শরীরে প্যাঁচানো দড়ি, কোমরের ডান পাশে বাঁশের তৈরি ঝুড়ি। তার ভেতরে রেখেছেন বাটাল, হাঁসুয়া। বাঁ পাশে ঝুলছে মাটির হাঁড়ি। এসব নিয়েই আমজেদ আলী মণ্ডল তরতর করে বেয়ে উঠছেন খেজুরগাছে। কৌশলে খেজুরগাছে বাকল তুলে বেঁধে দেন হাঁড়ি। শীত মৌসুমজুড়েই এভাবে দেখা মেলে আমজেদ আলী মণ্ডলকে। খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের এই কাজ তিনি করছেন ৩৫ বছর ধরে।
৫৫ বছর বয়সী আমজেদ আলীর বাড়ি নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার উমরপুর গ্রামে। বাপ-দাদার হাত ধরেই এই পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন তিনি। নাটোর ও কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। সেই রস থেকে গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন। বর্তমানে কুষ্টিয়া শহরের বাইপাস এলাকায় অস্থায়ী বাস তাঁর। এ এলাকায় মেঠো পথের দুই ধারের ১৩০টি গাছ ইজারা নিয়েছেন তিনি। শীত মৌসুমের চার মাস এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও রস থেকে গুড় তৈরি করে বিক্রি করবেন। তবে রসও সকাল–সন্ধ্যায় বিক্রি হয়। প্রতিদিনই ভোর থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত বাইপাস এলাকা রস খেতে শহরের মানুষ সেখানে জড়ো হয়।
এক বিকেলে যখন তাঁর সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল, গাছি আমজেদ আলী মণ্ডল শোনালেন এসব গল্প। তিনি জানালেন, তাঁর সঙ্গে চান মিয়া নামে আরও একজন রয়েছেন। দুজন মিলে প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ১৩০টি গাছ কেটে হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেন। সারা রাত রস পড়তে থাকে। রাত তিনটা থেকে রস সংগ্রহ শুরু করেন। এভাবে চলতে থাকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত। এরপর সেখানে জড়ো হওয়া মানুষদের কাছে রস বিক্রি করেন। বেশির ভাগ রস গুড় তৈরির জন্য প্রস্তুত করেন। সকাল দশটা পর্যন্ত রস থেকে গুড় তৈরি করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
আমজেদ আলী বলেন, ‘বর্তমানে যে হারে খেজুরগাছ কমে যাচ্ছে, হয়তোবা একসময় এলাকা থেকে খেজুরগাছ হারিয়ে যাবে। তাই তালগাছের মতো বেশি করে খেজুরগাছ লাগানো দরকার।’
পুরো মৌসুমে চার মাস কাজ করেন। চার মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় করে বাড়ি ফেরেন। বছরের বাকি মাসগুলো আমবাগানে শ্রমিকের কাজ করেন। এক ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে।
জীবনকথা বলতে বলতেই উঠে পড়লেন আমজেদ আলী। গাছ কাটার অনুষঙ্গগুলো নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সেদিনের মতো।