বিশ্বকাপে তারা হবেন এই 'অখ্যাত'রা!
বিশ্বকাপ বিশ্বজয়ের মঞ্চ। তরুণ প্রতিভাবানদের জন্য বিশ্বের কাছে নিজেকে চেনানোরও। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে হামেস রদ্রিগেজ যেভাবে চিনিয়েছেন নিজেকে। পোর্তো-মোনাকোয় হয়ে আলো ছড়িয়েছিলেন বটে, কিন্তু গত বিশ্বকাপের আগে বিশ্বজুড়ে কজনই-বা আর চিনতেন হামেসকে? এর আগের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে টমাস মুলার নামটা যেমন ছড়িয়ে গেছে সবদিকে। রাশিয়াতে এবার কে হবেন ‘রদ্রিগেজ’ বা ‘মুলার’?
বয়স এখনো মধ্য বিশে যায়নি। হয়তো ক্লাবে মাত্রই পাপড়ি মেলে ধরতে শুরু করেছেন। বিশ্বকাপেও সুবাস ছড়াতে পারেন, এমন ১০ জনকে বেছে নেওয়া হলো
টিমো ভেরনার, জার্মানি
বয়স: ২২, ফরোয়ার্ড
এত এত খেলোয়াড় আক্রমণে এত ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে খেলতে পারেন, জার্মানির ফরোয়ার্ড লাইন কেমন হবে, তা অনুমান করা মুশকিল। তবে স্ট্রাইকার হিসেবে কোচ জোয়াকিম লোর ভরসা হওয়ার কথা ভেরনারই। গত দুই মৌসুমে ক্লাব আর বি লাইপজিগের হয়ে জার্মান লিগে ৪৮ গোল তাঁর। ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা, গতি আর তার চেয়েও ভয়ংকর ফিনিশিং মিলিয়ে ভেরনার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতাও হয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ক্রিস্টিয়ান পাভন, আর্জেন্টিনা
বয়স: ২২, মিডফিল্ডার
হাইতির বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের পর লিওনেল মেসি নিজেই বলেছিলেন, ‘মাঠে আমি একজন সঙ্গী খুঁজে পেয়েছি, ওর নাম ক্রিস্টিয়ান পাভন!’ গত নভেম্বরে অভিষেকের পর আর্জেন্টিনার জার্সিতে এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচ ম্যাচ খেলা পাভনই হয়ে যেতে পারেন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ‘ট্রাম্পকার্ড’। চোট মানুয়েল লানজিনির বিশ্বকাপ শেষ করে দিয়েছে, বোকা জুনিয়র্সের পাভনই হয়তো এখন আর্জেন্টিনা কোচ হোর্হে সাম্পাওলির নতুন ভরসা।
গনসালো গেদেস, পর্তুগাল
বয়স: ২১, ফরোয়ার্ড
তরুণ প্রতিভা উঠে আসার যে ঢেউ লেগেছে পর্তুগালের ফুটবলে, গেদেস তাঁদের একজন। চোখ ধাঁধানো গতি, দুর্দান্ত ড্রিবলিং তো আছেই, মুগ্ধ করতে পারেন বক্সের বাইরে থেকে গোলার মতো বাঁকানো শটেও। আলজেরিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের আগে সর্বশেষ প্রীতি ম্যাচে দুই গোল করে বিশ্বকাপে পর্তুগালের একাদশে জায়গা পাওয়ার দাবিটাও জানিয়ে রেখেছেন। কে জানে, মেসির পাভনের মতো ইনিও মাঠে পর্তুগাল দলে রোনালদোর সবচেয়ে ভালো ‘সঙ্গী’ হয়ে যান কি না!
ডেভিনসন সানচেস, কলম্বিয়া
বয়স: ২১, ডিফেন্ডার
প্রিমিয়ার লিগের দর্শকেরা তাঁকে ভালোই চেনেন। ডাচ ক্লাব আয়াক্স থেকে এসে এই মৌসুমে টটেনহাম রক্ষণের বড় ভরসাই হয়ে উঠেছেন। এমনই অবস্থা, টটেনহাম কোচ মরিসিও পচেত্তিনো যে পরীক্ষিত ডিফেন্ডার টবি অলডারউইরেল্ডকে ছেড়ে দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন, সেটির একটা কারণ হয়তো সানচেসের পারফরম্যান্স। প্রতিপক্ষকে আটকানো, আর নিজেদের রক্ষণ থেকে বল বের করে আনার সামর্থ্য...কলম্বিয়ার কোচ ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনিরও বড় ভরসা তিনিই।
সের্গেই মিলিঙ্কোভিচ-সাভিচ, সার্বিয়া
বয়স: ২৩, মিডফিল্ডার
মাত্র শেষ হওয়া মৌসুমে লাৎসিওর হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-জুভেন্টাসের মতো ক্লাবের চোখ এখন তাঁর দিকে। ‘অলরাউন্ড’ মিডফিল্ডার বলতে যা বোঝায়, মিলিঙ্কোভিচ-সাভিচ তা-ই। মৌসুমে ১৪ গোলই তা বলে। দারুণ প্রতিভায় পূর্ণ এবার বিশ্বকাপের সার্বিয়া দলটা, তবু ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেওয়ার মুহূর্তের দরকার পড়লে, ডাগআউট থেকে ‘এসএমএস’ যেতে পারে তাঁর দিকেও। সেটি শুধু ‘এসএমএস’ তাঁর নামের সংক্ষিপ্ত রূপ বলেই নয়!
