রুপালি ফসলে সোনালি দিন
বাংলাদেশের রুপালি ফসল মাছ। বাঙালির অতি প্রিয় খাবার। এই উপমহাদেশে ৩৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে মাছের চাষ হয় বলে জানা যায়। ১৯৬৭ সালে কার্পজাতীয় মাছের কৃত্রিম প্রজনন শুরুর পর এ দেশে মৎস্য চাষ ও উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি পায়। একসময় কার্পজাতীয় মাছ চাষ করাই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু বর্তমানে পাঙাশ, তেলাপিয়া, থাই কই, পাবদা, গুলশা, শিং, মাগুরসহ হরেক রকমের মাছ চাষ হচ্ছে। প্রাকৃতিক উৎসের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।
মাছ চাষের পাশাপাশি আরেক সফলতার চাবিকাঠি হলো মাছ আহরণ। এ বছর প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হচ্ছে। ইলিশ (জাটকা) রক্ষায় বছরে প্রায় ৩৯ হাজার ৭৮৭ মেট্রিক টন খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭০৯টি পরিবারকে ৭ হাজার ৯১৪ দশমিক ১৮ মেট্রিক টন খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের ইলিশ ২০১৭ সালে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
বাংলাদেশ চিংড়ি রপ্তানি করে ২০১৬–১৭ অর্থবছরে আয় করে ৩ হাজার ৬৮২ দশমিক ২৬ কোটি টাকা। ২০১৫ সাল থেকে বিনা সার্টিফিকেটে বিশ্বে চিংড়ি ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি করতে পারে বাংলাদেশ, যা এশিয়া মহাদেশে বিরল দৃষ্টান্ত।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাছ চাষে ট্যাক্স হলিডে প্রবর্তন, মৎস্যখাদ্য কাঁচামালের শুল্ক মওকুফ, জেলেদের জন্য আইডি কার্ড চালু, জাটকা রক্ষায় জেলে পরিবারকে ৪০ কোটি করে খাদ্যসাহায্য প্রদান, মা ইলিশ রক্ষা অভিযান, মাছ আহরণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা, মাছের অভয়াশ্রম স্থাপনসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। চাষিদের শ্রম ও ঘাম এবং জেলেদের ত্যাগ স্বীকারের মধ্য দিয়েই এই সাফল্য এসেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার দেওয়া হিসাবমতে, স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। মাছ চাষে পঞ্চম এবং সামুদ্রিক মাছ উৎপাদনে আমরা ১১তম।
ড. সৈয়দ আরিফ আজাদ মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক