আস্থা রাখা যায়। সময়কে কীভাবে ধরে রাখতে হয়, সেটি তাঁর চেয়ে ভালো আর কে জানে! ৩৩-এও তাই সাকিবের মুখে খুঁজে পাওয়া যায় কৈশোরের ছবি।