আলভারো অদরিওসোলা, স্পেন
বয়স: ২২, রাইটব্যাক
তাঁকে বাদ দিয়ে স্পেনের রক্ষণের ভবিষ্যৎ তারকার তালিকা করা যাবে না। বলা হয়, অদরিওসোলা যতটা ঠান্ডা মাথায় ডিফেন্ড করেন, তাঁর যে মান, সেটি এত কম বয়সীর মধ্যে এত তাড়াতাড়ি খুব একটা দেখা যায় না। রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনা তো আর এমনি এমনি রিয়াল সোসিয়েদাদের এই ডিফেন্ডারকে পেতে এত আগ্রহ দেখাচ্ছে না! দানি কারভাহাল চোট থেকে সেরে না উঠলে বিশ্বকাপে স্পেনের রক্ষণের সুযোগ মিলতে পারে অদরিওসোলার।
হিরভিং লোজানো, মেক্সিকো
বয়স: ২২, ফরোয়ার্ড
মেক্সিকোর পাচুকা থেকে মাত্র শেষ হওয়া মৌসুমেই হল্যান্ডের ক্লাব পিএসভি আইন্দহফেনে এসেছেন লোজানো। ২৯ ম্যাচে ১৭ গোলই বলে নতুন ক্লাব, নতুন পরিবেশে কেমন করেছেন। অনেক বছর ধরে মেক্সিকোর আক্রমণের ভরসা হাভিয়ের হার্নান্দেজের ফর্মটা তেমন ভালো যায়নি, সেক্ষেত্রে গোলের খোঁজে লোজানোর দিকেই চেয়ে থাকবে ‘এল ত্রি’ ভক্তরা।
লি সিউং-উ, দক্ষিণ কোরিয়া
বয়স: ২০, মিডফিল্ডার
যে কয়জন অপ্রাপ্তবয়স্ক ফুটবলারকে নিজেদের একাডেমিতে আনতে অনিয়ম করে ২০১৪ সালে দলবদলে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিল বার্সেলোনা, লি তাদের একজন। একসময় বার্সেলোনার একাডেমির সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ বলা হতো তাঁকে, ডাকা হতো ‘কোরিয়ান মেসি’ নামেও। গত বছর ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে নজর কেড়েছিলেন লি। গত মাসে হন্ডুরাসের বিপক্ষে জাতীয় দলে অভিষেক ম্যাচে তারকা স্ট্রাইকার সন হিউং-মিনকে একটি গোল গড়েও দিয়েছিলেন।
ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার-আরনল্ড, ইংল্যান্ড
বয়স: ১৯, রাইটব্যাক
চ্যাম্পিয়নস লিগের রানার্সআপ লিভারপুলে এই মৌসুমে কী দারুণই না খেলেছেন! ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট তিনজন সেন্টারব্যাকের পাশে দুই উইংব্যাক খেলাতে পারেন, তাতে অ্যালেক্সান্ডার-আরনল্ডের লড়াইটা কিয়েরান ট্রিপিয়েরের সঙ্গে। রক্ষণে দারুণ আর ইংল্যান্ডের আক্রমণে হ্যারি কেন-ডেলে আলিদের গোলেরও জোগান হতে পারে তাঁর ভয়ংকর সব ক্রসও। চোখ রাখতে পারেন তাঁর ফ্রি-কিক, কর্নারেও।
সরদার আজমুন, ইরান
বয়স: ২৩, স্ট্রাইকার
রুবিন কাজানে শুরু, মাঝে চার মৌসুম রোস্তভে কাটিয়ে আবার এই মৌসুমে ফেরা কাজানেই। রাশিয়াতেই পেশাদার ক্যারিয়ারের পাঁচ বছর কাটানো আজমুনের কাছে বিশ্বকাপটা তো ঘরের আঙিনায় উৎসবের মতোই। কার্লোস কুইরোজের পাল্টা আক্রমণনির্ভর ইরানে আজমুনের গতি আর চাতুর্যের গুরুত্ব কতটা, সেটা পরিসংখ্যানই বলে। ২০১৪ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর ৩৩ ম্যাচে ২৪ গোল, যার ১১টি এসেছে এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে।