চাইলেই এ দুর্যোগ ঠেকানো যায়

‘আজি হতে শতবর্ষ আগে’ টি এস এলিয়ট ‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড’ কবিতায় এপ্রিলকে ‘নিষ্ঠুরতম মাস’ বলেছিলেন। এলিয়টের কথা মিথ্যা নয়। এই মাসে প্রকৃতি তার নিষ্ঠুর রূপ দেখায়। কিন্তু এবারের এপ্রিলের রুদ্ররূপ কয়েক শতাব্দীর সব এপ্রিলের চেয়ে ভয়ানক হয়ে এসেছে। করোনাভাইরাসে বিশ্ব যখন এই মাসে দিশেহারা, তখন বাংলাদেশকে মহামারির সঙ্গে ব্যাপক বজ্রপাতে বহু প্রাণ কেড়ে নেওয়ার দৃশ্য দেখাল ‘দ্য ক্রুয়েলেস্ট মান্থ’।

 বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের প্রতিবেদন বলছে, ৪ থেকে ২৪ এপ্রিল—এই ২০ দিনে বজ্রপাতে দেশে কমপক্ষে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা যেতে পারে, রেকর্ডকৃত এই সংখ্যার বাইরে আরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মাসটির বাকি ১০ দিনে বজ্রপাতে আরও প্রাণহানি ঘটার কথা।

লক্ষণীয়, এপ্রিলে যে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৪৭ জনই পুরুষ। তাঁরা বজ্রপাতের সময় কৃষিজমিতে কাজ করছিলেন বা মাছ ধরছিলেন। উদ্বেগের বিষয় হলো, গত এক দশকে দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে ২ হাজার ৮১ জন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দেয়। বজ্রপাত প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে তালগাছের চারা লাগানো হয়েছে। কিন্তু এ ব্যবস্থা সময়সাপেক্ষ।

বাস্তবতা হলো, কৃষককে ধান কাটতে মাঠে যেতেই হবে। বজ্রপাতের ভয়ে তাঁর পক্ষে ঘরে বসে থাকা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সব ধরনের বিকল্প ব্যবস্থার কথা মাথায় নেওয়া দরকার। অনেকে বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে মুঠোফোনের টাওয়ারে লাইটেনিং এরস্টোর লাগিয়ে ঝুঁকি কমানো যায়। এ ছাড়া হাওর ও বাঁওড় এলাকার ফসলের মাঠে নির্দিষ্ট দূরত্বের পরপর এই যন্ত্র বসালে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুহার অনেক কমে আসবে।

এ ক্ষেত্রে সরকার উন্নততর প্রযুক্তি সহায়তা গ্রহণ করার কথাও বিবেচনা করতে পারে। যেমন প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এ–সংক্রান্ত প্রযুক্তি সহায়তা নিতে একটি মার্কিন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে অনেক আগেই। কোথায় কখন বজ্রপাত হতে পারে, ওই প্রযুক্তির সাহায্যে তা ৪০ মিনিট আগেই বলে দেওয়া যায়। মুঠোফোনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের কাছে দ্রুত ওই বার্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে।

তালগাছ রোপণের মতো দীর্ঘমেয়াদি ও সময়সাপেক্ষ পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এ ধরনের প্রযুক্তি সহায়তা নেওয়ার বিষয় বিবেচনায় আনা দরকার।