৫ উইকেট নয়, ব্যাটিংকে যে কারণে এগিয়ে রাখলেন সাকিব
>বল হাতে ৫ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখলেও ব্যাটিংয়ে অপরাজিত ৪২ রানের ইনিংসকেই এগিয়ে রাখছেন সাকিব
ওভারই মোটে চারটি। তাতে ৫ উইকেট নেওয়া গাণিতিক হিসাবেই কঠিন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ২৩জন বোলার ২৬বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন। ৫ উইকেট নেওয়াকে তাই সব সময় বাড়তি বাহবা দিতেই হয়। আজ সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের বেশি প্রশংসা হলো তাঁর বোলিং নিয়ে। প্রশ্নও। কিন্তু সাকিব নিজে বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংটাকেই এগিয়ে রাখলেন।
কারণটাও সাকিব পরিষ্কার করলেন। বাংলাদেশ আজ ৩৬ রানে জিতেছে। সাকিব মনে করেন, তিনি ও মাহমুদউল্লাহ ওই সময়ে দাঁড়িয়ে না গেলে ৩০-৩৫ রান কমই উঠত বাংলাদেশের। লক্ষ্যটা আরও ছোট হলে, শিশির যেভাবে বোলারদের ভুগিয়েছে, তাতে বাংলাদেশ নাও জিততে পারত। ১০ রানের মধ্যে সৌম্য, লিটন ও মুশফিককে হারানোর ধাক্কাটা যদি সামলে না নিত বাংলাদেশ, বড় বিপদই হয়ে যেত।
নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং নিয়ে অনুভূতি জানাতে গিয়ে সাকিব তাই ব্যাটিংয়ের কথাই বললেন, ‘আমার কাছে যেটা মনে হয়, ব্যাটিংটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল ওই সময়। কারণ যেটা বললাম, ওই সময় আমাদের দুজনের একজনের উইকেট যদি পড়ে যেত, আর পরের ব্যাটসম্যান তাড়াতাড়ি আউট হয়ে গেলে আমাদের রানটা এত হতো না। একটা সময় যখন পর পর দুই উইকেট পড়ে গেল, আমি চিন্তা করেছি যে আমাদের ধস আবার হয়ে যাবে কি না। তো ওই সময় আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
৪২ বলে ৯১ রানের জুটি গড়ে শুধু সেই বিপর্যয়টা সামলেই নেননি, সাকিব-মাহমুদউল্লাহ পাল্টা আক্রমণ করে ২০০ স্ট্রাইক রেটে রানও তুলেছেন। শেষ পর্যন্ত সাকিব ২৬ বলে ৪২ আর মাহমুদউল্লাহ ২১ বলে ৪৩ রান তুলে অপরাজিত ছিলেন। সাকিব অবশ্য নিজের ব্যাটিংয়েরও কৃতিত্ব মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে দিলেন, ‘রিয়াদ ভাইয়ের অনেক অবদান, ওই সময়ে এসে চাপটা ওদের দিকে সরিয়ে দিয়েছে। তাতে আমার কাজটাও অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। আমি নির্ভার হয়ে ব্যাট করতে পেরেছি। আর রিয়াদ ভাই যেহেতু অনেক শট খেলছিল, তাই আমার জন্য উইকেটে থিতু হওয়ার সুযোগটা ছিল। আমার মূল কাজ ছিল প্রান্ত বদল করা, আর বাজে বল পেলে বাউন্ডারি মারা। আমার কাছে মনে হয়, রিয়াদ ভাইয়ের ব্যাটিং অনেক স্পেশাল ছিল।’
মাহমুদউল্লাহ আজ শুরুতে এসেই টানা চারটি চার মেরেছেন। সাকিব মনে করেন, পরপর তিনটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ খোলসের মধ্যে না ঢুকে ইতিবাচক ব্যাটিং করেই ভালো করেছেন, ‘রিয়াদ ভাই তখনই ভালো করেন, যখন উনি এ রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলেন। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, ভুলও হতে পারে ঠিকই হতে পারে। উনি কখনো কখনো শুরুতে এসে উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন। আমার মনে হয় এটা ভুল কৌশল ওনার। বরং এই পথটাই (মেরে খেলা) ওনার জন্য বেশি মানিয়ে যায়। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। ওয়ানডেতেও, কার্ডিফের ইনিংসটা যদি দেখেন। উনি কিন্তু সময় নেননি, প্রথমে আক্রমণ করেছেন। আমার কাছে মনে হয় ওনার এই ধরনটাই ছোট সংস্করণের জন্য অনেক ভালো। এমনকি টেস্টেও যদি প্রথমে মারতে পারেন, ওনার জন্য যেটা হয়, ওনার শরীরের জড়তা কেটে যায়। পায়ের মুভমেন্ট ভালো হয়ে যায়।’
লিটন দাসও আজ ছিলেন দুর্দান্ত। যেভাবে যে শট খেলতে চেয়েছেন, সেভাবেই খেলেছেন। তাতে উদ্ভাবনী শটের পসরাও ছিল। তামিম শুরুর দিকে ফিরে গেলেও সৌম্য ও লিটন মিলে উড়ন্ত শুরু এনে দিয়েছিলেন। সাকিব এই দুজনকেও বাহবা দিলেন, ‘অবশ্যই লিটন ও সৌম্যর ইনিংস খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সবাই অবদান রেখেছে। এগুলো দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের জুটি অনেক বড় ছিল। একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে যদি ৭৫, ৫০ রানের বেশি জুটি হয়, ৮০ ভাগ সময় ম্যাচগুলো জেতার সম্ভাবনা থাকে।’