সরকারের খাদ্য বিভাগ ২৬ এপ্রিল থেকে সরাসরি ধানচাষিদের কাছ থেকে চলতি মৌসুমের বোরো ধান সংগ্রহ করার তারিখ ঘোষণা করেছে। ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে মণপ্রতি ১ হাজার ৪০ টাকা। সাধারণত বোরো মৌসুমের ধান আগে পাকে হাওর অঞ্চলে। ফলে সে অঞ্চলেই আগে ধান কাটা শুরু হয়। এ বছরও তাই হয়েছে। সেখানে ধান কাটা শুরু হওয়ার পর সপ্তাহ দুয়েক পেরিয়ে গেছে। নিচু জমিগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশের ধান কাটা হয়েছে।
ধানচাষিরা ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে তা বিক্রি করার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। কারণ, তাঁদের অধিকাংশকেই ধান ফলানোর খরচ জোগাড় করতে হয় ঋণ নিয়ে এবং ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঋণ পরিশোধের তাগিদ সৃষ্টি হয়। কেননা দেরি হলে সুদ গুনতে হয়। তা ছাড়া সার, কীটনাশক ও অন্যান্য উপকরণের পেছনে বকেয়া পরিশোধের জন্যও পাওনাদারেরা চাষিদের ওপর চাপ দিতে শুরু করেন। অনেক ধানচাষির আর্থিক অবস্থা এমন যে ধান কাটার শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য নগদ টাকাও তাঁদের কাছে থাকে না। ধান বিক্রি করে তাঁদের মজুরি পরিশোধ করতে হয়। এই সবকিছুর ফলে ধানচাষিদের মধ্যে দ্রুত ধান বিক্রি করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়।
কিন্তু সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ২৬ এপ্রিল থেকে ধান কেনার কর্মসূচি শুরু হয়নি। অথচ ইতিমধ্যে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এখন বলা হচ্ছে হাওরাঞ্চলে সরকারের ধান কেনা শুরু হবে ১০ মে থেকে। কিন্তু ইতিমধ্যে বাজারে প্রচুর ধান উঠেছে এবং সরবরাহ বেশি হলে যা হয়, ধানচাষিরা ধানের দাম কম পাচ্ছেন। যে ধান সরকার মণপ্রতি ১ হাজার ৪০ টাকায় কিনছে, ফড়িয়া ও চালকলের মালিকদের কাছে চাষিরা তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এতে ধানচাষিদের লোকসান হচ্ছে। কারণ, প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচই হয় প্রায় ৮০০ টাকা।
ঘোষিত তারিখ থেকে খাদ্য অধিদপ্তর ধান কেনা শুরু করতে পারেনি কেন—এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে তাদের তরফে বলা হচ্ছে হাওরে ধান কাটা শেষ হয়নি। ধানচাষিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা সম্পূর্ণ হলে লটারির মাধ্যমে ধান কেনা হবে। প্রশ্ন হলো, তালিকা সংগ্রহের কাজ দেরিতে শুরু করা হলো কেন? আসলে এটি একটি গোলমেলে প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় নানা রকমের কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। কারসাজিগুলোর আংশিক সুফল ভোগ করেন ফড়িয়া আর চালকলের মালিকেরা। প্রকৃতপক্ষে ধানচাষিদের একটা বড় অংশই সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে ব্যর্থ হন। তাঁদের ধান কম দামে কিনে নিয়ে সরকারের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। এ ক্ষেত্রে কাগজে-কলমে দুর্নীতি চলে; ধানচাষিদের তালিকায় নাম ওঠে মধ্যস্বত্বভোগীদের, লটারিতেও নির্বাচিত হন তাঁরা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশ, খাদ্যসচিব বলেছেন, ধানচাষি নন, কিংবা বোরো ধান ফলাননি, এমন কোনো ব্যক্তি যাতে সরকারি গুদামে বোরো ধান বিক্রি করতে না পারেন এবং লটারিতে ঢুকতে না পারেন, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করব, তাঁর এ বক্তব্য বাস্তবেই সত্য বলে প্রমাণিত হবে। এখন জরুরি প্রয়োজন অবিলম্বে ধান কেনা শুরু করা এবং সরাসরি ধানচাষিদের কাছ থেকেই তা কেনা হবে, এটা শতভাগ নিশ্চিত করা।