আধা ডজন ব্যালন ডি'অর হয়ে যাবে মেসির!
>লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দুজনেরই ব্যালন ডি’অরের সংখ্যা সমান। তবে রোনালদোর স্বদেশি কোচ হোসে মরিনহো মনে করেন, আবারও মেসি পেরিয়ে যেতে চলেছেন রোনালদোকে
ষষ্ঠ ব্যালন ডি’অর আর লিওনেল মেসির মধ্যে এবার বাধা হয়ে দাঁড়ানোর মতো কি কেউ আছে?
গতবার স্প্যানিশ লিগ ও কাপ জিতলেও ব্যালন ডি’অরে পঞ্চম হয়েছিলেন মেসি। বিশ্বকাপের বছর ছিল, যা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে মেসির। চ্যাম্পিয়নস লিগেও ভালো করেননি মোটেও। সব মিলিয়ে তাঁর পঞ্চম হওয়া চমক হলেও কারণটা বোঝা যাচ্ছিল।
কিন্তু এবার? এই ৩১ বছর বয়সে এসেও দুর্ধর্ষ ফর্মে বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। সব মিলিয়ে ৪২ ম্যাচে ৪৫ গোল, স্প্যানিশ লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা, বার্সেলোনাও নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয় ত্রিমুকুটের দিকে এগোচ্ছে। অন্যদিকে ব্যালন ডি’অর মঞ্চে মেসির প্রতিদ্বন্দ্বীরা এবার আড়ালে। শেষ মুহূর্তে চমকে দেওয়া কিছু না ঘটলে এবার তাঁর হাতেই পুরস্কারটা যাচ্ছে, সাধারণ্যে অনুমান এমনই। অ-সাধারণ্যেও। হোসে মরিনহোকে তো আর সাধারণ কেউ ধরা যায় না! রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ইন্টার মিলানের সাবেক কোচও এবার মেসির হাতেই দেখছেন ব্যালন ডি’অর।
সেটির কারণ? ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যে এবার আর গত তিন মৌসুমের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলেন না! রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে গেছে, নতুন ক্লাব, নতুন দেশে রোনালদোও একটু ম্রিয়মাণ। চ্যাম্পিয়নস লিগে বাদ পড়েছেন কোয়ার্টার ফাইনালে। মেসি-রোনালদোর ১০ বছরের ‘দ্বৈতাধিপত্য’ ভেঙে গত মৌসুমে যিনি ফিফা বর্ষসেরা ও ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন, সেই লুকা মদরিচ ও তাঁর রিয়ালের এই মৌসুম কেটেছে দুঃস্বপ্নের মতো।
এর বাইরে যে নামগুলো আলোচনায় থাকে, তাঁদের মধ্যে নেইমার চোট নিয়ে মাঠের বাইরে। কিলিয়ান এমবাপ্পে গোল পেয়েছেন, কিন্তু সংখ্যায় মেসির চেয়ে অনেক পিছিয়ে (সব মিলিয়ে ৩৩টি)। তাঁর পিএসজির মৌসুমটাও ভালো কাটছে বলা যাবে না মোটেও। লিভারপুল লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ভার্জিল ফন ডাইক, সাদিও মানের নাম হয়তো আলোচনায় আসবে। ম্যানচেস্টার সিটি ইংল্যান্ডের তিন শিরোপার সব কটি জিতলেও অবশ্য রাহিম স্টার্লিংয়ের নাম কতটা আলোচনায় আসবে, তর্কসাপেক্ষ।
সে কারণেই কি না, মরিনহোও মেসি ছাড়া আর কাউকে দেখছেন না। রুশ চ্যানেল রাশিয়া টুডেতে পর্তুগিজ কোচের কথা, ‘মেসির অবিশ্বাস্য একটা মৌসুম কাটছে। জুভেন্টাস ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (চ্যাম্পিয়নস লিগের) লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়ায় ও জানে ব্যালন ডি’অর ওর অপেক্ষায় আছে।’
মরিনহো অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন বার্সেলোনা ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়েও। প্রথম লেগে ১-০ গোলে হারা ইউনাইটেড দ্বিতীয় লেগেও হারে ৩-০ গোলে। ইউনাইটেড মেসিকে আটকাতে ভুল করেছে, এমনই বিশ্লেষণ মরিনহোর। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণই বটে, ‘আমার মনে হয়, দ্বিতীয় লেগে ইউনাইটেডের মনোভাব অন্য রকম ছিল। প্রথম ম্যাচে ওরা মাঠের সেন্ট্রাল জোন অনেক ভালোভাবে দখলে নিয়েছিল। মেসি (ডান দিক থেকে) ভেতরে এলেই সারাক্ষণ ফ্রেড, ম্যাকটমিনেকে পেয়েছে। প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হারাতেই হয়তো, দ্বিতীয় ম্যাচে ইউনাইটেড অন্যভাবে খেলেছে। পগবা অনেক বাঁয়ে ছিল, ম্যাকটমিনে অনেক ডানে, লিনগার্ড ছিল দুই স্ট্রাইকারের পেছনে নাম্বার টেন। ডিফেন্সের সামনে ছিল শুধু ফ্রেড। মেসি তো ওই জায়গাটাতেই আসে বারবার, ওখানেই ও বল পায় বেশি। আর মেসি যখন আপনাকে ওয়ান-অন-ওয়ানে পাবে, তার মানে আপনি মরেছেন!’
রিয়ালের হয়ে তো মেসির বিপক্ষে অনেকবারই খেলেছেন। বার্সা ফরোয়ার্ডকে আটকানো কতটা ঝামেলার, বোঝা গেল মরিনহোর কথায়। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিতে বার্সার প্রতিপক্ষ লিভারপুলের যা কাজে আসতে পারে, ‘মেসির বিপক্ষে একা একজনের ম্যান-টু-ম্যান মার্কিং আমার পছন্দ নয়। মেসির চারদিকে একটা খাঁচা তৈরি করতে হবে আপনাকে।’
লিভারপুল-বার্সা সেমিফাইনালেও শুধু মেসির কারণেই বার্সাকে অল্প ব্যবধানে এগিয়ে রাখছেন মরিনহো, ‘মানে, সালাহ, ফিরমিনো...যে দুর্দান্ত সমন্বয় ওদের, তাতে ওরা অনেক ভয়ংকর। বার্সেলোনাকে ভোগাতে পারে ওরা। তবে মেসি জানে ব্যালন ডি’অর ওর অপেক্ষায়, সে কারণেই আমি বলব লিভারপুলের চেয়ে ওরা একটু বেশি ফেবারিট। তবে লড়াইটা ৫০-৫০-ই।’