মনের যন্ত্রণা সাকিব এভাবেই আড়াল করেন
গত এক বছরে আন্তর্জাতিক, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট—সব মিলিয়ে সাকিব যে পাঁচটা ফাইনালে খেলেছেন, প্রতিটিই হেরেছেন। বারবার ফাইনালে হারের যন্ত্রণার চেয়ে এখন তাঁকে বেশি পোড়াচ্ছে নিউজিল্যান্ড সফরের আগের দিন বাঁ হাতের অনামিকায় পাওয়া চোট।
কথা ছিল ড্রেসিংরুম ঢোকার আগেই একটু সময় দেবেন। কাল মাঠে রওনা দেওয়ার ঘণ্টা দুয়েক আগে জানালেন, ম্যাচের আগে নয়, পরে। কিন্তু ম্যাচের ফল যদি ঢাকা ডায়নামাইটসের পক্ষে না আসে, মুড তাঁর বোলিংয়ের মতো বাঁক নেবে না তো? সাকিব আল হাসান হাসেন, ‘হা হা, না। আজ আমার কোনো টেনশন নেই!’
কুমিল্লার কাছে সাকিবের ঢাকা শেষ পর্যন্ত হেরেই গেছে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতা হয়নি ২০১৬ চ্যাম্পিয়নদের। তবুও সাকিব তাঁর কথা রাখলেন। ক্ষণিকের জন্য হলেও সময় দিলেন। সংবাদ সম্মেলনে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিলেন হাসিমুখে। ড্রেসিংরুমে ফিরলেনও হাসিটা ধরে রেখে। অথচ কে বলবে, তাঁর মনের ভেতর তখন চলছে ভীষণ দহন!
কাল সাকিবের আইপিএল দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ একটা পরিসংখ্যান পোস্ট করেছে নিজেদের ফেসবুক পেজে। পরিসংখ্যানে তারা দেখিয়েছে, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক-ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে খেলেছেন ১২টা ফাইনাল। বাংলাদেশ দলের হয়ে ২০১৬ এশিয়া কাপ ও ২০১৮ নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল। আইপিএলে তিনটি, বিপিএলে চারবার, সিপিএলে একবার, বাংলাদেশে ২০১৩ বিজয় দিবস টি-টোয়েন্টি ও ২০১০ সালে খুলনা বিভাগের হয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগের ফাইনাল খেলেছেন সাকিব।
শুধু বাংলাদেশে কেন, বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বেই কজন ক্রিকেটারের এত টি-টোয়েন্টি ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে? ফাইনাল খেলার এই অর্জন বড় করে দেখলেও কাল চ্যাম্পিয়ন না হতে পারার আক্ষেপ কিছুতেই যাচ্ছে না সাকিবের, ‘(আজ) চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে অর্জনটা বড় মনে হতো। হ্যাঁ, ফাইনাল খেলতে পারাটাও একটা অর্জন। এমন টুর্নামেন্ট কিংবা সিরিজ যখন হয়, শেষ পর্যন্ত যাওয়া অবশ্যই একটা বড় অর্জন। এই টুর্নামেন্টে সাতটা দলের মাত্র দুটি দল ফাইনাল খেলতে পেরেছে। বিপিএলের শেষ তিনটা ফাইনাল খেললাম, আইপিলে তিনটা খেললাম, সিপিএলে খেলেছি। ভালো একটা অভিজ্ঞতা। আসলে এই অভিজ্ঞতাই তো সব নয়। শেষ ম্যাচ জিততে পারলেই ভালো। চেষ্টা থাকবে যে জায়গাগুলো উন্নতি দরকার সেগুলো করা। সামনে যেন ফাইনাল ম্যাচ জিততে পারি।’
গত এক বছরে আন্তর্জাতিক, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট—সব মিলিয়ে সাকিব যে পাঁচটা ফাইনালে খেলেছেন (আঙুলের চোটে পড়ে দেশে না ফিরলে এশিয়া কাপটাও ধরা যেত), প্রতিটিই হেরেছেন। বারবার ফাইনালে হারের যন্ত্রণার চেয়ে এখন তাঁকে বেশি পোড়াচ্ছে নিউজিল্যান্ড সফরের আগের দিন বাঁ হাতের অনামিকায় পাওয়া চোট। কাল ফাইনালে ব্যাটিংয়ের সময় পেয়েছেন চোটটা। বিসিবির চিকিৎসক জানিয়েছেন, চোট পাওয়া জায়গাটা প্রায় তিন সপ্তাহ নড়াচড়াই করানো যাবে না! তার মানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ তো শেষই। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু কিউইদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও তাঁকে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ!
কাল ফাইনালে হেরেছেন, চোটে পড়ে আকস্মিকভাবে নিউজিল্যান্ড সফরও এক প্রকার শেষ! এত দুঃসংবাদের ভিড়েও সাকিব মানসিকভাবে শক্ত থাকতে পারেন, মুখে হাসি ধরে রাখতে পারেন। মুঠোফোন বার্তায় হাসির ‘ইমো’ পাঠিয়ে বোঝাতে পারেন, ‘আমি ভেঙে পড়িনি’!
আরও পড়ুন...