ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপ জিতল মেয়েরা
>এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। দ্বিপক্ষীয় সিরিজের বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটাই বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা
মেয়েদের এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। শেষ বলে ২ রান দরকার, এমন নাটকীয় ম্যাচে শেষ বলেই জিতল বাংলাদেশের মেয়েদের। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এ এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। মেয়েরা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম টুর্নামেন্ট ট্রফি এনে দিল। ভারতকে ৯ উইকেটে ১১২ রানে আটকে ফেলে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে তুলল ১১৩ রান।
ইতিহাসই গড়ল বাংলাদেশের মেয়েরা, যে ইতিহাস গড়তে পারেনি ছেলেরা। দ্বিপক্ষীয় সিরিজের বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশকে প্রথম কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা উপহার দিল সালমা খাতুনের দল। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আইসিসি ট্রফি জিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রবেশ করেছিল নতুন অধ্যায়। কিন্তু সেই আইসিসি ট্রফির পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এগিয়ে গেলেও কখনো তিন বা এর বেশি দল খেলেছে—এমন টুর্নামেন্ট জিততে পারেনি। অনেকবার কাছাকাছি গেছে। আজও ভয় জেগেছিল। কাছে গিয়েও কি পারবে না বাংলাদেশ! কিন্তু সেই ভয় মুছে দিল মেয়েরা।
টুর্নামেন্টেজুড়েই দারুণ খেলা রুমানা-ফারাজানারা এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেই ইতিহাস গড়েছিল। মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটা ছিল বাংলাদেশের প্রথম ফাইনাল। আজ সেই ফাইনাল জিতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এক হিরণ্ময় পাতার জন্ম দিল সালমাদের দল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটাই যে বাংলাদেশের প্রথম টুর্নামেন্ট শিরোপা, সেটাও আবার ভারতকে হারিয়ে! যে ভারতের মেয়েরা এই এশিয়া কাপে এর আগে সব কটি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন (৬) দল। টানা সপ্তমবার উঠে এসেছে ফাইনালে। এবার ভারতের রাজপাট ভেঙে এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতে নিল আমাদের মেয়েরা।
জয়ের জন্য ১১৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হলেও মাঝে বেশ চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে ২৮ রানের জুটিতে দলকে জয়ের পথে ফেরান রুমানা আহমেদ-নিগার সুলতানা। পুনম-ঝুলন গোস্বামীদের নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেংথের জবাবে রয়েসয়ে খেলেছেন এই দুই ব্যাটার। তবে বাজে বল পেলে ছেড়ে দেননি। ১৫তম ওভারে ভারতের পেসার ঝুলনের শেষ তিন বলেই চার মেরে লক্ষ্যটাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসেন নিগার। জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৩১ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। হাতে ছিল ৭ উইকেট।
এমন পরিস্থিতিতে পরের ওভারেই নিগারকে (২৭) তুলে নেন পুনম। বাংলাদেশের স্কোর তখন ১৫.২ ওভারে ৪ উইকেটে ৮৩। দারুণ বোলিং করেছেন ভারতের এই লেগি। ৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে পেন্ডুলামের মতো ঝুলতে থাকা এই ম্যাচের ভাগ্য ভারতের দিকে টেনে আনার চেষ্টা করেছিলেন পুনম। কিন্তু শেষ দুই ওভারে বাংলাদেশের ব্যাটারদের দৃঢ়তায় ভারতীয় মেয়েরা আর হালে পানি পায়নি।
শেষ ২ ওভারে ১৩ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। দীপ্তি শর্মার করা ১৯তম ওভারের মাত্র ৪ রান আসায় শেষ ওভারের সমীকরণটা দাঁড়ায় ৯ রানে। এ যেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচটার চিত্রনাট্য—৬ বলে দরকার ৯ রান!
শেষ ওভারটা করতে আসেন স্বয়ং ভারতের অধিনায়ক হারমনপ্রীত কাউর। তাঁর প্রথম বলে ১ রান নেন সানজিদা। দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি মেরে ম্যাচটা নিজেদের দিকে টেনে আনেন রুমানা। পরের বলে তিনি ১ রান নিলেও চতুর্থ বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন সানজিদা। সমীকরণটা নেমে আসে ২ বলে ৩ রানে। পঞ্চম বলে ১ রান নিলেও অনর্থক দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হন রুমানা (২৩)। জয়ের জন্য শেষ বলে দরকার ছিল ২ রান। হারমনপ্রীতের স্ট্যাম্প বরাবর ডেলিভারিটা মিড উইকেটে ঠেলে দিয়েই ২ রান নিয়ে নতুন ইতিহাস লেখেন জাহানারা-সালমা।
সেই ইতিহাসের পরতে পরতে এশিয়া কাপের ফাইনালে ছেলেদের হারে ব্যথা ভুলিয়ে দেওয়ার আনন্দকাব্য। সাকিবরা এর আগে দুবার এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে পারেননি। কিন্তু মেয়েরা প্রথমবার ফাইনালে উঠেই গড়ল শিরোপা জয়ের ইতিহাস।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার আয়েশা রহমান ও শামীমা সুলতানা। ৫ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ২৪ রান তুলে ফেলেছিলেন এই দুই ব্যাটার। কিন্তু সপ্তম ওভারে ভারতের লেগ স্পিনার পুনম যাদব শেষ দুই বলে তুলে নেন এই দুই ওপেনারকে। ওভার প্রতি ৫ রান করে প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৫০ রান তুলে ফেলে মেয়েরা। কিন্তু ১১তম ওভার থেকে রানের গতি কিছুটা কমতে থাকে। ১২তম ওভারে ফারাজানা (১১) ফিরে গেলে বেশ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।