ক্যারিবীয় দ্বীপে এক টুকরো বাংলাদেশ!

গায়ানায় ম্যাচ দেখতে বাংলাদেশ থেকে কোনো দর্শক আসেননি। তবু লাল-সবুজ পতাকার দেখা মিলল গ্যালারিতে গায়ানা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ থেকে হাজারো মাইল দূরের এই গায়ানায় সাকিব-তামিমদের উৎসাহ দেওয়ার মতো কজনকে পাওয়া গেল


গায়ানা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের গ্রাস মাউন্ডে (পার্টি স্ট্যান্ড) সকালেই লাল-সবুজ পতাকাটা চোখে পড়ল। তাতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। আন্তর্জাতিক ম্যাচে আয়োজকেরা স্বাগতিকদের সঙ্গে সফরকারী দলের জাতীয় পতাকা ওড়াবে, এটাই নিয়ম। কিন্তু গ্রিন গ্যালারিতে লাল সবুজ পতাকা নিয়ে এল কারা?

গায়ানা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বাংলাদেশের কজন দর্শক। ছবি: রানা আব্বাস
গায়ানা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বাংলাদেশের কজন দর্শক। ছবি: রানা আব্বাস

১৫ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব পেরিয়ে গায়ানায় ম্যাচ দেখতে বাংলাদেশ থেকে কোনো দর্শক আসেননি। এসেছেন রোহান হাসান, সনেট বড়ুয়া, শিমুল বড়ুয়া, দেলোয়ার হোসেনদের মতো কয়েকজন প্রবাসী। রোহান পরিবার নিয়ে থাকেন গায়নায়। শুনেছেন বাংলাদেশ খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, এ সুযোগ কী আর হাতছাড়া করা যায়! ভারতীয় বংশোদ্ভূত গায়ানিজ স্ত্রী সোনম হাসান, শাশুড়ি ও দুই সন্তানকে নিয়ে সকাল সকাল হাজির গ্যালারিতে।

রোহান পরিবারের সঙ্গে অবশ্য দুটি পতাকা, বড়টি বাংলাদেশের। ছোট পতাকাটি গায়ানার। রোহান বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে বসে আছেন। তাঁর ছোট্ট ছেলেটার হাতে আবার গায়ানার পতাকা। বাবা-পুত্র যেন দুটি দেশকে মিলিয়ে দিয়েছেন এক বিন্দুতে। রোহানের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন থাকেন ঢাকার উত্তরায়। পড়াশোনা করেছেন নিউইয়র্কে। পরে ব্যবসায়ী হিসেবে থিতু হয়েছেন গায়ানায়। বিয়েও করেছেন এখানে। ১০-১২ বছরের প্রবাস জীবনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ম্যাচ দেখতে এসেছেন। রোমাঞ্চ তাঁর চোখেমুখে, ‘শুনলাম এখানে বাংলাদেশ খেলবে, প্রথমবারের দলের খেলা দেখতে চলে এলাম। এটাই আমার প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। দেশের ঘ্রাণ পেতে এখানে আসা। বাংলাদেশের কিছু মানুষকে এখানে দেখতে পাচ্ছি, অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে। পুরো স্টেডিয়ামে আমরা হাতেগোনা কজন আছি। তবুও দেশের প্রতিনিধিত্ব তো হচ্ছে।’

হাতে গোনা বলতে চারজন। বাকি তিনজন নিচের সারিতে বসা। এই ছোট্ট গ্রুপটার প্রধান সম্ভবত সনেট। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বাড়ি। গায়ানার নাগরিকত্ব পাওয়া সনেটই জানালেন, পুরো জর্জটাউন শহরে মাত্র ১০-১৫জন বাংলাদেশি আছে। এই শহরে গার্মেন্টস ও হোটেলের ব্যবসা করেন তিনি। তাঁর পথ ধরে গত বছর এসেছেন ছোট ভাই শিমুলও। সনেটের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন দেলোয়ার। সবাই গায়ানা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে এসেছেন মাশরাফি-সাকিবদের উৎসাহ দিতে। যদিও তাঁদের চিৎকার মুহূর্তেই মিলিয়ে যাচ্ছে ক্যারিবীয়দের অবিরত উল্লাসে। আজ মাঠে যে অনেক দর্শক এসেছে, ব্যাপারটা তাও নয়। ১৫ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গায়ানা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেরেকেটে ১৫শ দর্শকও হয়নি। কেন এই দর্শকখরা? স্থানীয় সংবাদপত্র ‘স্টাব্রোকে’র ক্রীড়া প্রতিবেদক রোমারিও সামারাওর যুক্তিটা বেশ অবাক করার মতো, ‘দর্শকেরা পছন্দ করে টি-টোয়েন্টি। তারা টাকা জমিয়ে রাখছে সামনের সিপিএলের (ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) জন্য।’

গায়ানা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বাংলাদেশের কজন দর্শক। ছবি: রানা আব্বাস
গায়ানা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বাংলাদেশের কজন দর্শক। ছবি: রানা আব্বাস

তবুও ১৫শ দর্শকের সঙ্গে চিৎকার করে রোহান-সনেটরা পারবেন না। কিন্তু যে উদ্দেশে আসা, সেটি তো পূরণ হয়েছে। তাঁরা এসেছেন বাংলাদেশকে অনুপ্রাণিত করতে। এসেছেন বাংলাদেশের জয় দেখতে। বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছে। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের দিকে যেতেই গ্যালারি থেকে কে বা কারা যেন হাঁক ছুড়লেন, ‌‌‌‘ও প্রথম আলো ভাই!’

ক্যারিবীয় দর্শকেরা বিরস বদনে বাড়ি ফিরে গেছে, সনেটরা তখনো গ্যালারিতে। লাল-সবুজ পতাকা হাতে বসে আছেন। সাকিবরা মাঠ না ছাড়া পর্যন্ত তাঁরাও ঘরে যাবেন না।