তাঁর নাম কেন 'দুষ্টু ফিরমিনো'
>ফিরমিনো চুপচাপ থাকতে ভালোবাসেন। অথচ তাঁকে ‘দুষ্টু’ কেন বলছে ব্রাজিলিয়ানরা! সেটা ওয়েসলি সাফাদাওয়ের কারণে। ব্রাজিলের এই সংগীতশিল্পীর নামের অনুকরণে ফিরমিনোর নাম ফিরমিনো সাফাদাও...
চার বছর আগের কথা। তুরস্ক ও অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচের জন্য কার্লোস দুঙ্গা দলে ডাকেন তাঁকে। তবে রবার্তো ফিরমিনোকে তখন বিখ্যাত হলুদ
জার্সিতে স্বাগত জানাতে একদমই রাজি ছিল না ব্রাজিলের মানুষ।
সেই সময় ২২ বছর বয়সী ফিরমিনো খেলতেন জার্মানির মাঝারি মানের দল হফেনহেইমে। প্রতিভার কমতি না থাকলেও বুন্দেসলিগার দলটির হয়ে তখনো তাঁর পারফরম্যান্স সাদামাটাই। হন্যে হয়ে রোমারিও, রিভালদো, রোনালদোদের উত্তরসূরি খুঁজতে থাকা ব্রাজিলিয়ানরা অমন একজন স্ট্রাইকারকে আপন করে নেন কী করে! ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমে তখন একটাই প্রশ্ন ছিল-কী দেখে ফিরমিনোকে দলে নিলেন দুঙ্গা?
ফিরমিনো নিশ্চুপ থাকলেন। তুরস্কের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে হলুদ জার্সিতে অভিষেকও হয়ে গেল তাঁর। শেষ বাঁশির ১৭ মিনিট আগে মাঠে নেমেছিলেন লুইজ আদ্রিয়ানোর বদলি হিসেবে। ছয় দিন পর অস্ট্রিয়ার সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে নেইমারের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। পেয়ে যান ব্রাজিলের হয়ে প্রথম গোলও। দূরপাল্লার শটে করা তাঁর ওই গোলেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল (২-১)।
ফুটবল-পাগল ব্রাজিলের মানুষ বিজয়ীর গলায় মালা পরাতে ভালোবাসে। অস্ট্রিয়া ম্যাচের পর বন্ধ হয়ে যায় ফিরমিনোর সমালোচনা। ধীরে ধীরে তাঁকে ভালোবাসতে শুরু করেন ব্রাজিলের সমর্থকেরা। আদর করে ডাকনাম দেন, ফিরমিনো সাফাদাও। বাংলা অর্থ-দুষ্টু ফিরমিনো!
এই ফিরমিনো চুপচাপ থাকতে ভালোবাসেন। অথচ তাঁকে ‘দুষ্টু’ কেন বলছে ব্রাজিলিয়ানরা! সেটা ওয়েসলি সাফাদাওয়ের কারণে। ব্রাজিলের এই সংগীতশিল্পীর খুব ভক্ত ফিরমেনো। ২০১৬ সালে বলিভিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ওয়েসলি সাফাদাওকে নকল করে ‘পনি টেইল’ রেখে খেলতে নেমেছিলেন। সেই থেকেই ফিরমিনো ব্রাজিলিয়ানদের কাছে প্রিয় ‘দুষ্টু ফিরমিনো’।
অনেকেই মনে করেন ফিরমিনো ইংরেজিটা ভালো বলতে পারেন না বলে ইউরোপে এসে তাঁর একটা ‘মিডিয়াভীতি’ তৈরি হয়েছে। এ কারণেই কম কথা বলেন। বাবা বেল ফিরমিনোর কথা, ছোটবেলা থেকেই চুপচাপ স্বভাবের তাঁর ছেলে। বেড়ে উঠেছেন ব্রাজিলের অন্যতম দাঙ্গা আর মাদকপ্রবণ এলাকা মাসেইয়োর ত্রাপিচে বস্তিতে। আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না পরিবারের। বাবা সৈকতে নানা ধরনের জিনিস ফেরি করে বেড়াতেন, ছোট্ট ফিরমিনো তাঁকে সাহায্য করতেন। এর বাইরে সারাক্ষণই রাস্তায় বল নিয়ে পড়ে থাকতেন ফিরমিনো।
বাবার কাজে সাহায্য করলেও খুব একটা কথা বলতেন না ফিরমিনো। বাবা বেল ফিরমিনো সেই সময়ের কথা মনে করেন, ‘খদ্দরদের সঙ্গে যত কথা আমিই বলতাম। ও শুধু পাওনা ওঠাত আর লোকেদের পাওনা টাকা ফেরত দিত।’
অথচ সেই ফিরমিনো ছোট থেকেই খুব ফ্যাশন-সচেতন, এখনো তা-ই। বাবা বলেন, ‘আমরা যখন গরিব ছিলাম, সেই সময়ে ও নিজের অপছন্দের কোনো পোশাক পরত না।’ তবে ওয়েসলির মতো ‘পনি টেইল’ আর কখনো রাখেননি ফিরমিনো। কেন? খুব যত্ন নিতে হয়। ফুটবল নিয়ে ভাবার পর এত সময় কোথায়! ফিরমিনো বললেন, ‘আমি সাফাদাওকে পছন্দ করি। কিন্তু চুলের ওই স্টাইল আর করছি না। খুব বেশি যত্ন নিতে হয়!’ চুলের স্টাইল নিয়ে কাজ করবেন কী, এখন তো কথা বলাই আরও কমিয়ে দিয়েছেন। সামনে বিশ্বকাপ না! ফিরমিনোর স্ত্রী লারিসা বলেন, ‘ক্যামেরার বাইরে ও এতটা লাজুক নয়। কিন্তু এখন খুব কম কথাই বলছে। কারণ, ওর সব মনোযোগ এখন খেলায়। বিশেষ করে বিশ্বকাপে।’
ব্রাজিলিয়ানের ‘দুষ্টু’ আর লারিসার ‘লাজুক’ ফিরমিনো মাঠে কিন্তু মোটেই অমন নন। সেখানে পা দিয়ে অনেক কথা বলেন। লিভারপুলের জার্সিতে বিদায়ী মৌসুমে ৫৫ ম্যাচে ২৬ গোল তাঁর। করিয়েছেন ১৪টি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ব্রাজিলের ২-০ গোলের জয়েও একটি গোল তাঁর।
সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত ফিরমিনো, ‘আমি শতভাগ ফর্মে আছি। সব দিক থেকেই আমার এই মৌসুমটা অসাধারণ। চার বছর আগে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে আমি তরুণ ছিলাম। এখন আমি আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগ খেলি। দ্রুতই মানিয়ে নিয়েছি আর অনেক পরিণতও হয়েছি। বিশেষ করে মানসিক দিক থেকে।’ কিন্তু এরপরও বিশ্বকাপের শুরুর একাদশে জায়গা পেতে তাঁকে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। এই লড়াইটাকে কীভাবে দেখেন? ফিরমিনোর উত্তর, ‘আমাদের এই লড়াইয়ে ব্রাজিলেরই লাভ।’
পরশু লন্ডনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে পেয়ে একের পর এক প্রশ্ন করেছেন সাংবাদিকেরা। এরপরও সংবাদ সম্মেলনের দৈর্ঘ্য মোটে ১৪ মিনিট! ফিরমিনো বলে কথা! সব প্রশ্নের উত্তরই যে দিয়েছেন ঝটপট আর সোজাসাপ্টা।