ঘূর্ণিতে কুপোকাত ওয়েস্ট ইন্ডিজ
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কতটা কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেবেন্দ্র বিশু কিংবা রোস্টন চেজরা একের পর এক উইকেট তুলে নেওয়ায় বাংলাদেশের তাইজুল ইসলাম, সাকিব আল হাসানরাও নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত হয়ে উঠেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে ক্যারিবীয়দের সামনে ২০৪ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে বাংলাদেশ তাই ছিল নির্ভার।
উইকেটে বল যেভাবে ঘুরছে, তাতে ২০৪ রানকেই পর্বততূল্য লক্ষ্যে পরিণত করার মতো যথেষ্ট রসদ যে মজুত ছিল বাংলাদেশের। তাইজুল-সাকিব-মিরাজরা প্রত্যাশামতোই জ্বলে উঠলেন ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় ইনিংসে। তাইজুল তুলে নিলেন ৬ উইকেট, সাকিব, মিরাজরাও সময়মতো আঘাত হানলেন। ২০৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে গেল ১৩৯ রানেই। তিন দিনের মাথায় ৬৪ রানের জয় তুলে নিয়ে টেস্ট সিরিজের শুরুটা হলো দুর্দান্ত।
প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হক সেঞ্চুরি করেছেন। ১২০ রানের সেই ইনিংসটির জন্য তিনি জিতে নিয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার। কিন্তু চট্টগ্রামে বাংলাদেশের জয়ের মূল নায়ক কিন্তু স্পিনাররাই। প্রথম ইনিংসে অভিষিক্ত নাঈম হাসান। ৫ উইকেট তুলে নিয়ে দলকে এনে দিয়েছেন মোটামুটি ভালো লিড, দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল ৩৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে দাঁড়াতেই দিলেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সাকিব, মেহেদী মিরাজরাও কম যাননি। প্রথম ইনিংসেও সাকিব নিয়েছেন ৩ উইকেট।
মিরাজ প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন। সংখ্যা ধরলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতন হওয়া ২০ উইকেটই বাংলাদেশের স্পিনারদের। সে হিসাবে চট্টগ্রাম টেস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে ঘূর্ণিতেই কুপোকাত—এটা বলাই যায়।
বাংলাদেশের দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের ‘জীবন অতিষ্ঠ’ করে তুলেছিলেন। তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬৯ রান তুলতেই হারারায় ৭ উইকেট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপর্যয়ের শুরুটা করেছিলেন কাইরন পাওয়েল। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে সাকিব আল হাসানের একটি বল বাইরে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়েই গড়বড় করে ফেললেন। ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল যখন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে, পাওয়েল তখন ক্রিজ ছেড়ে অনেক বাইরে। মুশফিকের পক্ষে পাওয়েলকে স্টাম্পিং করতে কোনো বেগই পেতে হয়নি।
পঞ্চম ওভারে সাকিবের বলেই ফেরেন শাই হোপ। এবারও সহায়ক ভূমিকায় মুশফিকুর রহিম। এবার অবশ্য ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। দলীয় রান ১১ হতেই ২ উইকেট চলে যাওয়া ক্যারিবীয় দলের বিপদের শুরু যেন এখানেই। ১১ রানেই তাইজুলের বলে পরপর ফিরেছেন কার্লোস ব্রাফেট আর রোস্টন চেজ। দুটি এলবিডব্লু।
প্রথম ইনিংসের মতোই মারমুখী ছিলেন হেটমায়ার। ১৯ বলে তুলেছিলেন ২৭ রান। কিন্তু তাঁকে বেশিক্ষণ রাজত্ব করতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। নাঈম হাসানের ক্যাচে ফিরিয়েছেন এই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানকে। ডওরিচকে এলবিডব্লু করেছেন তাইজুল। তাইজুলই বোল্ড করেছেন দেবেন্দ্র বিশুকে।
৭৫ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর বাংলাদের জয়টা মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু জোমেল ওয়ারিক্যান আর সুনীল আমব্রিসের জুটি সে আশায় বাদ সেধেছিল। ৬১ রানের জুটি গড়ে এই জুটি চোখ রাঙিয়েছে বাংলাদেশকে। তবে মিরাজ সময়মতো ওয়ারিক্যানকে তুলে নিলে স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ-শিবিরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ উইকেটটি তুলে নেন তাইজুল।
গত জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে টেস্ট সিরিজে বিপর্যয় হয়েছিল বাংলাদেশের। চট্টগ্রামে সে বিপর্যয়ের ক্ষতে প্রলেপটা খুব ভালোভাবেই দিতে পারল সাকিব-বাহিনী। এখন প্রত্যশা সিরিজ জয়ের।