এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি
দুই সপ্তাহের ব্যস্ত সূচিতে যতি টানছে সবাই। এই সূচির কারণে মাত্র ১৪ দিনেই ১৩টি ওয়ানডে ম্যাচের দেখা মিলেছে। গতকাল এশিয়া কাপ শেষ হতেই সবাই নিজ নিজ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিছু দিন পরে জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠবে বাংলাদেশও। কিন্তু এশিয়া কাপের রেশ কাটার আগেই এ টুর্নামেন্ট থেকে পাওয়া অর্জনগুলো আরেকবার দেখে নেওয়া যাক।
ভারত-বাংলাদেশই এখন এশিয়ার সেরা দুই দল
এশিয়া কাপ হোক কিংবা বিশ্বকাপ, অথবা আইসিসির অন্য কোনো টুর্নামেন্টে, শুরুতেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে শোরগোল শুরু হয়ে যায়। এ দুই দেশের মধ্যকার অতীত ইতিহাস টেনে কতটা ঝাঁজালো এ ম্যাচ, কতটা টান টান উত্তেজনা থাকবে এ ম্যাচে নিয়ে—সে আলোচনা হয়। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরু হলেই সে উত্তেজনায় জল ঢেলে দেয় দুই দলই। নিকট অতীতের কোনো ম্যাচেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো ছাপ ছিল না। অথচ, টান টান উত্তেজনা হোক কিংবা লড়াইয়ের তীব্র ঝাঁজ—সবই এখন দিচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। টানা দুই টুর্নামেন্টে দুই দলের ফাইনাল খেলা বুঝিয়ে দিয়েছে এশিয়ার সেরা দুই দলের মুকুট এখন ভারত ও বাংলাদেশের। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সে তুলনায় পিছিয়ে আছে।
তামিম-সাকিব ছাড়াও জয় পাওয়া সম্ভব
এবারের এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি, বাড়তি আত্মবিশ্বাস। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ থেকেই তামিমকে পায়নি বাংলাদেশ। পাকিস্তানের সঙ্গে অলিখিত সেমিফাইনালে সাকিবকেও দেশমুখী হতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও দল হাল ছাড়েনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে পেয়েছে অনায়াস জয়। পাঁচ বছর পর দলের ব্যাটিং, বোলিংয়ের দুই ভরসাকে ছাড়া জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ফাইনালেও শেষ বল পর্যন্ত লড়েছে। ২২২ রানের ছোট পুঁজি নিয়েও এমন লড়াই সবাইকে স্বস্তি করেছে। বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে, ২০১৯ বিশ্বকাপে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি জন্ম নিলেও সেটা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা দলের আছে।
সেই মোস্তাফিজকে ফিরে পাওয়া
কোনটি এগিয়ে থাকবে? আফগানিস্তানের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য সে ওভার, পাকিস্তানের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া সেই দুই স্পেল নাকি কাল ভারতের বিপক্ষে চাপের মুখেও অমন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বল করে যাওয়া। এমন তিনটি পারফরম্যান্সের ফলে এশিয়া কাপেরই উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ উইকেট প্রাপ্তিও আড়ালে চলে গেছে। চোট জর্জরিত ছোট ক্যারিয়ারে ২০১৫ সালের পর থেকেই আর শুরুর সেই মোস্তাফিজের দেখা মিলছিল না। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যে ইঙ্গিত মিলেছিল, সেটাই সত্য হয়ে উঠেছে এশিয়া কাপে। আবারও দলের বোলিং ভরসা হয়ে উঠছেন মোস্তাফিজ। যখনই দলের প্রয়োজন, তখন বল তুলে দেওয়া যাচ্ছে মোস্তাফিজকে। আবারও তাঁকে নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে প্রতিপক্ষ। ২০১৯ বিশ্বকাপে ভালো ফল পেতে চাইলে এ মোস্তাফিজকেই বড় দরকার বাংলাদেশের।
লিটন-মিঠুনদের উত্থান
এখনই কিছু বলাটা বাড়াবাড়ি। গত এক দশক ধরে তামিম ইকবালের সম্ভাব্য সঙ্গীর খোঁজ চলছে। সৌম্য সরকারের আবির্ভাবের পর কিছুদিন ভাবা হয়েছিল, ধাঁধার উত্তর মিলেছে। কিন্তু সেই সৌম্যই এখন সবাইকে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছেন। লিটন দাসও যে সে পথে হাঁটবেন না, সে নিশ্চয়তা নেই। তবে গতকালের সেঞ্চুরি কিংবা আফগানিস্তানের বিপক্ষে চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস দুটি অন্তত লিটনের ক্ষমতা নিয়ে সবার সন্দেহ মুছে দিয়েছে। না শুধু দুর্দান্ত সব শটে চার ছক্কা হাঁকাতে পারেন বলেই নয়, স্ট্রাইক রোটেট করে রানের চাকাও সচল রাখতে পারেন লিটন। যে কাজটা বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাটসম্যান করতে পারেন না।
ফাইনালে মিঠুনের কাছে বাড়তি আশা ছিল। এশিয়া কাপে ভয়ংকর চাপে পড়া দুটি ম্যাচেই মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দুর্দান্ত দুটি জুটি গড়েছেন মিঠুন। এমন ভাপে ব্যাট করতে পারার ক্ষমতা মিঠুনকে আলাদা করে দিচ্ছে অন্যদের থেকে। ফাইনালে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট না হলে হয়তো ভিন্ন কিছু হলেও হতে পারত। তবে এর আগেও বারবার দলে এসেও হারিয়ে যাওয়া মিঠুন এবার অন্তত সহজে হাল ছাড়বেন না এ ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।
অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহর প্রত্যাবর্তন
বাংলাদেশ দলের মূল পাঁচের একজন তিনি। কিন্তু গত কিছুদিন মাহমুদউল্লাহ যেন শুধু মিডল অর্ডারে দ্রুত রান নেওয়ার দায়িত্বেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। গত তিন বছর ওয়ানডেতে কোনো উইকেট পাননি এই অলরাউন্ডার! টেস্ট অভিষেকেই পাঁচ উইকেট পাওয়া এই অফ স্পিনার নিজেকে ফিরে পেয়েছেন এই এশিয়া কাপে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করেছেন। ভারতের বিপক্ষেও গুরুত্বপূর্ণ এক বেক থ্রু এনে দিয়েছেন। এশিয়া কাপ থেকে তাই বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়েই ফিরছেন মাহমুদউল্লাহ।