জিম্বাবুয়ের অর্ধেক পেরোল বাংলাদেশ

অধিনায়কও ব্যর্থ হয়ে ফিরলেন। ছবি: প্রথম আলো
অধিনায়কও ব্যর্থ হয়ে ফিরলেন। ছবি: প্রথম আলো

ফলোঅনে পড়ার শঙ্কা ছিল। কিন্তু সেই ভীতি কাটানো গেলেও দেড় শ রান টপকাতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৪৩ রানেই অলআউট! ভীষণ আশাবাদী সমর্থকেরা এটুকু ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারেন, যাক, জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসের অর্ধেক রান তো টপকানো সম্ভব হয়েছে! এরপরও প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবধানটা ছিল ১৩৯ রানের। আজই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বিনা উইকেটে ১ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে জিম্বাবুয়ে। অর্থাৎ হাতে ১০ উইকেট রেখে ১৪০ রানের লিড নিয়েছে জিম্বাবুয়ে।

সকালে মনে হয়েছিল সিলেটের উইকেটে ভূত ভর করেছে! বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে অবশ্য অনেকে ভেবেছেন, ভূতটা ব্যাটসম্যানদের মনে? যে উইকেটে ব্যাটসম্যানদের শিকার করা কঠিনতম কাজ হওয়ার কথা, সেখানেই আজ দ্বিতীয় দিনে ২১ রানে জিম্বাবুয়ের শেষ ৫ ব্যাটসম্যানকে তুলে এনে বাংলাদেশের বোলাররা যে দারুণভাবে শেষটা টেনেছিলেন, ১৯ রানে বাংলাদেশের প্রথম ৪ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে সেটিকেই বানিয়ে দিলেন ভয়াবহ। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে ২৮২ রানের জবাবে বাংলাদেশের ব্যাটিং যেন দিশেহারা তরী! যেখানে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা পথ দেখাতে পারেননি। দলের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের স্কোর যথাক্রমে—৯, ৫, ১১, ৫, ০। এই পাঁচ ব্যাটসম্যান—লিটন, ইমরুল, মুমিনুল, নাজমুল ও মাহমুদউল্লাহ।

লড়াই বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে সেটি শুরু হয়েছে তারপর থেকে। যে আরিফুল হককে দ্রুত রান তোলার (!) জন্য টেষ্টে নেওয়া হয়েছিল তাঁকে আউট করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের ইনিংসে সর্বোচ্চসংখ্যক বল (৯৬) খেলেছেন এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার। সর্বোচ্চ স্কোরও তাঁর (৪১*)। আরিফুল আফসোস করতে পারেন, মিডিয়াম পেসার হয়েও কাল মাত্র ৪ ওভার বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন। আর আজ সতীর্থদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় অভিষেক টেষ্টে ফিফটির দেখাও পেলেন না।

লাঞ্চের আগের এক ওভারে বিনা উইকেট ২ রান তোলা বাংলাদেশ লাঞ্চের পর ১২ রান যোগ করতেই হারিয়েছে দুই ওপেনার ইমরুল ও লিটনকে। নাজমুল হোসেন শান্ত স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়ে ঠিক কয়েক বল পরে উইকেটের পেছনেই ক্যাচ দিলেন। টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া মাহমুদউল্লাহ ফিরলেন শূন্য রানে! ১৯ রানে বাংলাদেশের ৪ উইকেট নেই! চাতারার বলের জবাব যেন পাচ্ছিল না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ৫ ওভারে ৩ শিকার তুলে ফেলেছেন এই পেসার। দুজন হয়েছেন প্লেড অন। দলকে মহা বিপর্যয়ে রেখে ১১ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন মুমিনুল। জিম্বাবুয়ের স্পিনারদের (সিকান্দার রাজা) প্রথম শিকার মুমিনুল।

 মুমিনুল ফেরার পর মুশফিক উইকেটে ছিলেন প্রায় ১০ ওভার। দলীয় ৭৮ রানে মুশফিক জার্ভিসের শিকার হয়ে ফেরার পর স্কোরটা এক শ পেরোবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। আরিফুলের সঙ্গে মিরাজের ৩০ রানের মহামূল্যবান জুটিতে সেই ভীতি কেটেছে। তার আগে অবশ্য মুমিনুল ও আরিফুলের সঙ্গে ৩০ ও ২৯ রানের জুটি গড়েছিলেন মুশফিক। এই তিনটি জুটিতেই বড় রান পেতে শুরুর দেখা পেয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু টানতে পারেননি কেউ–ই।

এর আগে তাইজুলের বলের জবাব পাচ্ছিল না জিম্বাবুয়ে। ১০২ ওভার শেষেও স্কোরটা শক্তপোক্ত দেখাচ্ছিল। ৫ উইকেটে ২৬১। সেখান থেকে ১৫ ওভার ৩ বলের মধ্যে ২১ রান যোগ করতেই শেষ ৫ ব্যাটসম্যান হারিয়ে ফেলল জিম্বাবুয়ে। এর চারজনই তাইজুলের শিকার। আগের দিনের দুই মিলিয়ে ৬ উইকেট তুলে নিয়েছেন এই স্পিনার। ১০৮ রান দিয়েছেন হয়তো, কিন্তু এও মনে রাখতে হবে, মূলত চার বোলার নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশকে পঞ্চম বোলারের শূন্যতা পূরণ করতে তাঁকেই সবচেয়ে বেশি চাপ নিতে হয়েছে। তাইজুল বল করেছেন ৩৯.৩ ওভার। পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি। ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন।

দিনের প্রথম ১১ ওভার অবশ্য হতাশায় কেটেছে বাংলাদেশের । এ সময়ে গত দিনের স্কোরের সঙ্গে আরও ২৫ রান যোগ করেছেন পিটার মুর ও চাকাভা। ৬০ রানের ষষ্ঠ উইকেট থেমেছে তাইজুল ইসলামের সুবাদে। নাজমুল হোসেন শান্তর বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ২৮ রান করা চাকাভা। একটু পরেই ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে ফাঁদে ফেলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন তাইজুল। ওয়েলিংটনের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল উইকেটের পেছনে গেছে। তিন ওভার পরেই নাজমুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন মাভুতা। ইনিংসের ১১৮তম ওভারে পরপর দুই বলে জার্ভিস ও চাতারা তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে শুধু অলআউট করে দেননি, পরের ইনিংস শুরু করবেন হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে।

জিম্বাবুয়ে খুব সহজেই ৩০০ পেরিয়ে যাবে মনে হচ্ছিল। পারেনি তাইজুলের কারণে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ইনিংসে ৮ উইকেট আছে তাঁর। আজ করলেন দ্বিতীয় সেরা বোলিং। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের লিড এনে দেওয়াটা ছিল দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে ব্যাটসম্যানরা পুরোপুরি ব্যর্থ।