'বদলি' দুই বন্ধু বাংলাদেশকে এনে দিলেন এ জয়
>নমপেনে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে স্বাগতিক কম্বোডিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ৮৩ মিনিটে ম্যাচের ফল এনে দিয়েছেন রবিউল ইসলাম। আন্তর্জাতিক ফুটবলে আজই প্রথম গোল করলেন টাঙ্গাইলের ছেলে।
রবিউল ইসলাম ও মাহবুবুর রহমান সুফিল—দুজনের মধ্যে অমিল হয়তো পাওয়া যাবে অনেক। কিন্তু দুই বন্ধুর মধ্যে মিলের শেষ নেই! আজকের কথায় ধরুন, নমপেন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জার্সিতে বদলি হিসেবে নেমেছিলেন দুজন। মাঠ ছাড়লেন নায়ক হয়ে। তাঁরা যেন বলতে চাইলেন, নায়ক হতে কী আর পুরো ৯০ মিনিট খেলতে হয়!
রবিউলের বাড়ি টাঙ্গাইল আর সুফিলের মৌলভীবাজারে। ফুটবল তাঁদের মিলিয়ে দিয়েছে এক বিন্দুতে। তৃতীয় বিভাগে দিলকুশা ক্লাবে একসঙ্গে খেলার সময় বন্ধুত্বের শুরু। সেখান থেকে দুই বন্ধু একসঙ্গে যোগ দিয়েছেন প্রিমিয়ার লিগের আরামবাগে। চলতি মৌসুমে ক্লাব বদলে দুজনের দুটি পথ বেঁকে গেলেও মাঠের বাইরে তাঁদের বন্ধুত্ব সব সময়ই অটুট। বিদেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে দুই বন্ধু বাংলাদেশকে এনে দিলেন জয়। ম্যাচের একমাত্র গোলদাতা হওয়ায় জয়ের নায়ক হিসেবে ইতিহাস রবিউলের কথাই বলবে। কিন্তু যাঁরা খেলাটি দেখেছেন তাঁরা সাক্ষ্য দেবেন ‘অর্ধেক’ গোলদাতা হিসেবে সুফিলের নাম। যেভাবে বলটি চামচের মতো করে গোলমুখে রবিউলের সামনে সাজিয়ে দিয়েছেন, বলটা পোস্টে না রাখতে পারলেই অন্যায় হতো বুঝি! মিস হয়নি বলেই তো বাংলাদেশ জিতেছে।
প্রায় পাঁচ মাস পর আজ আন্তর্জাতিক ফুটবলে নেমেছিল বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবে ২০১৯ সালেরও প্রথম ম্যাচ। দুই তরুণ রবিউল ও সুফিলের কল্যাণে বছরটা শুরু হলো জয় দিয়ে। ড্রয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া ম্যাচ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার জন্য তূণে কী মোক্ষম বাণ রাখা আছে, তা শুধু কোচ জেমি ডেই বোধ হয় জানতেন। ১০ মিনিটের মধ্যে দুই বদলিই হয়ে গেলেন তুরুপের তাস। ৬৫ মিনিটে বিপলু আহমেদের বদলি হিসেবে মাঠে নামানো হলো রবিউলকে। বাংলাদেশের আক্রমণের গতি গেল বেড়ে। কিন্তু শুধু গতি দিয়ে স্বাগতিকদের দমানো যাচ্ছিল না। প্রয়োজন ছিল ‘ঝড়’। ১১ মিনিট পরই নাবীব নেওয়াজ জীবনের বদলি হিসেবে নামানো হলো সুফিলকে। যেন গোলের চাবি দিয়ে মাঠে ছেড়ে দেওয়া হলো দ্রুত গতিসম্পন্ন এই উইঙ্গারকে। অপেক্ষা করতে হলো মাত্র ৭ মিনিট। বাকিটা এখন সবারই জানা।
গতি ও বলের নিয়ন্ত্রণে সুফিল বরাবরই সেরা। সেই রসায়নের যোগফলই রবিউলের পায়ে গোল। ৮৩ মিনিটে লেফটব্যাক সুশান্ত ত্রিপুরার এরিয়াল থ্রু বাম প্রান্তের অ্যাটাকিং থার্ড থেকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গতিতে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলে গোলমুখে আলতো কাট ব্যাক করেছিলেন সুফিল, আনমার্কড রবিউল দেখেশুনে জালে জড়িয়ে দিয়েছেন। নমপেনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বলটি যখন জালে জড়াল বাংলাদেশের আকাশে বুঝি ছড়িয়ে গেল এক মুঠো আবির। হ্যাঁ উৎসবের আবির।
এ ম্যাচের আগেও টাঙ্গাইলের যে রবিউল ছিলেন আড়ালে। শনিবার সন্ধ্যার পর হয়ে উঠলেন বাংলাদেশ ফুটবলের নতুন প্রজন্মের আশা।