নেইমারের জন্য ৩৫০ মিলিয়ন গুনতে রাজি রিয়াল!
২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ—৭ দিনে নিজেদের মাঠে তিন ম্যাচ, তিনটি দুঃস্বপ্ন। মৌসুম ঘিরে থাকা সব স্বপ্নের মৃত্যু। এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারত রিয়াল মাদ্রিদের জন্য!
বার্সেলোনার কাছে ২৭ ফেব্রুয়ারি হেরে কোপা ডেল রে শেষ। চার দিন পর বার্সার বিপক্ষেই অন্য ম্যাচে জিতে যেখানে লিগ লড়াইয়ে ফেরার আশা ছিল, সেটিতে হেরে কার্যত শেষ লিগের স্বপ্নও। ‘নকআউট পাঞ্চ’ এসেছে গত মঙ্গলবার। যে চ্যাম্পিয়নস লিগ একের পর এক মধুময় স্মৃতির জোগান দিয়ে যাচ্ছিল, আয়াক্সের কাছে ৪-১ গোলে হেরে এই মৌসুমের জন্য সেটিও শেষ। রিয়ালজুড়ে যে সব হারানোর দুঃখ, তা আর বলতে! লুকা মদরিচই বলেছেন, ‘ক্যারিয়ারে এর চেয়ে কঠিন সপ্তাহ আর আসেনি।’
এর মধ্যে এমন সব খবর আসছে, এর কোনগুলো সত্য, কোনগুলো বানোয়াট, বিশ্বাস করা কঠিন। রিয়ালের এই মুহূর্তে এক নম্বর সমস্যা একটা গোল মেশিনের। আর সেই শূন্যতা পূরণ করার জন্য রিয়াল নাকি নেইমারকে চাইছে। এর জন্য দরকার হলে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো গুনতেও রাজি রিয়াল মাদ্রিদ! শুধু তা-ই নয়, নেইমারকে অবিশ্বাস্য অঙ্কের বেতনও নাকি দিতে রাজি রিয়াল! এসব খবরেই স্পেন সয়লাব। এর মধ্যে কতটুকু সত্য, তা বলা কঠিন। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ অত্যন্ত কোণঠাসা অবস্থায় আছেন। ঝানু পেরেজ এই সময়ে সমর্থকদের মন জোগাতে একের পর এক ট্রাম্প কার্ড যে খেলছেন না, তার নিশ্চয়তা কী!
খারাপ সময়ে যা হয় আর কি, এখন বিবাদ-বিভেদ দেখা দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদে। তবে এ ক্ষেত্রে সেটি ড্রেসিংরুমে নয়, এই মুহূর্তে মাঠে ও মাঠের বাইরে রিয়ালের দুই স্তম্ভের মধ্যেই—অধিনায়ক সার্জিও রামোস ও সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ।
স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক এএস প্রথমে প্রতিবেদনটা করেছে, পরে যেটি সত্য বলে জানিয়েছে মার্কাও। মঙ্গলবার আয়াক্সের কাছে হারের পর ড্রেসিংরুমে আসেন পেরেজ, এসেই খেলোয়াড়দের বকাবকি শুরু। তাঁর বক্তব্য, একের পর এক এমন হারের দায় খেলোয়াড়দেরই। ম্যাচটা সেদিন নিষেধাজ্ঞায় না খেলতে পারলেও রামোস ছিলেন ড্রেসিংরুমে, অধিনায়ক সতীর্থদের বর্ম হয়ে দাঁড়ান। উল্টো পেরেজকেই মনে করিয়ে দিয়েছেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো চলে যাওয়ার পর তাঁরাই পেরেজকে বলেছিলেন অন্তত একজন ভালো স্ট্রাইকার কিনতে। পাল্টা শুনে ক্ষিপ্ত পেরেজ নাকি রামোসকে বলেছেন আগামী মৌসুমে ক্লাব থেকে বের করে দেবেন। রামোসও কম যান না! বলে দিয়েছেন, চুক্তির বাকি সময়ের পুরো টাকা শোধ করে দিলে মাথা উঁচু করেই বিদায় নেবেন।
তবে সেসব হয়তো মুহূর্তের উত্তেজনায় বলে ফেলা, এত কিছুর মধ্যেও যথার্থ অধিনায়কের দায়িত্ব ঠিকই পালন করে যাচ্ছেন রামোস। স্প্যানিশ রেডিও কাদেনা কোপে ও ওন্দা চেরো জানাচ্ছে, সতীর্থদের জাগিয়ে তুলতে ড্রেসিংরুমে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছেন রামোস। যেটির মূল কথা, লিগের বাকি ১২ ম্যাচে সবকিছু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এই মুহূর্তে লিগে তৃতীয় রিয়ালের মৌসুমে নতুন লক্ষ্য, আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেওয়া।
তা খেলোয়াড়েরা যদিও-বা নিজেদের গুছিয়ে নেন, তাঁদের নির্দেশনা দেবেন কে? কোচ নিয়েও যে রিয়ালে হযবরল। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের ভাষায়, সান্তিয়াগো সোলারির ‘মৃত্যুদণ্ড’ ঘোষিত হয়ে গেছে। আগামী মৌসুমে যে থাকছেন না, তা তো নিশ্চিতই। এই মৌসুমের শেষ পর্যন্তও আর্জেন্টাইন কোচ থাকতে পারেন কি না, তা-ও সংশয়ে। মার্কা জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে সোলারির বিকল্প সন্ধানে বৈঠকে বসেছেন পেরেজ ও রিয়ালের মহাপরিচালক হোসে আনহেল সানচেস। যদিও তাঁদের পছন্দের তালিকার কোচদের বেশির ভাগই এখন ‘ফ্রি’ নন। যাঁরা ফ্রি, তাঁদের নেওয়ার আগে আরও কিছু বিবেচ্য আছে। সে জন্যই সোলারিকে এখনই বরখাস্ত করা হচ্ছে না।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের খবর, পছন্দের তালিকায় পাঁচটি নাম আছে—জিনেদিন জিদান, হোসে মরিনহো, মরিসিও পচেত্তিনো, ইয়ুর্গেন ক্লপ ও মাসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রি। এর মধ্যে ক্লপ লিভারপুল ছাড়বেন না। অ্যালেগ্রি বলতে গেলে সর্বশেষ পছন্দ। স্বঘোষিত ‘বার্সা-বিরোধী’ পচেত্তিনোকে আপাতত তৃতীয় পছন্দই ধরে নেওয়া যায়। পেরেজের প্রথম পছন্দ জিদানই। গত মৌসুমেই দায়িত্ব ছেড়ে গেলেও জিদানকে আবার ফেরাতে চান পেরেজ। দুজনের সম্পর্ক এখনো ভালো। ফরাসি কিংবদন্তিকে ফিরতে রাজি করাতে ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক এমিলিও বুত্রাগেনোকে দায়িত্ব দিয়েছেন পেরেজ।
মরিনহোর সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো পেরেজের। পর্তুগিজ কোচ এখন বেকার আছেন। দুই দিন আগেই চীনের জাতীয় দলের কোচিং করাতে ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ প্রস্তাবও নাকি ফিরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর ব্যাপারে ক্লাবের সমর্থকেরাই দুই ভাগে বিভক্ত। শেষ পর্যন্ত জিদানকে রাজি করানো না গেলে মরিনহোই কি আগামী মৌসুমে বসবেন রিয়ালের ডাগআউটে?