মেয়েদের ভালো ঘর হবে, জমি হবে
দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবলাররা। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা করে পাওয়ায় পরিবারগুলোতে বিরাজ করছে উৎসবের আবহ
কারও বাবা বর্গা চাষি, কারও বাবা গ্রামের বাজারে মুদি দোকানি। দু-একজনের বাবা আবার অসুস্থ। তাই মাথার ওপর নেই ভরসার হাতটাও। মোট কথা, দারিদ্র্যের ঘেরাটোপে বন্দী তাদের জীবন। কিন্তু ফুটবলে লাথি মেরে মেয়েরা ভেঙেছে জীবনের প্রতিকূলতার শৃঙ্খল। এই ফুটবল পায়েই তারা দেশকে এনে দিচ্ছে একের পর এক সাফল্য।
এই তো গত মাসে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মেয়েদের বাছাইপর্বে ‘এফ’ গ্রুপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে নাম লেখায় বাংলাদেশ। সেই লড়াকু মেয়েদের গতকাল গণভবনে ডেকে ১০ লাখ টাকা করে তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেয়েদের কাছে ১০ লাখ টাকা মানে পরিবার একটু সচ্ছল, একটা ভালো ঘরের স্বপ্ন।
সম্প্রতি নারী ফুটবলারদের বেশ কয়েকবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। তাদের হাতে কয়েকবার তুলে দেওয়া হয়েছে এক লাখ টাকা করে পুরস্কারও। তাতে মেয়েরা পরিবার নিয়ে জীবনযুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছে। আর এবার বড় অঙ্কের পুরস্কার সেই স্বপ্নকে রঙিন করে আরও একধাপ এগিয়ে দিল।
অনূর্ধ্ব-১৬ দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্দার গল্পটা মোটামুটি সবারই জানা। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে মারিয়া। তার মাকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহকর্মীর কাজ করতে হয়েছে। মায়ের এই পরিশ্রম পুঁজি করেই দুমুঠো ভাত জুটেছে মারিয়াদের। মারিয়া বড় হয়ে সময়ে সময়ে গৃহপরিচারিকার কাজে হাত লাগিয়েছে মা ও বড় বোনের সঙ্গে। এরপর ফুটবলের স্পর্শে ভোজবাজির মতো পাল্টে যাচ্ছে মারিয়ার জীবন। এবার তাদের ঘরে মাটির দেয়াল ভেঙে টিন দেওয়া হবে বলে জানায় মারিয়া, ‘মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। মা কী যে খুশি! আমাদের এত দিনের অভাব এবার কিছুটা কমবে। মা বলেছে একটা ভালো ঘর বানাবে। কিছু জমি কিনবে।’
অনূর্ধ্ব-১৬ দলের আর একজন অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ডিফেন্ডার নাজমা খাতুন। চার ভাইবোনের মধ্যে নাজমাই ছোট। বাবা আবুল কালামের বয়স হয়েছে, তাই এখন বাড়িতেই থাকেন। আর গৃহিণী মায়ের কী বর্ণনাই–বা দেওয়া যায়! এমন একটি পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকার গুরুত্ব যে কী, তা সহজেই অনুমেয়। মেয়েটা শুধু উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল, ‘আমাদের ভালো একটা ঘর হবে। কিছু জমিজমা কিনতে পারব। এবার আমাদের কষ্টটা কমবে।’
নাজমার মতো আরেকজন কলসিন্দুরের তহুরা খাতুন। দুর্দান্ত এই স্ট্রাইকারের বাবা ফিরোজ মিয়াকে আর বর্গা চাষি হয়ে থাকতে হবে না বলে উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে যাচ্ছে তহুরার কণ্ঠে, ‘আমার আব্বা বর্গা জমি চাষ করত। নিজেদেরও কিছু জমি আছে। আব্বা বলছে, আমার টাকা দিয়ে এবার আরও জমি কেনা হবে।’
মেয়েদের এই টুকরো টুকরো উচ্ছ্বাস তাদের পরিবারে শান্তির সুবাতাসের প্রতিচ্ছবি। মাঠে শুধু প্রতিপক্ষ দল নয়, অভাব জয় করার জন্যও তারা ছুটছে অদম্য গতিতে।