হাতটাই যাচ্ছিল সাকিবের
>চোট পাওয়া আঙুলে সংক্রমণের শুরু সাকিব দুবাই যাওয়ার পর থেকেই। কিন্তু সঠিক সময়ে সেটা ধরা না পড়ায় বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছিলেন তিনি।
পরশু সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের উড়ান ধরার কথা ছিল সাকিব আল হাসানের। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন চোট পাওয়া হাতে প্রচণ্ড ব্যথা। ব্যথানাশক খেয়ে কি তাহলে লাভ হচ্ছে না! গায়েও জ্বর জ্বর ভাব। দেরি না করে অ্যাপোলো হাসপাতালে গেলেন। শুনলেন দুঃসংবাদ। চোট পাওয়া বাঁ হাতের কড়ে আঙুল থেকে সংক্রমণ (ইনফেকশন) ছড়িয়ে পড়েছে। পুঁজ জমে মারাত্মক অবস্থা।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান সাকিব। অস্ত্রোপচার করে পুঁজ বের করার পর কাল তাঁর প্রশ্ন, ‘এই অবস্থা আমার গত ১৪-১৫ দিন ধরে। এখানে একজন ডাক্তার সেটা দেখেই বুঝে গেলেন। কিন্তু এই ১৪-১৫ দিনে আমাদের ফিজিও কিছুই বুঝল না!’
দুবাই যখন এশিয়া কাপের ফাইনালে টগবগ করে ফুটছে, কাল সাকিব তখন কাতরাচ্ছেন অ্যাপোলো হাসপাতালের বিছানায়। হাতের ব্যথা আর ফাইনালে খেলতে না পারার যন্ত্রণা তো ছিলই, সঙ্গে যোগ হয়েছে মাস তিনেকের জন্য খেলা থেকে ছিটকে পড়ার হতাশা। মুঠোফোনে কাতর কণ্ঠ, ‘পুঁজ বের করে ফেলায় এখন ভালো আছি। হয়তো কাল-পরশুর (আজ-কাল) মধ্যে বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। কিন্তু সমস্যা হলো সংক্রমণটা সারার আগ পর্যন্ত দুনিয়ার কেউই ওখানে অস্ত্রোপচার করতে পারবে না। এটা ঠিক হতে ২-৩ সপ্তাহ লাগবে। অস্ত্রোপচার করলে আরও ৮ সপ্তাহ। সব মিলিয়ে প্রায় তিন মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে।’
হাতে ব্যথা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে খেললেও চোটের জায়গাটা তখন ফোলেনি। কিন্তু এশিয়া কাপ খেলতে সাকিব যখন দুবাইয়ে গেলেন, তাঁর হাত বেশ ফোলা এবং সেটি প্রতিদিনই একটু একটু করে বেড়েছে। বেড়েছে ব্যথাও। ধারণা করা হচ্ছে, চোট পাওয়া আঙুলের গোড়ায় সংক্রমণের শুরু তখন থেকেই। অবস্থা দেখে জাতীয় দলের ফিজিও তিহান চন্দ্রমোহনও নাকি তখন অবাক হয়ে সাকিবকে বলেছিলেন, ‘চোট পাওয়ার পরও তো তোমার হাত এত ফোলেনি!’
আসলে কিন্তু সমস্যাটাই ধরতে পারেননি তিনি। ফিজিওর নাকি ধারণা ছিল, কিছুদিন ব্যাট করছিলেন না বলে জায়গাটা ও রকম ফুলে গেছে। ব্যাটিং শুরু করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজারের মাধ্যমে কাল এ নিয়ে ফিজিওর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু এশিয়া কাপের ফাইনাল ছিল বলে সেটি সম্ভব হয়নি।
সাকিব দেশে আসার আগে দুবাই থেকে নিয়মিতই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসকদের কাছে এক্স-রে ও স্ক্যান রিপোর্ট পাঠিয়েছেন চন্দ্রমোহন। সেসব রিপোর্ট দেখে সংক্রমণ বোঝা যদিও কঠিন, তবু প্রথম সন্দেহটা করেন অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গ্রেগ হয়। সাকিব যেদিন দেশে ফিরে আসবেন, সেদিন সকালে ফিজিও তাঁকে গ্রেগ হয়ের শঙ্কার কথা জানান। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি। এতটাই যে, পরশু সাকিবের হাতের অবস্থা দেখে অ্যাপোলোর চিকিৎসকের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘ওহ মাই গড! এখানে তো পুঁজ হয়ে গেছে! আপনি এত দিন ধরে কীভাবে খেলেছেন?’
সাকিব চেয়েছিলেন, ব্যথাটা কোনোভাবে কমাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র না হলেও অন্তত সিঙ্গাপুরে গিয়ে অস্ত্রোপচার করাবেন। কিন্তু এখানকার চিকিৎসকেরা সাবধান করে দেন-হাতের এই অবস্থা নিয়ে কোথাও যাওয়া যাবে না। ‘কাল (পরশু) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকেরা বলেন, যত দ্রুত সম্ভব অস্ত্রোপচার করে পুঁজ বের করতে হবে। দেরি করলে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সংক্রমণটা আর আমার আঙুলে থাকেনি, কবজি পর্যন্ত চলে এসেছিল। ব্যথাও দ্রুত বাড়ছিল। এটা যদি আরও কয়েক দিন পর ধরা পড়ত, আমার হাতটাই অকেজো হয়ে যেতে পারত’-কাল এই প্রতিবেদককে বলছিলেন সাকিব।
তিনি চোটটা পান এ বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ফিল্ডিং করতে গিয়ে। হাড়ে কোনো চিড় ধরা না পড়লেও বাঁ হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলের গোড়া মচকে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় টিস্যু। সাকিব চেয়েছিলেন, এশিয়া কাপে না খেলে এই সময় অস্ত্রোপচার সেরে ফেলবেন। পরে মত বদলান নিজেই, ‘বিসিবি সভাপতি আমাকে বলেছিলেন যদি পারি এশিয়া কাপে খেলতে। আর না পারলে অস্ত্রোপচার করাতে। সিদ্ধান্তটা আমাকেই নিতে বলেন। আমি তখন ফিজিওর কাছে জানতে চাই, খেললে অবস্থা আরও খারাপ হবে কি না। সে বলল, সে রকম কিছু হওয়ার শঙ্কা নেই। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, যেহেতু এশিয়া কাপ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এটুকু ব্যথা নিয়ে এই ৪-৫টা ম্যাচ খেলে ফেলি।’
সে সিদ্ধান্ত যে এতটা ভুল প্রমাণিত হবে, সাকিব বা চন্দ্রমোহন কেউই তা ভাবতে পারেননি। ফিজিওর ভুলটাকে তাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে চান সাকিব, ‘ফিজিও সমস্যাটা ধরতে পারেনি, এটা সত্যি। একটু তো ভুল হয়েছেই। কিছুটা দায় তার ওপর অবশ্যই বর্তায়। তাই বলে সব দোষ তার ঘাড়ে দেব না। সমস্যাটা যে সংক্রমণের দিকে যেতে পারে, এটা আসলে আমরা কেউই বুঝতে পারিনি।’
সাকিব তা না-ই বুঝতে পারেন। কিন্তু তিহান চন্দ্রমোহনও যদি না বোঝেন, তাহলে আর তিনি ফিজিও কেন!