বড় মঞ্চের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আরিফুল-মিঠুন
>প্রথমবার ওয়ানডেতে ডাক পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত আরিফুল হক। মোহাম্মদ মিঠুনের লক্ষ্য জাতীয় দলে জায়গা ধরে রাখা
‘বারো বছরের স্বপ্ন পূরণ হলো! আমার কাছে এই আনন্দ যে কী, তা বোঝাতে পারব না।’ ওয়ানডে দলে ডাক পাওয়া আরিফুল হকের মুখে এমন কথা শুনতে পাওয়াটাই স্বাভাবিক। একজন ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলার আজন্ম সাধ তাঁর পূরণ হয়েছে আগেই। বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে অভিষেকের পর খেলে ফেলেছেন ছয়টি ম্যাচ। অবশেষে ওয়ানডেতে ডাক পেলেন এশিয়া কাপের মতো বড় মঞ্চে। আরিফুলের কণ্ঠে যেন তাই উচ্ছ্বাসের স্রোত।
কিন্তু বড় মঞ্চ যে দায়িত্বও বাড়িয়ে দেয়। আরিফুল বড় শট খেলতে পারেন, শেষ দিকে দ্রুত রান বাড়িয়ে নেওয়ার সামর্থ্য দেখিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। একাদশে সুযোগ পেলে সেটি কাজে লাগাতে চান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান, ‘আমি তো একেবারে নতুন। এক ম্যাচে সুযোগ পেলে সেটিই কাজে লাগাতে হবে আমাকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে যা-ই করি না কেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেসব কেউ দেখবে না।’
নিজেকে প্রমাণের এমন তাগিদ আবার চাপ না হয়ে বসে! টি-টোয়েন্টির শুরুতে সেই চাপটা থাকলেও আরিফুল এখন সেই চাপ সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেন এবং আশা করেন সরিয়ে রাখতে পারবেন। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ছয়টি, তবে ব্যাটখানাকে আগ্রাসী বানিয়ে তুলতে পারেননি। সর্বোচ্চ রান ১৮* (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে)। ওয়ানডেতে সুযোগ পেলে দৃশ্যপটটা বদলাবে এমন একটা অঙ্গীকারের সুর আরিফুলের কণ্ঠে, ‘আমি যেখানে ব্যাট করি, ওই ছয়-সাত নম্বরে নামলে বল থাকে কম। ইনিংসটা বড় করার সুযোগও বেশি থাকে না। ওয়ানডেতে হয়তো আরেকটু বেশি সুযোগ পাওয়া যাবে ইনিংস সাজানোর। যদি বেশি ওভার খেলার সুযোগ আসে চেষ্টা করব ইনিংস শেষ করে ফেরার। আর অল্প বল থাকলে অন্য হিসাব। আসলে চেষ্টা থাকবে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করার।’
মারকাটারি ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিতি থাকলেও আরিফুল একজন পেসারও। ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিং করেন নিয়মিত। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই সুযোগ পেয়েছেন একটি মাত্র ম্যাচে। দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচে নেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক আসগর আফগানের উইকেটটি। নিজের বোলার সত্তার প্রতি আস্থাশীল আরিফুল আশায় আছেন ওয়ানডেতে বোলিংয়ের সুযোগ পাবেন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন তো বলেই দিয়েছেন, অলরাউন্ডার বিবেচনায় ডাকা হয়েছে আরিফুলকে। সেই চ্যালেঞ্জ নিতে নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত ঘোষণা করে দিয়েছেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
প্রস্তুত আরেকজনও। ঘরোয়া ক্রিকেটের রানের মধ্যে থাকা মোহাম্মদ মিঠুন আলো ছড়িয়েছেন আয়ারল্যান্ডে ‘এ’ দলের সফরেও। ৪৭.৭৫ গড়ে পাঁচটি পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে করেছেন ১৯১ রান, সর্বোচ্চ অপরাজিত ৮৭। প্রায় সাড়ে তিন বছরের ব্যবধানে ওয়ানডেতে ডাক পান এ বছরের শুরুতে ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে। সেই ম্যাচে ১০ করে আউট হয়েছিলেন। আবার দলে ফিরলেন প্রায় আট মাসের ব্যবধানে। ‘এ’ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড সফরের পারফরম্যান্সটা আবার জায়গা ফিরিয়ে আনায় দলে কিছু করে দেখাতে চান, ‘একাদশে জায়গা হবে কি না, খেললে কোথায় নামানো হবে, আমি জানি না। তবে আমার নিজের প্রস্তুতিটা আমি সেরে রাখব, যাতে দলের প্রয়োজনে যেকোনো জায়গায় নেমে রান করতে পারি।’
মিঠুনের দলে ডাক পাওয়ার পেছনে স্পিন খেলার সামর্থ্যের বিষয়টিও বিবেচনায় ছিল বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক। গত জুনে দেরাদুনে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ ব্যাটিং নাকাল করে ছেড়েছিলেন আফগানিস্তানের রশিদ খান-মুজিব জাদরানরা। এশিয়া কাপে স্পিন সামলানোর একটা দায়ও থাকছে মোহাম্মদ মিঠুনের। কীভাবে সামলাবেন? ‘এমন নয় যে রশিদ খানরা কোনো বাজে বল করে না’-সোজা উত্তর মিঠুনের, ‘আমার চেষ্টা থাকবে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলা। দলের জন্য অবদান রাখার চেষ্টা করা, সেটা স্পিন সামলে হোক বা অন্য কোনোভাবে। প্রতিপক্ষ-বোলার এসব না ভেবে বল দেখে খেলাটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
বহুল চর্চিত একটি প্রসঙ্গ নিজেই টেনে আনলেন মিঠুন, ‘দেখেন কত দিন ধরে আমাদের দলে মূল পারফরমার পাঁচজন সিনিয়র। আমরা যারা জুনিয়র, আমাদেরও পারফর্ম করে নিজেদের প্রয়োজনীয়তার প্রমাণ দিতে হবে। আমাদের লক্ষ্য যে চ্যাম্পিয়ন হওয়া, সে জন্য সবার অবদান রাখাটা জরুরি।’
কথায় কথায় এশিয়া কাপে স্বপ্নের কথাটা আরেকবার শুনিয়ে গেলেন মোহাম্মদ মিঠুন।