আঙুল ও কবজির রহস্য মেলে ধরলেন সাকিব
>সাকিব আল হাসান, আঙুলের মারপ্যাঁচের বাঁহাতি স্পিন তাঁকে এতটা ওপরে তুলে এনেছে। ব্যাটিংটা তো আছেই, তবে সাকিবের স্পিনের বড় শক্তি সম্ভবত তাঁর বুদ্ধিমত্তা। ম্যাচের পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে পড়তে পারা। এই টি-টোয়েন্টির যুগে স্পিনাররা কী কৌশলে টিকে আছেন, সামনে তাঁদের কী চ্যালেঞ্জ...এর উত্তর জানতে সাকিবের মুখোমুখি হয়েছিল ইএসপিএনক্রিকইনফো
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টিতে একজন স্পিনারের জীবন কেমন?
সাকিব: কঠিন। বিশেষ করে আঙুল নির্ভর (ফিঙ্গার স্পিনার) স্পিনারদের জন্য খুবই কঠিন। কবজির স্পিনারদের সুবিধা একটু বেশি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, সব মাঠ অতটা বড়ও না। সংস্করণটা এমন যে ব্যাটসম্যান সব সময় আক্রমণই করবে। এই সংস্করণে টিকে থাকা কিংবা ভালো করতে আপনার সব সময় প্রস্তুতি থাকতে হবে।
প্রশ্ন: কবজির স্পিনারদের সুবিধা প্রসঙ্গটি আরেকটু ব্যাখ্যা করবেন?
সাকিব: কারণ এটা কিছুটা অপ্রথাগত। পাঁচ-দশ বছর আগেও ওরা সংখ্যায় অনেক কম ছিল। শেন ওয়ার্ন, অনিল কুম্বলে ছাড়া আর খুব বেশি নাম মনে পড়ে না। অর্থাৎ লেগ স্পিনারদের মুখোমুখি হতে কেউ অভ্যস্ত ছিল না। খেলোয়াড়দের কাছে এটা নতুন। তবে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে লেগ স্পিনারদের পরিকল্পনা পাল্টাতেই হবে।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় এটা দ্রুতই ঘটবে?
সাকিব: তিন-চার বছরের মধ্যে হয়ে যাবে। কারণ এখন দলগুলোতে একটা-দুটো লেগ স্পিনার থাকেই। ব্যাটসম্যানেরা তাঁদের ঠিকমতো খেলার চেষ্টা করছে। ভালো করার চেষ্টা করছে। একবার ভালো করা শুরু হলে আরও ভালো পরিকল্পনা নিয়ে আসতে হবে লেগ স্পিনারদের।
প্রশ্ন: আঙুলের স্পিনার (ফিঙ্গার) যে বল ঘোরানোর চেষ্টা করে তাঁকে সমর্থন দিলে উইকেট পাবে, হরভজন সিং এমন মনে করেন। আপনি কী মনে করেন?
সাকিব: উইকেট পেতে একজন আঙুলের স্পিনারকে বল ঘোরাতে হয়। কিন্তু সে জন্য বলটা একটু উঁচু থেকে ঝুলিয়ে (ফ্লাইট) ছাড়তে হয়। এটা কিন্তু একদিক থেকে ঝুঁকিও। কিন্তু উইকেট পেতে হলে বল ঘোরাতে হবে।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টিতে এটা (বল ঘোরানো) তো কঠিন?
সাকিব: টার্নিং উইকেট না হলে অবশ্যই। কারণ তখন (টার্নিং উইকেট না হলে) আপনাকে টিকে থাকার লড়াই করতে হবে-যেন বাউন্ডারি না মারতে পারে-ব্যাটসম্যানের প্যাড বরাবর কিংবা একটু বাইরে ইয়র্কার মারতে হবে অথবা অন্য কিছু চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন: তাহলে টি-টোয়েন্টিতে বোলিংয়ের প্রস্তুতি নেন কীভাবে?
সাকিব: পরিস্থিতি ও কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে। এগুলো মানানসই হলে ভিন্ন পরিকল্পনা করি। অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে পরিস্থিতি (ম্যাচের) বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দলের জন্য উইকেট নেওয়ার দরকার হলে সেই চেষ্টা করি। (ব্যাটসম্যান) আটকে রাখার চেষ্টাও করি। পেসার ও কবজির স্পিনারদের অনেক বৈচিত্র্য আছে। রশিদ খান তো পাঁচ ধরনের লেগব্রেক করতে পারে। আঙুলের স্পিনারেরাও শুধু বলে ফ্লাইট দিয়ে অনেক বৈচিত্র্য আনতে পারে।
আঙুলের স্পিনারেরা ইদানীং আরও কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করছে। লেগব্রেক, ক্যারম বল, একটু জোরে করা কিংবা বাইরে ইয়র্কার মারা। এমন অনেক কিছুই আছে। শুধু ব্যাটসম্যানের মানসিকতার সঙ্গে খেলতে হয়।
প্রশ্ন: ক্রিজের অ্যাঙ্গেল পাল্টানো তো আঙুলের স্পিনারের বেশ পুরোনো কৌশল?
সাকিব: হ্যাঁ। কিছু পরিবর্তন আছে যা আপনি চাইলে প্রতি বলেই করতে পারবেন। তবে এটা বোলারের ওপর নির্ভর করে। কিছু বোলার একই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং তাঁরা সফলও হচ্ছে। কিছু আবার অনেক কিছু চেষ্টা করে এবং এভাবেই সফল হচ্ছে।
প্রশ্ন: ব্যাটসম্যান হিসেবে এই সংস্করণে তো নির্দিষ্ট কোনো স্পিনার কিংবা পেসারকে আক্রমণ করা আপনার জন্য সহজ?
সাকিব: ঠিক উল্টোটা ভাবলে এটা কঠিনও। আইপিএলে যাঁরা খেলছে সবাই দক্ষ। তাই নির্দিষ্ট কোনো বোলারকে বেছে নেওয়া কঠিন। এটা কন্ডিশন, দলের পরিস্থিতি এবং কোন জায়গায় আপনি ভালো করতে চান তার ওপর নির্ভর করে এবং এরপরই কাউকে বাছতে হয়। এটাই আদর্শ পথ।