ঘুরে দাঁড়াক জিম্বাবুয়ে!

দুপুর থেকে শুরু করে দীর্ঘ অনুশীলন করে গেল জিম্বাবুয়ে। ছবি: এএফপি
দুপুর থেকে শুরু করে দীর্ঘ অনুশীলন করে গেল জিম্বাবুয়ে। ছবি: এএফপি
>

এ বছর ২০টি ওয়ানডে হেরেছে জিম্বাবুয়ে, সর্বশেষ ১৩ ওয়ানডেতে জয় নেই। আর টেস্টে জিম্বাবুয়ের সর্বশেষ জয় ৫ বছর আগের ঘটনা! সর্বশেষ ১২ টেস্টের ১১টিতেই হেরেছে তারা, একটি ড্র। জিম্বাবুয়ে কি পারবে?

পশ্চিমে ঢলে পড়া সূর্যের কারণে জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়দের ছায়াগুলোকে দীর্ঘকায় দেখাচ্ছিল। আলোছায়ার এ এক অদ্ভুত খেল। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে, বিশাল রণ পায়ে চেপে বুঝি হেঁটে যাচ্ছে কেউ। প্রেসবক্স থেকে সামনে সবুজ মাঠে জিম্বাবুয়ে খেলোয়াড়ের ছায়ার দিকে তাকিয়ে এই প্রশ্নটাও মনে উঁকি দিল, জিম্বাবুয়ে দলটাকেও কি যতটা ‘খারাপ’ তার চেয়ে ‘দীর্ঘতর’ খারাপ দেখায়?

সেই সুদিন আর নেই। মধ্যবিত্তের সংসারে এখন পান্তা ফুরোনোর হাহাকার। তবু এই দলের খেলোয়াড়দের প্রতিভা নিয়ে তো প্রশ্ন নেই। টানা পরাজয় একটা ডমিনো এফেক্ট তৈরি করে। জিম্বাবুয়ে এখন অপেক্ষা করছে কোনো একটা ব্লক যেন রুখে দাঁড়ায় পতনের স্রোতে। এ কারণেই হয়তো মাঝদুপুরে অনুশীলন শুরু করেও শেষ করার নামই নেই। বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে, তবু ঘাম ঝরিয়ে যাচ্ছেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, ব্রেন্ডন টেলররা।

স্বাগতিকের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ এ ভেন্যুতে চলে এসেছে আগেই। জিম্বাবুয়েকে বৃষ্টি-বাগড়ায় আধখেঁচড়া প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে হয়েছে চট্টগ্রামে। গতকালই মাত্র সিলেটে পা দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। চট্টগ্রামের সঙ্গে কন্ডিশনের খুব একটা তফাৎ হয়তো নেই, তবু পুরোদস্তুর অনুশীলনের সুযোগ এ মাঠে মিলল মাত্র এক দিন। এ কারণে বাড়তি খেটে খুটে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। এমনকি কোচ লালচাঁদ রাজপুতকেও দেখা গেল, ফিরতি দফায় সেন্টার উইকেট দেখে নিচ্ছেন আরও একবার।

বাংলাদেশের তরফ থেকে যতই বলা হোক উইকেটে হালকা ঘাস আছে, স্পিনারদের সঙ্গে পেসারদেরও সাহায্য করবে; কিন্তু এ পুরোপুরি স্পিনিং উইকেটই। দ্বিতীয় দিন থেকেই উইকেট ভাঙতে শুরু করবে। বাংলাদেশের একাদশে কাল তিন স্পিনার দেখার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারেন। বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস অবশ্য আগের দিনই বলে গেছেন, বাংলাদেশ যখন প্রতিপক্ষের ভেন্যুতে খেলতে চায়, তারাও কি খাতিরদারি করে? পেশাদার ক্রিকেটে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আর আজ মাহমুদউল্লাহ তো বলেই দিলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার চেয়ে প্রথম টেস্টটা জেতা সব সময়ই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভাব্য সেরা একাদশ বাংলাদেশ নামাবে।

যে রেসিপিতে বাংলাদেশ নিজেদের মাঠে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে ঘোল খাইয়েছে, একই দুধ-চিনি-টক দই জিম্বাবুয়ের পাতেও বরাদ্দ হবে। স্পিনের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের দুর্বল ‘অ্যাকিলিস হিলে’ হানা তো দিতে চাইবেই বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে অবশ্য আশা করছে, বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন খেলার অভিজ্ঞতার বদৌলতে টেলর, শন উইলিয়ামসরা পাল্টা জবাব এবার ঠিকই দেবেন। ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়ের প্রাপ্তি দলের এই দুই ব্যাটিং স্তম্ভের ফর্মে ফেরা। এর সঙ্গে খোদ অধিনায়ক মাসাকাদজার কাছ থেকেও ভালো ইনিংস পাওনা পড়ে রয়েছে।

লড়াইয়ের প্রস্তুতি জিম্বাবুয়ে অনেকবারই দিয়েছে এই সফরে। মাঠে তা অনূদিত হয়নি। শুধু তো ওয়ানডেতে নয়, বরং ফল বিচারে মনে হচ্ছে, টেস্টে তারা আরও খারাপ দল! এ বছর ২০টি ওয়ানডে হেরেছে জিম্বাবুয়ে, সর্বশেষ ১৩ ওয়ানডেতে জয় নেই। আর টেস্টে জিম্বাবুয়ের সর্বশেষ জয় ৫ বছর আগের ঘটনা! সর্বশেষ ১২ টেস্টের ১১টিতেই হেরেছে তারা, একটি ড্র।

পরাজয় ক্লান্তি যেন আরও বেশি পরিশ্রম করে ভুলতে চাইছে জিম্বাবুয়ে। এ কারণেই সিলেটের আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাস সন্ধ্যার শিশিরের খোঁজ পাওয়ার আগেই জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়দের শরীর নিংড়ানো শিশিরের খোঁজ পেয়ে গেল। আর তাঁদের এভাবে খাটতে দেখে, কেন জানি না, বাংলাদেশের প্রতি আবেগটা একপাশে সরিয়ে রেখে মন থেকে প্রার্থনা করতে ইচ্ছে করল, জিম্বাবুয়ে যেন রুখে দাঁড়ায়। জিম্বাবুয়ে যেন সিলেটের সাদা পোশাকের অভিষেকটা রঙিন করে তোলে মাঠের খেলায়। জিম্বাবুয়ে যেন দুর্দান্ত খেলে!