বল-বিকৃতি নিয়ে বিজ্ঞাপনে স্মিথ, অস্ট্রেলিয়ায় ঝড়
>গত মার্চে কেপ টাউন টেস্টের বল-বিকৃতি নিয়ে একটি বিজ্ঞাপন বানিয়েছে ভোডাফোন অস্ট্রেলিয়া। সেই বিজ্ঞাপনে নিজের ভোগান্তি তুলে ধরে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টার কথা বলেছেন বল-বিকৃতির দায় স্বীকার করে নিষিদ্ধ হওয়া স্টিভেন স্মিথ। ব্যাপারটি ঝড় তুলেছে অস্ট্রেলিয়ায়
কেপ টাউনে গত মার্চে বল-বিকৃতি কাণ্ডের দায় স্বীকার করে জনসম্মুখে ক্ষমা চেয়েছিলেন স্টিভেন স্মিথ। এরপর আর খোলামেলাভাবে কখনো সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হননি নিষিদ্ধ হওয়া অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই অধিনায়ক। সেই ঘটনার নয় মাস পর আজ সিডনিতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন স্মিথ। খোলামেলা কথা বলবেন নিজেকে নিয়ে। দীর্ঘ ১২ মাস নিষিদ্ধ হওয়ার পর নিজেকে শোধরাতে এ সময় সম্ভাব্য সবকিছুই করেছেন তিনি। খেলাটা ধরে রেখেছেন, অংশ নিয়েছেন সামাজিক প্রচারণায়ও। তারই অংশ হিসেবে ভোডাফোন অস্ট্রেলিয়ার একটি বিজ্ঞাপনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন স্মিথ। তা নিয়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, এসব ফালতু, সে নিজেকে শোধরাতে পেরেছে কি না, সন্দেহ। আবার কারও যুক্তি অস্ট্রেলিয়ার তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোই স্মিথের লক্ষ্য।
ইউটিউবে ছাড়া হয়েছে বিজ্ঞাপনটি, নাম ‘গাটসি ইজ কলিং’—যার শুরু হয়েছে গত মার্চের সেই সংবাদ সম্মেলনে স্মিথের কান্নাভেজা কণ্ঠে। এরপর দেখা যায়, স্থানীয় সাদারল্যান্ড ক্লাবের হয়ে খেলছেন স্মিথ এবং একটি কোচিং ক্লিনিকও পরিচালনা করছেন। কলঙ্কিত সেই ঘটনার খেসারত প্রসঙ্গে এই বিজ্ঞাপনে স্মিথ বলেছেন, ‘যা কিছু স্বপ্ন দেখেছি এবং যা কিছুর সঙ্গে জড়িত ছিলাম, সব টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়েছিল। অন্ধকারে পতিত হয়েছিলাম।’
বল-বিকৃতির সেই ঘটনায় ক্রিকেটবিশ্বে অনেকেরই ঘৃণার পাত্র হয়েছিলেন স্মিথ। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা প্রসঙ্গে বিজ্ঞাপনে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে সামনে এসে সৎ থেকে দায় স্বীকার করার ব্যাপার। অনেক কঠিন সময় গেছে। তবে অনেক সময় ভোগান্তির প্রয়োজন আছে। সবাই ভুল করে। তবে তা শোধরাতে আপনি কী করছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ।’ বিজ্ঞাপনের শেষে স্মিথ বলেছেন, ‘আমি আগের চেয়েও ভালোভাবে ফিরতে চাই।’
সেই ঘটনার পর জনসম্মুখে প্রথম সংবাদ সম্মেলনের আগের দিন এই বিজ্ঞাপন প্রচার হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বল-বিকৃতি কাণ্ডের পর নিজের ভোগান্তি জানাতে স্মিথ যে মাধ্যমটি ব্যবহার করেছেন তাতে অবাক হয়েছেন অনেকেই। অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ জানিয়েছে, এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পাল্টা যুক্তি হিসেবে অনেকে বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বার্তা দিতে চেয়েছেন স্মিথ এবং তিন যেভাবে বলতে চেয়েছেন সেভাবেই হয়েছে। টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের দূত হিসেবে কাজ করছেন স্মিথ। ভোডাফোনের বিজ্ঞাপনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া আরও তিন ক্রিকেটারের ভিডিও স্মিথের সংবাদ সম্মেলনের পরে প্রচার করা হবে।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিজ্ঞাপন থেকে স্মিথ যে অর্থ পেয়েছেন তা স্থানীয় একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে মানসিক চিকিৎসা বিভাগে দান করেছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক এতেও সমালোচকদের মুখ বন্ধ রাখতে পারেননি। থ্রিএডব্লিউ রেডিও-র সঞ্চালক জাস্টিন স্মিথ সোজাসাপ্টা বলেছেন, ‘কয়েকটি ফোন বেচতে মানসিক সমস্যাকে এত সস্তাভাবে ব্যবহার কর না। (বিজ্ঞাপন) দেখে জঘন্য লেগেছে। সে নিজেকে শোধরাতে পেরেছে কি না, সন্দেহ।’
ভোডাফোন অস্ট্রেলিয়া অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছে, ‘অস্ট্রেলিয়ার তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো স্মিথের লক্ষ্য’ এবং তাঁরা স্রেফ সাহায্য করেছেন। ২০১৯ সালের মার্চে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হবে স্মিথের। তবে অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটসম্যানের সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। ভোডাফোন অস্ট্রেলিয়ারই পৃষ্ঠপোষকতার টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশে তিনি খেলতে পারছেন না। বিপিএলেও তাঁর খেলায় বাধ সেধেছে বিসিবি। তবে এ কথা সত্যি, এত বাধা-বিপত্তির পরও নিজের হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধারে ফেরার চেষ্টায় কমতি রাখছেন না স্মিথ।
ভোডাফোন অস্ট্রেলিয়ার সেই বিজ্ঞাপনের ভিডিও লিংক: